ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ইসলামি সংগঠন নাহদলাতুল উলামার ভেতরে গভীর বিভাজন তৈরি করেছে কয়লা খনি ইজারা। সরকারের দেওয়া একটি খনি ছাড়পত্র ঘিরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য, যা সংগঠনটির ঐতিহ্য, ঐক্য এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
খনি ইজারা এবং শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব
ইন্দোনেশিয়া সরকার ২০২৪ সালে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর হাতে খনি পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় নাহদলাতুল উলামাকে পূর্ব কালিমানতানে প্রায় ছাব্বিশ হাজার হেক্টর এলাকায় কয়লা খনি ইজারা দেওয়া হয়। খনিটির কার্যক্রম এখনো শুরু না হলেও, এর নিয়ন্ত্রণ ও সম্ভাব্য লাভ ঘিরে সংগঠনের ভেতরে টানাপোড়েন তীব্র আকার নেয়। তৃণমূল পর্যায়ের বহু সদস্য মনে করছেন, এই ইজারাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মূল কারণ।

নেতৃত্বের ভাঙন ও তৃণমূলের ক্ষোভ
সংগঠনের ভেতরে দুই শীর্ষ গোষ্ঠীর সংঘাত ক্রমেই গভীর হয়েছে। একদিকে নেতৃত্বের একটি অংশ খনি প্রকল্প ধরে রাখার পক্ষে, অন্যদিকে বড় একটি অংশ মনে করছে এই দায়িত্ব সংগঠনের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের অনেক সদস্য প্রকাশ্যে দাবি তুলেছেন, খনি ইজারা সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসতে হবে। তাদের আশঙ্কা, প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব সংগঠনের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করছে।
রাজনীতি, ব্যবসা ও ধর্মের জটিল সম্পর্ক
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট শুধু অভ্যন্তরীণ মতভেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ। ইন্দোনেশিয়ায় নাহদলাতুল উলামার সদস্য সংখ্যা বিপুল, ফলে রাজনৈতিক মহলে সংগঠনটির গুরুত্ব অপরিসীম। অনেকের ধারণা, এই খনি নীতির পেছনে রাজনৈতিক হিসাবও কাজ করেছে। তবে সমালোচকদের মতে, খনি পরিচালনার মতো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে।

ঐক্যের আহ্বান ও ভবিষ্যতের শঙ্কা
সম্প্রতি সংগঠনের এক বড় সমাবেশে নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, যোগ্যতা ছাড়া বড় দায়িত্ব নিলে বিপর্যয় অনিবার্য। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন, খনি প্রকল্পের বদলে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে মনোযোগ দেওয়া হোক। আবার অনেকে মনে করেন, খনি ফেরত দিলে তা আবার দায়িত্বহীন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এই মতবিরোধের মাঝেই সংগঠনের সর্বোচ্চ পরিষদ পুনর্মিলনের ইঙ্গিত দিয়েছে, যদিও তা কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকদের সতর্কতা, যদি এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে নাহদলাতুল উলামার বৈধতা ও নেতৃত্বের ওপর আস্থা নষ্ট হতে পারে। এতে করে সদস্যদের একটি অংশ অন্য, আরও কট্টর ধারার ধর্মীয় গোষ্ঠীর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, যা সংগঠনটির ঐতিহাসিক মধ্যপন্থী ভূমিকার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















