নভেম্বরে ভারতের শিল্প উৎপাদনে জোরালো ঘুরে দাঁড়ানোর ছবি ধরা পড়েছে সরকারি পরিসংখ্যানে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ওঠা নামার পর এক মাসেই দৃশ্যপট বদলে দিয়ে শিল্প উৎপাদন সূচকে প্রবৃদ্ধি পৌঁছেছে ছয় দশমিক সাত শতাংশে। দুই বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এক মাস আগের অক্টোবরে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ, সেখানে নভেম্বরে এই লাফ ভারতের শিল্প খাতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
উৎপাদন খাতে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শিল্প উৎপাদন সূচকের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে থাকা উৎপাদন খাত নভেম্বরে আট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মাসে এই হার ছিল মাত্র দুই শতাংশ। মৌলিক ধাতু, ওষুধ শিল্প ও মোটরযান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এই উত্থানের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। উৎপাদন খাতের এই গতি সামগ্রিক শিল্প কার্যক্রমকে সামনে টেনে এনেছে।

খনিজ উত্তোলনে গতি, বিদ্যুতে ধীরতা
বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর খনিজ উত্তোলন খাতেও গতি ফিরেছে। নভেম্বরে খনিজ উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ, যেখানে আগের দুই মাসে এই খাত সংকোচনের মধ্যে ছিল। ধাতব খনিজ উৎপাদন বাড়ায় এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত এখনও চাপের মধ্যেই রয়েছে। নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ। যদিও এই পতন অক্টোবরে দেখা প্রায় সাত শতাংশ সংকোচনের তুলনায় অনেকটাই কম।
ব্যবহার ভিত্তিক পণ্যে বিস্তৃত প্রবৃদ্ধি
পণ্যের ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণিতে প্রবৃদ্ধি ছিল বিস্তৃত। পরিকাঠামো ও নির্মাণ সামগ্রীতে বৃদ্ধি হয়েছে বারো দশমিক এক শতাংশ। মূলধনী পণ্যে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে দশ দশমিক চার শতাংশে। মধ্যবর্তী পণ্যে বৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক তিন শতাংশ। ভোক্তা পণ্যের ক্ষেত্রেও উন্নতির ইঙ্গিত মিলেছে। দীর্ঘস্থায়ী ভোক্তা পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশ দশমিক তিন শতাংশ এবং স্বল্পস্থায়ী ভোক্তা পণ্যে বৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক তিন শতাংশ। আগের মাসে এই দুই খাতেই সংকোচন দেখা গিয়েছিল।

পুরো অর্থবছরের চিত্র এখনও অসম
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর সময়ে সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক তিন শতাংশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল চার দশমিক এক শতাংশ। অর্থাৎ নভেম্বরে শক্তিশালী উত্থান সত্ত্বেও সামগ্রিক শিল্প গতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে ওঠেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী ব্যয়ে ধারাবাহিক বৃদ্ধি শিল্পখাতের জন্য ইতিবাচক সংকেত। বড় মূলধনী পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর অর্ডার বই শক্তিশালী থাকায় ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের চিত্রও আশাব্যঞ্জক। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা সহ বৈশ্বিক প্রতিকূলতা সামনে দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকতে পারে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















