সিঙ্গাপুর পুলিশ কর্তৃপক্ষের এক অভিযানে কম্বোডিয়া ও সিঙ্গাপুর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের কার্যক্রম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন সিঙ্গাপুরের দুই ভাই ও তাদের এক চাচাতো ভাই। মোট ৪৩৮টি মামলায় অন্তত ৪১ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত ২৭ জন সিঙ্গাপুরীয় নাগরিক পলাতক রয়েছেন।
চক্রের নেতৃত্বে দুই ভাই ও এক চাচাতো ভাই
অভিযুক্ত মূল হোতা এনজি ওয়েই লিয়াং (৩২), যিনি ২০২৪ সালে ফনমপেন শহরে এই প্রতারণা চক্র গড়ে তোলেন। তিনি তার বড় ভাই এনজি ওয়েই কাং (৩৩), বান্ধবী ক্রিস্টি নিও ওয়েই এন (২৯) এবং চাচাতো ভাই লেস্টার এনজি জিং হাই (২৯)-কে যুক্ত করেন। তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ আইনে মামলা হয় এবং জামিন নামঞ্জুর করা হয়। আরও ১২ জন, যার মধ্যে দুই মালয়েশীয় ও এক ফিলিপিনা নাগরিকও রয়েছেন, একই মামলায় অভিযুক্ত।
পারিবারিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যক্তিগত পটভূমি
ওয়েই কাংয়ের স্ত্রী স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আট বছর ধরে তার স্বামীর সঙ্গে সংসার করছেন এবং পুরো ঘটনাটি তাদের পরিবারের জন্য “সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত”। তিনি বলেন, “তিনি প্রায় সব সময়ই বাড়িতে থাকেন এবং তার বাবার সঙ্গে সংস্কার ব্যবসা চালান।”
তদন্তে জানা যায়, ওয়েই কাং পূর্বে ‘লিটল ইন্ডিয়া’র মড রোডে একটি ম্যাসাজ পার্লারও পরিচালনা করতেন। অপরদিকে, ওয়েই লিয়াং বিগত কয়েক বছরে আসবাবপত্র, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞাপন ও পরামর্শদাতা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

প্রতারণার ধরন
চক্রটি সরকারি কর্মকর্তার ছদ্মবেশে প্রতারণা চালাতো। প্রথমে তারা ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয়ে ফোন করত, সিঙ্গাপুরীয় উচ্চারণে কথা বলে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করত। এরপর আরেকজন প্রতারক ‘সরকারি কর্মকর্তা’ সেজে জানাতেন, ভুক্তভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপরাধ তদন্তের আওতায় এসেছে।
এই প্রক্রিয়ায় তারা ভুক্তভোগীদের অর্থ “তদন্তের প্রয়োজনে” নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে বাধ্য করত। এই তিন ধাপের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হতো।
পুলিশের অভিযান ও আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান
৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী কম্বোডিয়া ও সিঙ্গাপুরে একযোগে অভিযান চালিয়ে চক্রটির কার্যক্রম বিঘ্নিত করে। ২৯ অক্টোবর পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২৭ জন সিঙ্গাপুরীয় ও সাত মালয়েশীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ইন্টারপোলের সহযোগিতায় এদের বিরুদ্ধে “রেড নোটিশ” জারি করার প্রক্রিয়া চলছে, যাতে আন্তর্জাতিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের সনাক্ত ও আটক করতে পারে।
পলাতকদের অতীত অপরাধ ও প্রেক্ষাপট
পলাতক ২৭ জনের মধ্যে অনেকেরই পূর্বে আইনভঙ্গের ইতিহাস রয়েছে। কেউ কেউ কোভিড–১৯ সময়কালে নিষিদ্ধ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন, আবার কেউ অবৈধ নাইটক্লাব পরিদর্শন বা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
তাদের মধ্যে একজন প্রাক্তন অ্যাংলো–চাইনিজ স্কুল (ইন্ডিপেনডেন্ট)-এর রাগবি দলের খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি একসময় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় স্কুলের হয়ে গোল করেছিলেন।
বিদেশে গ্রেপ্তার ও প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া
২৭ জনের মধ্যে ওয়েইন সো ইউ চেন নামে এক সিঙ্গাপুরীয় নাগরিককে ১৮ সেপ্টেম্বর কম্বোডিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার আইনজীবী জানান, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং এখন সিঙ্গাপুরে প্রত্যার্পণের অপেক্ষায় আছেন।
পুলিশের আহ্বান
সিঙ্গাপুর পুলিশ জানিয়েছে, পলাতকদের অবস্থান সম্পর্কে যাদের কাছে তথ্য আছে, তারা ১৮০০–২৫৫–০০০০ (বিদেশ থেকে +৬৫–৬২৫৫–০০০০) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা অনলাইনে তথ্য জমা দিতে পারেন (www.police.gov.sg/i-witness)। সব তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।
# সিঙ্গাপুর_#প্রতারণা_চক্র,# কম্বোডিয়া_অভিযান, #এনজি_ভাইরা, #আন্তর্জাতিক_অপরাধ, #পুলিশ_অভিযান, #ইন্টারপোল_#রেড_নোটিশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 
















