পাঞ্জাব সফরে নিজেকে পরিকল্পিতভাবে অপমান ও আতঙ্কিত করার অভিযোগ তুলে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ-এর কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি। তিন দিনের লাহোর সফর নিয়ে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি বলেন, সফর জুড়ে শিষ্টাচার হীনতা, অপ্রয়োজনীয় শত্রুভাবাপন্ন আচরণ এবং প্রটোকলের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে, যা আন্ত প্রাদেশিক সম্মান ও সাংবিধানিক মর্যাদার পরিপন্থী।
চিঠিতে কী লিখলেন কেপি মুখ্যমন্ত্রী
চিঠিতে সোহাইল আফ্রিদি জানান, লাহোরে তার উপস্থিতিকে ঘিরে যে ঘটনাপ্রবাহ ঘটেছে তা কোনোভাবেই প্রশাসনিক ভুল বা কাকতালীয় নয়। বরং ধারাবাহিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এমন একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, যা সহযোগিতার বদলে ভয় দেখানোর শামিল। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ব্যাপক ধরপাকড়ের দৃশ্যমান তৎপরতা এবং জনজীবন অচল করে দেওয়া—সব মিলিয়ে এটি ছিল অযৌক্তিক ও অসমঞ্জস, বলে অভিযোগ তার।
জনজীবন অচল ও ব্ল্যাকআউটের অভিযোগ
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, খাদ্য পথ ও বাজারসহ জনসমাগমস্থল বন্ধ করে দেওয়া হয়, আলো নিভিয়ে ব্ল্যাক আউট করা হয় এবং সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। এমনকি মোটরওয়ে বিশ্রাম কেন্দ্রেও সংবিধান স্বীকৃত অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। এসব পদক্ষেপ নিরাপত্তার নামে অতিরিক্ত ও অনুচিত ছিল বলে দাবি তার।

সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা রটনার প্রসঙ্গ
সফরের পরপরই সমন্বিতভাবে সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা ছড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কেপি মুখ্যমন্ত্রী। তার ভাষ্য, মাদক সংশ্লিষ্টতার মতো গুরুতর ইঙ্গিত জনপরিসরে ছড়ানো হয় এবং সেগুলো এমন সব অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ায়, যেগুলো পাঞ্জাব সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, প্রমাণ ও আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া এ ধরনের ইঙ্গিত চরিত্রহননের নামান্তর এবং এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ফেডারেল সম্প্রীতির জন্য হুমকি
সোহাইল আফ্রিদির মতে, প্রটোকল ভাঙন, অতিরিক্ত পুলিশি প্রদর্শন ও সমন্বিত ডিজিটাল অপপ্রচার একত্রে এমন একটি ধারাবাহিকতা তৈরি করেছে, যা পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়। তিনি সতর্ক করেন, এ ধরনের আচরণ ফেডারেল সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করে, প্রাদেশিক প্রতিষ্ঠানের ওপর জনআস্থা নষ্ট করে এবং সাংবিধানিক দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত নির্ভর আক্রমণের বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
মন্ত্রিসভায় নিন্দা ও কেন্দ্রের তহবিল প্রসঙ্গ
আলাদা করে কেপি মন্ত্রিসভা বৈঠকেও পাঞ্জাব সরকারের আচরণকে অগণতান্ত্রিক ও নিন্দনীয় আখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় এ ধরনের মনোভাব বিভাজন বাড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই বৈঠকে কেন্দ্রের কাছ থেকে একীভূত জেলাগুলোর উন্নয়ন কর্মসূচির বকেয়া অর্থ ছাড় না পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন, যার ফলে কাজ স্থবির হয়ে আছে বলে জানান।
লাহোর সফরের পটভূমি
পিটিআই এর কর্মসূচি উদ্বোধনে লাহোরে গিয়ে প্রাদেশিক পরিষদে প্রবেশের সময় উত্তেজনা ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। খাদ্যপথে রাতের খাবারের সময় আলো নিভিয়ে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও আলোচনায় আসে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পাঞ্জাব সরকারকে আন্তঃপ্রাদেশিক সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং পাল্টা হিসেবে কেপিতে সফরের আমন্ত্রণ দিয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির উদাহরণ দেখানোর কথা বলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















