১১:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪) মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আমদানি সুবিধা: রমজানের ১০ পণ্য সহজে আমদানির নির্দেশনা নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়: ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুন

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • 64

পিওতর মান্তেইফেল

জসুদের বন্ধুত্ব

মস্কোর চিড়িয়াখানায় মন্তো একটা ঘের দেওয়া জমিতে একসঙ্গে থাকত একদল পাঁচমিশালী জানোয়ার। বেশ অসাধারণ দলটা; দুটি নেকড়ে, একটা বাদামী ভালুক, তিনটে ব্যাজার, ছয়টি উসুরী র‍্যাকুন এবং সমানসংখ্যক শেয়াল।

শৈশবেই তাদের রাখা হয় একসঙ্গে।

‘করছেন কী?’ বলেছিল কোনো দর্শক। ‘ওরা বড়ো হয়ে উঠলে প্রবলের হাতে দুর্বল অবশ্যই মারা পড়বে। প্রকৃতিতে যা হয় তা হবেই!’

দু’বছর কাটল। বড়ো হয়ে উঠল জন্তুগুলো। ‘প্রকৃতিতে যা হয় তা হল না।’ দলটার কেউ কাউকে ভয় পেত না, শুধু ফেরগানা স্তেপের লালচে-বাদামী নেকড়েটা ছাড়া, সবারই ‘তোয়াজ করে’ সে। বড়োসড়ো শক্ত-সমর্থ চেহারা হলেও নেকড়েটা সর্বদাই ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক চাইত, এমনকি ছোট্ট শেয়ালদেরও সৌজন্য দেখিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিত। অন্য জন্তুরাও বিশেষ পছন্দ করত না এই পা-চাটাকে।

কী একটা নীরব চুক্তিতে দিতা নামের এক কড়া ও ‘কর্তৃত্বময়ী’

মাদী নেকড়েকে মেনে চলত সবাই। তবে তার কাজ তেমন বেশি ছিল না। খাবার সবাই পেত অবশ্য- অবশ্যই একই রকম এবং একসঙ্গে সে সময়টাও সব ভালোই উৎরাত। খাবার জায়গায় দিক্তা তার দাঁত বার করত মাঝে মাঝে, একগয়ে ভালুক মিল্কা তখন পিছিয়ে যেত। মাঝে মাঝে হত কী, লোভী

শেয়ালগুলো দখল করে নিত বড়ো বড়ো টুকরোগুলো, নেকড়েরা তখন নাক দিয়ে তা খসিয়ে দিত তাদের দাঁত থেকে।

সবচেয়ে স্বাধীনভাবে চলত ব্যাজাররা। এমনকি ভালুকের সঙ্গেও ছিল তাদের দহরম-মহরম।

ঝগড়া হত খুব কম, হলেও চট করেই তা মিটে যেত; কেননা অমনি জায়গা ছেড়ে উঠত দিক্তা, ঝগড়ুটেদের ভাগিয়ে দিত এদিক-ওদিক। উত্তেজনার ভক্তরা বৃথাই ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছে, একটা মারপিট লাগবে নাকি? ‘নানা জাতের’ অধিবাসীদের এই এলাকাটায় ‘সামরিক পরিস্থিতি’ ঘোষিত হয় নি কখনো। অসাধারণ এই সহবসতির নিয়ম-কানুনের পেছনকার কারণটা এই যে এরা ছোটো থেকেই পরস্পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, এদের কামড় যখন বিপজ্জনক নয়, সেই শৈশব থেকেই কতকগুলি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত’ গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে, তাতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে যে সীমাটা পেরলে গুরুতর কলহ দেখা দিতে পারে, সেটা পেরনো যায় না। যেমন, নেকড়েদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শেয়াল নেকড়ের মাংসে লোভ করে না। কাছ দিয়ে যাবার সময় বরাবর চোখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু সে নেকড়ে যখন খেয়ে দেয়ে ফিরে আসে বরফের মধ্যে, তখন শেয়াল তার গায়ে চেপে ঘুময়, যেন গরম সোফা।

জীবজন্তুদের একত্রে প্রতিপালনের এই পরীক্ষাটা থেকে পরিষ্কার দেখা যায় যে জীবজন্তুর আচরণ প্রভাবিত করে মানুষ তাদের সহসম্পর্ক খুবই বদলিয়ে দিতে পারে, প্রকৃতিতে যা দেখা যায় এমনকি তার একেবারে বিপরীত রকমে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

০৮:০০:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

পিওতর মান্তেইফেল

জসুদের বন্ধুত্ব

মস্কোর চিড়িয়াখানায় মন্তো একটা ঘের দেওয়া জমিতে একসঙ্গে থাকত একদল পাঁচমিশালী জানোয়ার। বেশ অসাধারণ দলটা; দুটি নেকড়ে, একটা বাদামী ভালুক, তিনটে ব্যাজার, ছয়টি উসুরী র‍্যাকুন এবং সমানসংখ্যক শেয়াল।

শৈশবেই তাদের রাখা হয় একসঙ্গে।

‘করছেন কী?’ বলেছিল কোনো দর্শক। ‘ওরা বড়ো হয়ে উঠলে প্রবলের হাতে দুর্বল অবশ্যই মারা পড়বে। প্রকৃতিতে যা হয় তা হবেই!’

দু’বছর কাটল। বড়ো হয়ে উঠল জন্তুগুলো। ‘প্রকৃতিতে যা হয় তা হল না।’ দলটার কেউ কাউকে ভয় পেত না, শুধু ফেরগানা স্তেপের লালচে-বাদামী নেকড়েটা ছাড়া, সবারই ‘তোয়াজ করে’ সে। বড়োসড়ো শক্ত-সমর্থ চেহারা হলেও নেকড়েটা সর্বদাই ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক চাইত, এমনকি ছোট্ট শেয়ালদেরও সৌজন্য দেখিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিত। অন্য জন্তুরাও বিশেষ পছন্দ করত না এই পা-চাটাকে।

কী একটা নীরব চুক্তিতে দিতা নামের এক কড়া ও ‘কর্তৃত্বময়ী’

মাদী নেকড়েকে মেনে চলত সবাই। তবে তার কাজ তেমন বেশি ছিল না। খাবার সবাই পেত অবশ্য- অবশ্যই একই রকম এবং একসঙ্গে সে সময়টাও সব ভালোই উৎরাত। খাবার জায়গায় দিক্তা তার দাঁত বার করত মাঝে মাঝে, একগয়ে ভালুক মিল্কা তখন পিছিয়ে যেত। মাঝে মাঝে হত কী, লোভী

শেয়ালগুলো দখল করে নিত বড়ো বড়ো টুকরোগুলো, নেকড়েরা তখন নাক দিয়ে তা খসিয়ে দিত তাদের দাঁত থেকে।

সবচেয়ে স্বাধীনভাবে চলত ব্যাজাররা। এমনকি ভালুকের সঙ্গেও ছিল তাদের দহরম-মহরম।

ঝগড়া হত খুব কম, হলেও চট করেই তা মিটে যেত; কেননা অমনি জায়গা ছেড়ে উঠত দিক্তা, ঝগড়ুটেদের ভাগিয়ে দিত এদিক-ওদিক। উত্তেজনার ভক্তরা বৃথাই ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছে, একটা মারপিট লাগবে নাকি? ‘নানা জাতের’ অধিবাসীদের এই এলাকাটায় ‘সামরিক পরিস্থিতি’ ঘোষিত হয় নি কখনো। অসাধারণ এই সহবসতির নিয়ম-কানুনের পেছনকার কারণটা এই যে এরা ছোটো থেকেই পরস্পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, এদের কামড় যখন বিপজ্জনক নয়, সেই শৈশব থেকেই কতকগুলি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত’ গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে, তাতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে যে সীমাটা পেরলে গুরুতর কলহ দেখা দিতে পারে, সেটা পেরনো যায় না। যেমন, নেকড়েদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শেয়াল নেকড়ের মাংসে লোভ করে না। কাছ দিয়ে যাবার সময় বরাবর চোখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু সে নেকড়ে যখন খেয়ে দেয়ে ফিরে আসে বরফের মধ্যে, তখন শেয়াল তার গায়ে চেপে ঘুময়, যেন গরম সোফা।

জীবজন্তুদের একত্রে প্রতিপালনের এই পরীক্ষাটা থেকে পরিষ্কার দেখা যায় যে জীবজন্তুর আচরণ প্রভাবিত করে মানুষ তাদের সহসম্পর্ক খুবই বদলিয়ে দিতে পারে, প্রকৃতিতে যা দেখা যায় এমনকি তার একেবারে বিপরীত রকমে।