০৮:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজনৈতিক দলের ভেতরে ফ্যাসিবাদী সহযোগী ও সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাংলাদেশ ব্যাংক   ডলার  কিনেছে ৩০৫ কোটি ডলার, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে উদ্যোগ জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিল এনসিপি, নতুন রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা নিজ দল ছেড়ে এমপি হওয়ার মরিয়া চেষ্টা কতটা নৈতিক? ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন এমডি নিয়োগ, বিনিয়োগকারীদের নজর ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তে ওসমান হাদী হত্যাকাণ্ড: ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধে স্থবির জনজীবন বাংলাদেশের অস্থিরতায় প্রভাব পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের পোশাক শিল্পে সাভার–কেরানীগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে ভালুকায় সহিংস ঘটনার পর মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন গাজীপুরে শীত বেড়ে যাওয়ায় অসহায়দের জন্য জরুরি সহায়তা

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • 83

পিওতর মান্তেইফেল

জসুদের বন্ধুত্ব

মস্কোর চিড়িয়াখানায় মন্তো একটা ঘের দেওয়া জমিতে একসঙ্গে থাকত একদল পাঁচমিশালী জানোয়ার। বেশ অসাধারণ দলটা; দুটি নেকড়ে, একটা বাদামী ভালুক, তিনটে ব্যাজার, ছয়টি উসুরী র‍্যাকুন এবং সমানসংখ্যক শেয়াল।

শৈশবেই তাদের রাখা হয় একসঙ্গে।

‘করছেন কী?’ বলেছিল কোনো দর্শক। ‘ওরা বড়ো হয়ে উঠলে প্রবলের হাতে দুর্বল অবশ্যই মারা পড়বে। প্রকৃতিতে যা হয় তা হবেই!’

দু’বছর কাটল। বড়ো হয়ে উঠল জন্তুগুলো। ‘প্রকৃতিতে যা হয় তা হল না।’ দলটার কেউ কাউকে ভয় পেত না, শুধু ফেরগানা স্তেপের লালচে-বাদামী নেকড়েটা ছাড়া, সবারই ‘তোয়াজ করে’ সে। বড়োসড়ো শক্ত-সমর্থ চেহারা হলেও নেকড়েটা সর্বদাই ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক চাইত, এমনকি ছোট্ট শেয়ালদেরও সৌজন্য দেখিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিত। অন্য জন্তুরাও বিশেষ পছন্দ করত না এই পা-চাটাকে।

কী একটা নীরব চুক্তিতে দিতা নামের এক কড়া ও ‘কর্তৃত্বময়ী’

মাদী নেকড়েকে মেনে চলত সবাই। তবে তার কাজ তেমন বেশি ছিল না। খাবার সবাই পেত অবশ্য- অবশ্যই একই রকম এবং একসঙ্গে সে সময়টাও সব ভালোই উৎরাত। খাবার জায়গায় দিক্তা তার দাঁত বার করত মাঝে মাঝে, একগয়ে ভালুক মিল্কা তখন পিছিয়ে যেত। মাঝে মাঝে হত কী, লোভী

শেয়ালগুলো দখল করে নিত বড়ো বড়ো টুকরোগুলো, নেকড়েরা তখন নাক দিয়ে তা খসিয়ে দিত তাদের দাঁত থেকে।

সবচেয়ে স্বাধীনভাবে চলত ব্যাজাররা। এমনকি ভালুকের সঙ্গেও ছিল তাদের দহরম-মহরম।

ঝগড়া হত খুব কম, হলেও চট করেই তা মিটে যেত; কেননা অমনি জায়গা ছেড়ে উঠত দিক্তা, ঝগড়ুটেদের ভাগিয়ে দিত এদিক-ওদিক। উত্তেজনার ভক্তরা বৃথাই ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছে, একটা মারপিট লাগবে নাকি? ‘নানা জাতের’ অধিবাসীদের এই এলাকাটায় ‘সামরিক পরিস্থিতি’ ঘোষিত হয় নি কখনো। অসাধারণ এই সহবসতির নিয়ম-কানুনের পেছনকার কারণটা এই যে এরা ছোটো থেকেই পরস্পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, এদের কামড় যখন বিপজ্জনক নয়, সেই শৈশব থেকেই কতকগুলি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত’ গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে, তাতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে যে সীমাটা পেরলে গুরুতর কলহ দেখা দিতে পারে, সেটা পেরনো যায় না। যেমন, নেকড়েদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শেয়াল নেকড়ের মাংসে লোভ করে না। কাছ দিয়ে যাবার সময় বরাবর চোখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু সে নেকড়ে যখন খেয়ে দেয়ে ফিরে আসে বরফের মধ্যে, তখন শেয়াল তার গায়ে চেপে ঘুময়, যেন গরম সোফা।

জীবজন্তুদের একত্রে প্রতিপালনের এই পরীক্ষাটা থেকে পরিষ্কার দেখা যায় যে জীবজন্তুর আচরণ প্রভাবিত করে মানুষ তাদের সহসম্পর্ক খুবই বদলিয়ে দিতে পারে, প্রকৃতিতে যা দেখা যায় এমনকি তার একেবারে বিপরীত রকমে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজনৈতিক দলের ভেতরে ফ্যাসিবাদী সহযোগী ও সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

০৮:০০:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

পিওতর মান্তেইফেল

জসুদের বন্ধুত্ব

মস্কোর চিড়িয়াখানায় মন্তো একটা ঘের দেওয়া জমিতে একসঙ্গে থাকত একদল পাঁচমিশালী জানোয়ার। বেশ অসাধারণ দলটা; দুটি নেকড়ে, একটা বাদামী ভালুক, তিনটে ব্যাজার, ছয়টি উসুরী র‍্যাকুন এবং সমানসংখ্যক শেয়াল।

শৈশবেই তাদের রাখা হয় একসঙ্গে।

‘করছেন কী?’ বলেছিল কোনো দর্শক। ‘ওরা বড়ো হয়ে উঠলে প্রবলের হাতে দুর্বল অবশ্যই মারা পড়বে। প্রকৃতিতে যা হয় তা হবেই!’

দু’বছর কাটল। বড়ো হয়ে উঠল জন্তুগুলো। ‘প্রকৃতিতে যা হয় তা হল না।’ দলটার কেউ কাউকে ভয় পেত না, শুধু ফেরগানা স্তেপের লালচে-বাদামী নেকড়েটা ছাড়া, সবারই ‘তোয়াজ করে’ সে। বড়োসড়ো শক্ত-সমর্থ চেহারা হলেও নেকড়েটা সর্বদাই ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক চাইত, এমনকি ছোট্ট শেয়ালদেরও সৌজন্য দেখিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিত। অন্য জন্তুরাও বিশেষ পছন্দ করত না এই পা-চাটাকে।

কী একটা নীরব চুক্তিতে দিতা নামের এক কড়া ও ‘কর্তৃত্বময়ী’

মাদী নেকড়েকে মেনে চলত সবাই। তবে তার কাজ তেমন বেশি ছিল না। খাবার সবাই পেত অবশ্য- অবশ্যই একই রকম এবং একসঙ্গে সে সময়টাও সব ভালোই উৎরাত। খাবার জায়গায় দিক্তা তার দাঁত বার করত মাঝে মাঝে, একগয়ে ভালুক মিল্কা তখন পিছিয়ে যেত। মাঝে মাঝে হত কী, লোভী

শেয়ালগুলো দখল করে নিত বড়ো বড়ো টুকরোগুলো, নেকড়েরা তখন নাক দিয়ে তা খসিয়ে দিত তাদের দাঁত থেকে।

সবচেয়ে স্বাধীনভাবে চলত ব্যাজাররা। এমনকি ভালুকের সঙ্গেও ছিল তাদের দহরম-মহরম।

ঝগড়া হত খুব কম, হলেও চট করেই তা মিটে যেত; কেননা অমনি জায়গা ছেড়ে উঠত দিক্তা, ঝগড়ুটেদের ভাগিয়ে দিত এদিক-ওদিক। উত্তেজনার ভক্তরা বৃথাই ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছে, একটা মারপিট লাগবে নাকি? ‘নানা জাতের’ অধিবাসীদের এই এলাকাটায় ‘সামরিক পরিস্থিতি’ ঘোষিত হয় নি কখনো। অসাধারণ এই সহবসতির নিয়ম-কানুনের পেছনকার কারণটা এই যে এরা ছোটো থেকেই পরস্পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, এদের কামড় যখন বিপজ্জনক নয়, সেই শৈশব থেকেই কতকগুলি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত’ গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে, তাতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে যে সীমাটা পেরলে গুরুতর কলহ দেখা দিতে পারে, সেটা পেরনো যায় না। যেমন, নেকড়েদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শেয়াল নেকড়ের মাংসে লোভ করে না। কাছ দিয়ে যাবার সময় বরাবর চোখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু সে নেকড়ে যখন খেয়ে দেয়ে ফিরে আসে বরফের মধ্যে, তখন শেয়াল তার গায়ে চেপে ঘুময়, যেন গরম সোফা।

জীবজন্তুদের একত্রে প্রতিপালনের এই পরীক্ষাটা থেকে পরিষ্কার দেখা যায় যে জীবজন্তুর আচরণ প্রভাবিত করে মানুষ তাদের সহসম্পর্ক খুবই বদলিয়ে দিতে পারে, প্রকৃতিতে যা দেখা যায় এমনকি তার একেবারে বিপরীত রকমে।