কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরক উত্থান শুধু প্রযুক্তির দুনিয়াকেই নয়, সম্পদের মানচিত্রও নতুন করে আঁকছে। চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং কিংবা ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যানের মতো পরিচিত মুখদের সম্পদ আরও ফুলে ফেঁপে উঠলেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন একঝাঁক নতুন তরুণ উদ্যোক্তা। ছোট কিন্তু দ্রুত বেড়ে ওঠা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টার্টআপের হাত ধরে কাগজে-কলমে কোটিপতির তালিকায় ঢুকে পড়ছেন তাঁরা। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এই তরুণরাই সিলিকন ভ্যালির নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেন
স্টার্টআপ থেকে কোটিপতি, অল্প সময়েই বিপুল উত্থান
এই নতুন ধনী উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই তাঁদের প্রতিষ্ঠান গড়েছেন মাত্র দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে। ওপেনএআইয়ের চ্যাটভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্মোচনের পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হঠাৎ করেই আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়ন দ্রুত বেড়ে যায় এবং সেই শেয়ারই তাঁদের সম্পদের মূল উৎস হয়ে দাঁড়ায়। স্কেল এআই প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার ওয়াং ও লুসি গুও, কিংবা কার্সর নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোডিং প্রতিষ্ঠানের তরুণ উদ্যোক্তারা অল্প সময়েই এই তালিকায় উঠে আসেন।

কারা এই নতুন মুখগুলো
এই ঢেউয়ে শুধু এক বা দুইটি প্রতিষ্ঠান নয়, একাধিক খাত জুড়ে কোটিপতির জন্ম হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অনুসন্ধান, তথ্য বিশ্লেষণ, মানবাকৃতি রোবট কিংবা আইনি সহায়তা সফটওয়্যার—সব ক্ষেত্রেই নতুন উদ্যোক্তারা বড় অঙ্কের মূল্যায়ন পেয়েছেন। পেরপ্লেক্সিটি, ফিগার এআই, হার্ভে কিংবা থিঙ্কিং মেশিনস ল্যাবের মত নাম গুলো এখন বিনিয়োগ জগতে বহুল আলোচিত। অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য বাজারে আসার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্য কয়েকশ কোটি ডলার ছুঁয়ে গেছে।
কাগজে সম্পদ, ভবিষ্যৎ কি নিশ্চিত
তবে এই দ্রুত সম্পদ সৃষ্টিকে নিয়ে সতর্কতার কথা শোনা যাচ্ছে। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্পদের বড় অংশই কাগজে-কলমে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকে থাকতে না পারে, তবে এই কোটিপতি তকমা দ্রুতই ঝুঁকির মুখে পড়বে। ইতিহাসে যেমন রেলওয়ে যুগ কিংবা ডটকম বুদবুদের সময় দেখা গিয়েছিল, তেমনি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোয়ারেও সবাই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

তরুণদের দাপট ও বৈচিত্র্যের প্রশ্ন
এই উত্থানের আরেকটি দিক হলো উদ্যোক্তাদের বয়স। অনেকেই বিশের কোঠায়, কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরাসরি ব্যবসায় নেমেছেন। প্রযুক্তির ইতিহাসে যেমন গুগল বা ফেসবুকের জন্মের সময় তরুণদের আধিপত্য ছিল, ঠিক তেমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে এখন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই ঢেউয়ে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনও খুবই কম, যা প্রযুক্তি খাতের পুরনো বৈষম্যকেই আরও স্পষ্ট করছে।
নতুন যুগের শুরু, না ক্ষণস্থায়ী জোয়ার
সব মিলিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে অল্প সময়েই বিপুল সম্পদ তৈরি হচ্ছে। এই তরুণ উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দুনিয়াকে কতটা বদলাতে পারবেন, নাকি তাঁদের অনেকেই শুধু কাগজের কোটিপতি হয়েই থেকে যাবেন—সেই উত্তর দেবে সময়ই।



সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















