ইরানের রাজধানী তেহরানে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ নতুন করে চাপে ফেলেছে শাসনব্যবস্থাকে। দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধপরবর্তী অস্থিরতা মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এখন রাস্তায় নেমে এসেছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা দ্রুত দেশের অন্য শহরে ছড়ায়।
মুদ্রা পতনে জীবিকা বিপর্যয়
মূল সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয় মুদ্রার তীব্র পতন। জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকে ইরানি রিয়ালের মূল্য প্রায় ষাট শতাংশ কমে গেছে। সোমবার এক সময় রিয়ালের দর দাঁড়ায় ডলারের বিপরীতে ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে। সঞ্চয়ের মূল্য কমে যাওয়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দৈনন্দিন জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর রাজপথে বিক্ষোভের ছবি
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তেহরানের বাজার সংলগ্ন অভিজাত বিপণিবিতানে বিক্ষোভ দেখা যায়। কোথাও বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতার স্লোগান দিচ্ছেন, আবার কোথাও নিরাপত্তা বাহিনীকে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম নিয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখা যায়। রাজধানীর পশ্চিমাংশের বাজারঘিরে একাধিক এলাকায় এই বিক্ষোভ চোখে পড়েছে।

দমননীতি আর যুদ্ধের ধাক্কা
বিক্ষোভের পরিসর কতটা বড় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সরকার ইতিমধ্যেই ভিন্নমত দমনে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। চলতি বছরে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন। জুনের যুদ্ধে দেশের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ্যে আসায় সরকারের প্রতি অসন্তোষ আরও বেড়েছে।
জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট
অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি দেশটি তীব্র পানি সংকট ও বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখে। চলতি মাসে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে, যা সংসদ সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। অতীতে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি ঘিরে প্রাণঘাতী সহিংসতার স্মৃতি এখনো মানুষের মনে তাজা।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও পদত্যাগ
স্বতন্ত্র বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক দমননীতি মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস কিয়ান সামাজিক মাধ্যমে মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাদের দাবি শোনার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিন পদত্যাগ করেছেন, যা সংকটের গভীরতাই নির্দেশ করে।
নিষেধাজ্ঞা ও অচল আলোচনা
ইরানের অর্থনৈতিক দুরবস্থার পেছনে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বড় কারণ। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আশা আপাতত ক্ষীণ। এই অচলাবস্থাই অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলছে এবং রাজপথের ক্ষোভকে উসকে দিচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















