বুধবার ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শোকের ঢেউয়ে ভেসে শেষ বিদায় জানাতে সেখানে জড়ো হন কয়েক লাখ মানুষ।
বিকেল ৩টা ২ মিনিটে জাতীয় মসজিদের খতিব ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক জানাজার নামাজে ইমামতি করেন।
খালেদা জিয়ার কফিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছালে মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় ঢাকা। শোকাহত মানুষের কান্না আর প্রার্থনায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, বিএনপির শীর্ষ নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা অংশ নেন।

ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিসহ বিদেশি কূটনীতিকরাও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর প্রায় ২টা ৪৫ মিনিটে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অস্থায়ীভাবে তৈরি মঞ্চে খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হয়।
এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনপাঠ পাঠ করেন। তিনি রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে তাঁর অবিচলতা ও গভীর দেশপ্রেমের কথা স্মরণ করেন। তিনি দেশবাসীকে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করার আহ্বান জানান।
বিকেল ২টা ৫৮ মিনিটের দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, জীবনের কোনো সময়ে জেনে বা না জেনে তাঁর মা যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তবে সবাই যেন তাঁকে ক্ষমা করে দেন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার কাছে কারও কোনো পাওনা থাকলে তাঁকে জানালে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খামারবাড়ি, বিজয় সরণি, আসাদ গেট, কারওয়ান বাজার ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হন।

সকাল ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের গুলশানের বাসা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনা হয়।
শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো সময়জুড়ে দায়িত্ব পালন করেন।
জানাজা শেষে খালেদা জিয়াকে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে। তাঁর কবরের পাশেই আগে থেকে সমাধিস্থলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ রাজধানীতে আসতে শুরু করেন জানাজায় অংশ নিতে। রাতভর জাতীয় সংসদ এলাকা, এভারকেয়ার হাসপাতাল, গুলশানের কার্যালয় ও ফিরোজা এলাকাতেও মানুষের ভিড় দেখা যায়।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
Sarakhon Report 


















