১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
উত্তর ইংল্যান্ডে তীব্র শীতের সতর্কতা, জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি কলকাতার রাস্তায় মানবতার জয়, নেশাগ্রস্ত যাত্রীকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিলেন ক্যাব চালক আবেগের বিস্ফোরণ, গল্পের তাল কেটে গেল: স্ট্রেঞ্জার থিংস এর নতুন পর্বে উত্তেজনা আর বিশৃঙ্খলার সহাবস্থান শীতে কাঁপছে গাজা, বৃষ্টিতে ডুবে উদ্বাস্তুদের তাবু ২০২৫ সালের বন্যপ্রাণীর বিস্ময়কর মুহূর্ত: প্রকৃতির সৌন্দর্য, সংগ্রাম আর টিকে থাকার গল্প কার্বন বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে, ২০২৫ শেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮২) স্ট্যাগফ্লেশনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বদলে যাচ্ছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি মানচিত্র শহরে বাড়ছে বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি, ২০২৫ সালের বাস্তবতা

বিলুপ্ত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের সেবা চলমান থাকবে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর জানিয়েছেন, বিলুপ্ত ঘোষিত পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ব্যাংকগুলোর একীভূত প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।


 ব্যাংকগুলোর সেবা বন্ধ হবে না

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর নিশ্চিত করেছেন যে বিলুপ্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের নিয়মিত সেবা স্বাভাবিকভাবেই চালু থাকবে। তিনি বলেন, এসব ব্যাংকের অর্থ লেনদেন, প্রবাসী আয় প্রেরণ (রেমিট্যান্স) এবং এলসি (Letter of Credit) কার্যক্রমসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত থাকবে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন।


 দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক

গভর্নর বলেন, “যদিও এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে, তবুও তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে। পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি: সব কিছু আগের মতোই চলবে।”

তিনি আরও জানান, “আমাদের লক্ষ্য হলো বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে বাধাহীন রাখা এবং ধীরে ধীরে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবস্থা একীভূত করা।”


বিলুপ্ত পাঁচ ব্যাংকের নাম

বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে তাদের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ব্যাংক হলো—
১। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
২। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
৩। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
৪। এক্সিম ব্যাংক পিএলসি
৫। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল)

 প্রশাসক নিয়োগ

পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করেছে, যারা ব্যাংকগুলোর তাত্ক্ষণিক কার্যক্রম দেখভাল করবেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা হলেন—

  • এমডি সালাহ উদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • মোহাম্মদ আবুল হাশেম, পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রশাসক
  • মোহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • এমডি মকসুদুজ্জামান, পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • এমডি শওকতুল আলম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক

এ ছাড়া, আরও চারজন কর্মকর্তা প্রশাসকদের সহায়তার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন, যারা দৈনন্দিন কাজ ও সম্পদ একীভূতকরণে সহায়তা করবেন।


 আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ

গভর্নর ড. মানসুর বলেন, প্রায় পঁচাত্তর লাখ আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় এবং ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত একীভূতকরণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংক মিলিয়ে তাদের প্রায় সাতশো পঞ্চাশটি শাখা রয়েছে।


নতুন একীভূত ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংক গঠন করবে, যার প্রস্তাবিত নাম ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।

নতুন এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের যেকোনো বিদ্যমান ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

গভর্নর বলেন, “যদিও এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হবে, তবে এটি পেশাদার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো এবং পৃথক শরিয়াহ বোর্ডসহ একটি বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পরিচালিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”


 শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ থাকবে না

ড. মানসুর আরও জানান, বর্তমানে এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি মূল্য “নেতিবাচক”। ফলে তাদের শেয়ারের মূল্য শূন্য ধরা হবে এবং কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা সম্পূর্ণ অর্থ তুলতে পারবেন। এর বেশি পরিমাণের আমানতকারীরা ধাপে ধাপে টাকা তুলতে পারবেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত শীঘ্রই গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

তিনি সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ তোলার আহ্বান জানান।


সরকার পরিবর্তন হলেও সিদ্ধান্ত বহাল

সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, “এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও জনগণের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।”

সারসংক্ষেপে বলা যায়, বিলুপ্ত ঘোষিত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের সেবা চলমান থাকবে, আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

উত্তর ইংল্যান্ডে তীব্র শীতের সতর্কতা, জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিলুপ্ত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের সেবা চলমান থাকবে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর

০৯:০৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর জানিয়েছেন, বিলুপ্ত ঘোষিত পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ব্যাংকগুলোর একীভূত প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।


 ব্যাংকগুলোর সেবা বন্ধ হবে না

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর নিশ্চিত করেছেন যে বিলুপ্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের নিয়মিত সেবা স্বাভাবিকভাবেই চালু থাকবে। তিনি বলেন, এসব ব্যাংকের অর্থ লেনদেন, প্রবাসী আয় প্রেরণ (রেমিট্যান্স) এবং এলসি (Letter of Credit) কার্যক্রমসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত থাকবে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন।


 দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক

গভর্নর বলেন, “যদিও এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে, তবুও তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে। পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি: সব কিছু আগের মতোই চলবে।”

তিনি আরও জানান, “আমাদের লক্ষ্য হলো বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে বাধাহীন রাখা এবং ধীরে ধীরে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবস্থা একীভূত করা।”


বিলুপ্ত পাঁচ ব্যাংকের নাম

বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে তাদের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ব্যাংক হলো—
১। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
২। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
৩। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
৪। এক্সিম ব্যাংক পিএলসি
৫। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল)

 প্রশাসক নিয়োগ

পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করেছে, যারা ব্যাংকগুলোর তাত্ক্ষণিক কার্যক্রম দেখভাল করবেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা হলেন—

  • এমডি সালাহ উদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • মোহাম্মদ আবুল হাশেম, পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রশাসক
  • মোহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • এমডি মকসুদুজ্জামান, পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক
  • এমডি শওকতুল আলম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক – এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক

এ ছাড়া, আরও চারজন কর্মকর্তা প্রশাসকদের সহায়তার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন, যারা দৈনন্দিন কাজ ও সম্পদ একীভূতকরণে সহায়তা করবেন।


 আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ

গভর্নর ড. মানসুর বলেন, প্রায় পঁচাত্তর লাখ আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় এবং ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত একীভূতকরণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংক মিলিয়ে তাদের প্রায় সাতশো পঞ্চাশটি শাখা রয়েছে।


নতুন একীভূত ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংক গঠন করবে, যার প্রস্তাবিত নাম ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।

নতুন এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের যেকোনো বিদ্যমান ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

গভর্নর বলেন, “যদিও এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হবে, তবে এটি পেশাদার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো এবং পৃথক শরিয়াহ বোর্ডসহ একটি বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পরিচালিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”


 শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ থাকবে না

ড. মানসুর আরও জানান, বর্তমানে এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি মূল্য “নেতিবাচক”। ফলে তাদের শেয়ারের মূল্য শূন্য ধরা হবে এবং কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা সম্পূর্ণ অর্থ তুলতে পারবেন। এর বেশি পরিমাণের আমানতকারীরা ধাপে ধাপে টাকা তুলতে পারবেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত শীঘ্রই গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

তিনি সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ তোলার আহ্বান জানান।


সরকার পরিবর্তন হলেও সিদ্ধান্ত বহাল

সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, “এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও জনগণের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।”

সারসংক্ষেপে বলা যায়, বিলুপ্ত ঘোষিত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের সেবা চলমান থাকবে, আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।