০৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
কয়লা খনি নিয়ে বিভক্ত নাহদলাতুল উলামা: ধর্মীয় সংগঠনে রাজনীতি ও ব্যবসার টানাপোড়েন শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি খালেদা জিয়ার মৃত্যু: রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা মুন্সিগঞ্জে ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ড; দ্রুত নিয়ন্ত্রণে বড় ক্ষতি এড়ানো গেল এক চিলতে আগুনেই সর্বনাশ, খুলনার বাজারগুলোয় অগ্নিঝুঁকির নীরব আতঙ্ক খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা: জামায়াত নেতা তাহের ইসরায়েলের পদক্ষেপের পর তুরস্কে সোমালি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক বৈঠক সুইস কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন এক এনআইডিতে পাঁচ সিম সীমা গুজব: টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ

পরিবারের ভিতরে গুপ্তচরবৃত্তি, কারাগারে মৃত্যু: আসাদের সিরিয়ার গোপন নথিতে ভয়ংকর বাস্তবতা

দামেস্কের দরিদ্র একটি মহল্লায় মাঝারি মতের ধর্মীয় নেতা আবদু খারুফকে হঠাৎ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল গোয়েন্দারা। পরিবার তখনও জানত না, সেই ডাকার আড়ালেই লুকিয়ে আছে মৃত্যু। দুই পরিবারের বিরোধ মেটানোর অজুহাতে জুলাই দুই হাজার কুড়িতে তাঁকে একটি স্থানে ডেকে ট্রাকে তুলে নেওয়া হয়। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত কড়া নিরাপত্তা ঘেরা একটি কমপ্লেক্সের নিচের কারাগারে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। লাশও আর ফেরত পায়নি পরিবার।

গোপন নথিতে উন্মোচিত বিশ্বাসঘাতকতা

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে যে প্রশ্ন পরিবারকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল, তার উত্তর মিলেছে সদ্য পাওয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নথিতে। আসাদ সরকারের পতনের পর দামেস্কের একটি কারাগার কমপ্লেক্স থেকে উদ্ধার হওয়া হাজারো গোয়েন্দা নথির মধ্যে ছিল আবদু খারুফের ফাইল। সেই নথিতে দেখা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছিল তাঁরই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়। পরিবার ও বন্ধুদের ভিতরে ছিল নজরদারির জাল। সন্দেহের বীজ বপন করে মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।

ভয়ের শাসনে সমাজের ভাঙন

নথিগুলো বলছে, কেবল রাজনৈতিক বিরোধী নয়, ধর্মীয় নেতা, প্রতিবেশী এমনকি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো হতো। কোথাও স্ত্রীর গোপন রেকর্ড, কোথাও আত্মীয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার। এই ভয়ের সংস্কৃতি সিরিয়ার সমাজকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। বিশ্বাসের জায়গায় জন্ম নিয়েছিল সন্দেহ, নীরবতার আড়ালে জমে উঠেছিল আতঙ্ক।

পতনের পর সত্যের মুখোমুখি

দুই হাজার চব্বিশ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে বাশার আল আসাদের পতনের পর এসব নথি সামনে আসে। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর এক বছরের অনুসন্ধানে এই দলিলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। এতে প্রকাশ পায়, নির্যাতন ও গুমের পেছনে কিভাবে সংগঠিত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করত।

স্মৃতি আর ন্যায়বিচারের লড়াই

আবদু খারুফের পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনের শেষ পরিণতির খোঁজে। নথিগুলো তাদের প্রশ্নের কিছু উত্তর দিলেও বিচার এখনো অধরা। তবু এই দলিল সিরিয়ার ইতিহাসে এক নির্মম সাক্ষ্য, যেখানে ভয়ের রাজনীতি পরিবারকেও নিরাপদ রাখেনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

কয়লা খনি নিয়ে বিভক্ত নাহদলাতুল উলামা: ধর্মীয় সংগঠনে রাজনীতি ও ব্যবসার টানাপোড়েন

পরিবারের ভিতরে গুপ্তচরবৃত্তি, কারাগারে মৃত্যু: আসাদের সিরিয়ার গোপন নথিতে ভয়ংকর বাস্তবতা

০১:৩৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

দামেস্কের দরিদ্র একটি মহল্লায় মাঝারি মতের ধর্মীয় নেতা আবদু খারুফকে হঠাৎ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল গোয়েন্দারা। পরিবার তখনও জানত না, সেই ডাকার আড়ালেই লুকিয়ে আছে মৃত্যু। দুই পরিবারের বিরোধ মেটানোর অজুহাতে জুলাই দুই হাজার কুড়িতে তাঁকে একটি স্থানে ডেকে ট্রাকে তুলে নেওয়া হয়। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত কড়া নিরাপত্তা ঘেরা একটি কমপ্লেক্সের নিচের কারাগারে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। লাশও আর ফেরত পায়নি পরিবার।

গোপন নথিতে উন্মোচিত বিশ্বাসঘাতকতা

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে যে প্রশ্ন পরিবারকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল, তার উত্তর মিলেছে সদ্য পাওয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নথিতে। আসাদ সরকারের পতনের পর দামেস্কের একটি কারাগার কমপ্লেক্স থেকে উদ্ধার হওয়া হাজারো গোয়েন্দা নথির মধ্যে ছিল আবদু খারুফের ফাইল। সেই নথিতে দেখা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছিল তাঁরই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়। পরিবার ও বন্ধুদের ভিতরে ছিল নজরদারির জাল। সন্দেহের বীজ বপন করে মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।

ভয়ের শাসনে সমাজের ভাঙন

নথিগুলো বলছে, কেবল রাজনৈতিক বিরোধী নয়, ধর্মীয় নেতা, প্রতিবেশী এমনকি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো হতো। কোথাও স্ত্রীর গোপন রেকর্ড, কোথাও আত্মীয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার। এই ভয়ের সংস্কৃতি সিরিয়ার সমাজকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। বিশ্বাসের জায়গায় জন্ম নিয়েছিল সন্দেহ, নীরবতার আড়ালে জমে উঠেছিল আতঙ্ক।

পতনের পর সত্যের মুখোমুখি

দুই হাজার চব্বিশ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে বাশার আল আসাদের পতনের পর এসব নথি সামনে আসে। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর এক বছরের অনুসন্ধানে এই দলিলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। এতে প্রকাশ পায়, নির্যাতন ও গুমের পেছনে কিভাবে সংগঠিত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করত।

স্মৃতি আর ন্যায়বিচারের লড়াই

আবদু খারুফের পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনের শেষ পরিণতির খোঁজে। নথিগুলো তাদের প্রশ্নের কিছু উত্তর দিলেও বিচার এখনো অধরা। তবু এই দলিল সিরিয়ার ইতিহাসে এক নির্মম সাক্ষ্য, যেখানে ভয়ের রাজনীতি পরিবারকেও নিরাপদ রাখেনি।