উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে বিশ শতকের শুরুর মার্কিন রাজনীতিতে থিওডোর রুজভেল্ট এমন এক নাম, যিনি একই সঙ্গে বিস্ময় ও বিতর্কের প্রতীক। শক্ত হাতে নেতৃত্ব, দ্রুত সিদ্ধান্ত আর গভীর বৈপরীত্য—সব মিলিয়ে তিনি ইতিহাসের মঞ্চে আলাদা করে চিহ্নিত। সাম্প্রতিক গবেষণা ও জীবনীগ্রন্থে উঠে আসে এমন এক মানুষের ছবি, যেখানে নায়কোচিত সাফল্যের পাশে রয়েছে সীমাবদ্ধতা ও দ্বন্দ্বের ছায়া।
শৈশব থেকে রাজনীতির পথে
নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া রুজভেল্টের শৈশব ছিল অসুস্থতা আর সংগ্রামে ভরা। শারীরিক দুর্বলতাকে অতিক্রম করতে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন কঠোর অনুশীলন ও অধ্যবসায়ে। শুরুতে প্রকৃতিবিদ ও আইনজীবী হওয়ার ভাবনা থাকলেও অল্প বয়সেই রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তরুণ বয়সে অঙ্গরাজ্যের আইনসভায় তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যক্তিজীবনের শোক ও ক্ষতি তাঁকে ভেঙে দেয়নি; বরং সেখান থেকেই জন্ম নেয় দৃঢ় সংকল্প। ডাকোটা অঞ্চলের র্যাঞ্চে একাকিত্বে কাটানো সময় তাঁর চিন্তাভাবনায় গভীর প্রভাব ফেলে।
যুদ্ধের ময়দান থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে
স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী অশ্বারোহী বাহিনী গড়ে তুলে রুজভেল্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন। যুদ্ধফেরত নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা তাঁকে দ্রুত ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, সহসভাপতি—এই পথ পেরিয়ে তিনি মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। তাঁর সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিস্তৃত হয় এবং দেশ বিশ্বরাজনীতিতে আরও দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে।

সংস্কার, সংরক্ষণ আর দ্বন্দ্ব
রুজভেল্টের শাসনামল ছিল সংস্কার ও বাস্তবতার টানাপোড়েনে ভরা। তিনি করপোরেট নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিক সুরক্ষার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন, আবার বৃহৎ করপোরেশনের অস্তিত্বকেও বাস্তবতা হিসেবে দেখেন। প্রকৃতি সংরক্ষণে তাঁর উদ্যোগ ইতিহাসে অনন্য; বিপুল বনভূমি ও সংরক্ষিত এলাকা গড়ে ওঠে তাঁর সময়ে। তবু শিকারপ্রেম এই পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তীব্র সমালোচনা তাঁকে ঘিরে ধরে।
উত্তরাধিকার ও বিতর্ক
জীবনীকারেরা রুজভেল্টের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি তাঁর কঠোর রাজনৈতিক কৌশল ও আত্মপ্রচারের দিকটিও সামনে এনেছেন। সমালোচকেরা বলেন, ক্ষমতার প্রতি আসক্তি অনেক সময় নীতিকে ছাপিয়ে গেছে। আবার সমর্থকদের মতে, তাঁর মানবিকতা, বুদ্ধিবৃত্তিক গভীরতা ও সামাজিক সহানুভূতি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাকে সমৃদ্ধ করেছে।
ইতিহাসের মঞ্চে রুজভেল্ট আজ
এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরও রুজভেল্ট রহস্যময়। তিনি যেমন আধুনিক আমেরিকার ভিত্তি মজবুত করেছেন, তেমনি নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতাও বহন করেছেন। তাঁর জীবন মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্বরা প্রায়ই গুণ ও দুর্বলতার জটিল মিশ্রণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















