স্ট্রেঞ্জার থিংসের সর্বশেষ পর্বগুলো শুরুতেই দর্শককে টেনে নেয় বড় বাজি আর আরও বড় আবেগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু পর্ব যত এগোয়, ততই স্পষ্ট হয়—আবেগ আছে, তীব্রতা আছে, অথচ গল্পের প্রবাহ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। কোথাও স্মৃতিমেদুর মুহূর্তে সিরিজের পুরোনো হৃদস্পন্দন ফিরে আসে, আবার কোথাও অতিরিক্ত নাটকীয়তা আর অসম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত সেই ছন্দ ভেঙে দেয়।
স্টিভ আর ডাস্টিনের মুখোমুখি আবেগ
নতুন পর্বগুলোর সবচেয়ে সাহসী মুহূর্ত আসে স্টিভ আর ডাস্টিনের কথোপকথনে। ক্লান্ত স্টিভ যখন ডাস্টিনকে আর নায়ক সাজার চেষ্টা না করতে বলে, তখনই উঠে আসে এডি নামের সেই প্রিয় চরিত্রের ক্ষত। তার আত্মত্যাগ ছিল দৃশ্যত জাঁকজমকপূর্ণ, সংগীত আর আবহে স্মরণীয়, কিন্তু গল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই প্রশ্ন তোলাটাই যেন নির্মাতাদের আত্মসমালোচনার ইঙ্গিত। ডাস্টিনের স্বীকারোক্তি, এক ভাই হারানোর যন্ত্রণা আর আরেকজনকে হারানোর ভয়—এই দৃশ্যগুলো নীরব সংযমে অভিনীত, যা সিরিজের পুরোনো শক্তিকে মনে করিয়ে দেয়।
গল্পের বিশৃঙ্খলা আর থমকে যাওয়া গতি
উইল এক ঝটকায় তিনটি ডেমোগর্গনকে পরাস্ত করার পরও ভয় থামে না। ভেকনা রয়ে যায় অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকের মতো, অপহৃত শিশুদের অজানা পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। অন্যদিকে আপসাইড ডাউনে আটকে পড়া ডাস্টিন, স্টিভ, ন্যান্সি আর জোনাথনের অংশে অবশেষে সেই জগতের ব্যাখ্যা কিছুটা পরিষ্কার হয়। কিন্তু এই টানটান পরিস্থিতির মাঝেই ন্যান্সি আর জোনাথনের সম্পর্কের অমীমাংসিত টানাপোড়েন গল্পের গতি নষ্ট করে দেয়। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সম্পর্ক নিয়ে এমন দ্বিধা দর্শকের ধৈর্য পরীক্ষা নেয়।

এলেভেনের ম্লান উপস্থিতি
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়, এলেভেনের উপস্থিতি। একসময় যার গল্প ছিল সবচেয়ে হৃদয়বিদারক, এবার সে যেন প্রান্তিক। পুরোনো সংলাপের পুনরাবৃত্তি আর শক্তিহীন কথোপকথনে তার আগের রহস্যময় আকর্ষণ হারিয়ে যায়। বন্ধুদের প্রথম দিনের স্মৃতি টেনে আনা একটি সংলাপ সামান্য উষ্ণতা ফেরালেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
ম্যাক্সের দৃশ্যেই প্রাণ ফিরে আসে
এই ক্লান্তির মাঝেও ম্যাক্সই সিরিজের প্রাণ। হলির সঙ্গে তার সম্পর্ক আর লুকাসের সঙ্গে পুনর্মিলন মধুর বেদনায় ভরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই মুহূর্তগুলো স্বাভাবিক, আন্তরিক। অন্ধকার থেকে বাঁচিয়ে রাখা সেই গান নিয়ে হালকা হাসি দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। এখানেই সিরিজ আবার মনে করিয়ে দেয়, কেন একসময় এই গল্প এত প্রিয় ছিল।
শেষ কথা
স্ট্রেঞ্জার থিংসের এই পর্বগুলোতে আবেগ ঠিকই আঘাত হানে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে গল্প যেন ভারী আর টানটান হয়ে উঠেছে। বন্ধুত্ব, শোক আর ক্ষতির ভাষা সিরিজ এখনও বোঝে, তবে কতবার আর কতভাবে তা প্রমাণ করতে চায়—সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি এখনও ঝুলে আছে, আর দর্শক অপেক্ষায় থাকে, এই যাত্রার শেষ সুর ঠিক কবে বাজবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















