১২:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রুশ যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশে, ন্যাটোর শক্তি পরীক্ষায় রাশিয়া ব্রিটিশ দম্পতি তালেবান হেফাজত থেকে মুক্ত পর্তুগাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে রোববার নতুন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা করেছে, এখন থেকে কোম্পানিগুলোকে প্রতিটি এইচ-১বি কর্মী ভিসার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার করে দিতে হবে। প্রযুক্তি খাতে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা হতে পারে। অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি এ বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন আইনি অভিবাসনেও নানা সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। এবার এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচিকে নতুনভাবে সাজানোই হচ্ছে সবচেয়ে আলোচিত পদক্ষেপ। ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস বলেছেন, “আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দিন। আমাদের চাকরি বিদেশিদের দেবেন না।” সমালোচনা ও সমর্থন প্রযুক্তি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছে, অথচ এই পদক্ষেপ নিয়ে তারা এখন সমস্যায় পড়তে পারে। সমালোচকদের দাবি, এই কর্মসূচির মাধ্যমে কোম্পানিগুলো কম মজুরিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে স্থানীয়দের বঞ্চিত করছে। অন্যদিকে সমর্থকরা, যেমন টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, মনে করেন এই ভিসা বিশ্বমানের দক্ষ কর্মী নিয়ে আসে, যা প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অপরিহার্য। মাস্ক নিজেও আগে এইচ-১বি ভিসাধারী ছিলেন। তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারি তথ্যে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ লাখে, যদিও এ সময় স্থানীয় এসটিইএম চাকরির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪৪.৫%। বিশ্ব প্রতিভা হারানোর ঝুঁকি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম মেনলো ভেঞ্চার্সের পার্টনার ডেভিড স্যাক্স সতর্ক করে বলেছেন, এত বেশি ফি দিলে বিশ্বের সেরা প্রতিভাবানরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা হ্রাস পাবে। এতে ছোট ও নতুন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ফি অনেক প্রতিষ্ঠানকে কাজ বিদেশে সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দেবে। ভারত ও চীনের প্রভাব ২০২৪ সালে অনুমোদিত সব এইচ-১বি ভিসার মধ্যে ৭১% গিয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের কাছে। চীনের শেয়ার ছিল মাত্র ১১.৭%। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অ্যামাজন ও তার ক্লাউড শাখা এডব্লিউএস একাই ১২ হাজারের বেশি এইচ-১বি অনুমোদন পেয়েছে। মাইক্রোসফট ও মেটাও ৫ হাজারের বেশি অনুমোদন পেয়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর অবস্থান উইলবার রস দাবি করেছেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো বছরে ১ লাখ ডলারের প্রস্তাবে সম্মত। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান ও ভারত-চীনের কূটনৈতিক মিশন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারে আইটি সেবাদাতা কগনিজ্যান্টের শেয়ার প্রায় ৫% এবং ভারতীয় আইটি কোম্পানি ইনফোসিস ও উইপ্রোর শেয়ার ২–৫% পর্যন্ত কমে গেছে। আইনগত প্রশ্ন ও নতুন পদক্ষেপ অভিবাসন নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেস শুধুমাত্র প্রশাসনিক খরচ মেটানোর জন্য ফি ধার্য করার অনুমতি দিয়েছে, তাই এভাবে বিশাল ফি আরোপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বর্তমানে বছরে ৬৫ হাজার সাধারণ ও ২০ হাজার উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য এইচ-১বি ভিসা অনুমোদিত হয়। লটারিতে অংশ নিতে তুলনামূলক কম ফি লাগে, আর অনুমোদনের পর কয়েক হাজার ডলার খরচ হয়। সাধারণত তিন থেকে ছয় বছরের জন্য এই ভিসা অনুমোদিত হয়। এছাড়া, ট্রাম্প শুক্রবার আরেকটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বসবাসের জন্য ১০ লাখ ডলার দিতে পারবেন, তাদের জন্য তৈরি হবে নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ ব্যবস্থা। নতুন নীতি প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে ভারত ও চীন থেকে আসা দক্ষ কর্মীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। স্বল্পমেয়াদে সরকার রাজস্ব পেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র উদ্ভাবনী শক্তি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ট্রাম্পের নতুন ভিসা নীতি: ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ ভাত না রুটি, কী খাওয়া উচিত? বাংলাদেশি শ্রমিকের ভাগ্য বদলাল আবুধাবি বিগ টিকিটে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্বশক্তির টানাপোড়েন হয়রানি ও বৈষম্যে বিপন্ন ব্যবসায়ীরা: অর্থনীতির মেরুদণ্ডে চাপ নেপালে ‘জেন জেড’ আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি চালিয়েছে

ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রকল্প, চুক্তি বা সমঝোতা কি পুনর্বিবেচনা হতে পারে?

  • Sarakhon Report
  • ১২:১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • 21

অর্চি অতন্ত্রিলা

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরেফিরে যে দেশের নাম সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে সেটি প্রতিবেশী দেশ ভারত।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সাল থেকে ছয় বছরের মতো ভারতেই কাটিয়েছেন। এখনও তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে তিনি গিয়েছেনও ভারতেই।

কিন্তু তাতে করে বাংলাদেশের সাথে যেসব চুক্তি বা প্রকল্প ভারতের রয়েছে, তার বাস্তবতা ঠিক কী দাঁড়িয়েছে? সেগুলোর ভবিষ্যৎই বা কী?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতে একটা অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে।

বহু দিনের মিত্র হলেও এখন নির্বাসিত অজনপ্রিয় নেতাকে আশ্রয় দেয়া, আবার বাংলাদেশের সাথে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্পর্ক – এসব বিষয় ভারতের জন্য এখন ভাবনার বিষয়।

কিন্তু, বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেক ধরণের প্রকল্প, চুক্তি এবং সমঝোতা রয়েছে।

আর গত ১৬ বছরে ভারতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কাজ করা যতটা সহজ ছিল, এখন সেটি কতটা থাকবে – তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১১ সালে সার্ক সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানি গ্রুপকে বাড়তি সুবিধা দেয়া, বেশি খরচ, ক্যাপাসিটি চার্জের মতো দিকগুলোও দেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে দেখেন অনেকে।

এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও ছিল সমালোচনা।

এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করে তরুণ প্রজন্মও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা মনে করেন তেমনটাই।

তিনি বলেন, “২০০৮ এর নির্বাচনটা বাদ দিলে বাকি তিনটা নির্বাচনেই কিন্তু ভারত সরকারকে নানাভাবে খুশি করে এবং দেখে যাচ্ছে নিজের ক্ষমতাটাকে দীর্ঘায়িত করার একটা বাসনা আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল। সেই জায়গা থেকে এমন চুক্তিগুলোই এখানে হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ কোনোভাবে লাভবান হয়নি।”

“এবং লাভের যে ভাগ সেটার পুরোটাই আসলে ভারতের পকেটে গেছে। সেই চুক্তিগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে এখন,” বলেন উমামা।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা

“প্রতিটি চুক্তি ও সমঝোতা ‘রিভিজিট’ করা হবে”

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে কী-না সে প্রশ্ন জবাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজের জন্য কিছুটা সময় দরকার।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “এখন আসলে এমন একটা পরিস্থিতি চলছে যে, যতটা সম্ভব সরকারকে পুরোপুরি সচল করে তোলা। এর পরের পর্যায়ে খুব তাড়াতাড়ি আমরা সবগুলি নিয়ে বসবো – কোন কন্ট্রাক্ট কীভাবে করা যায়।”

“এবং আমরা ট্রান্সপারেন্সিতে (স্বচ্ছতায়) বিশ্বাস করি, যা যা কিছু সম্ভব বা চুক্তি যেগুলো মানুষের জানার অধিকার আছে, সেগুলো আমরা অবশ্যই পাবলিক করবো,” তিনি আরও বলেছেন।

তবে, ভারত এবং বাংলাদেশের প্রকল্প বা চুক্তিগুলো নিয়ে একটা বড় সমালোচনার জায়গা হলও বাংলাদেশের স্বার্থের জায়গাগুলো নিশ্চিত করতে না পারা।

যেমন তিস্তা বা ফারাক্কার মতো ইস্যু, সীমান্ত হত্যা অথবা নেপাল-ভুটানের সাথে সরাসরি যান চলাচলের মত অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি বলে মনে করেন অনেকে।

কিন্তু যেসব চুক্তি এর মধ্যে হয়ে গেছে, সেগুলো থেকে কি পেছানোর সুযোগ আছে? সেসব চুক্তি কি পুনরায় বিবেচনা করা হতে পারে?

বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মি. হোসেন বলেছেন, প্রতিটি চুক্তি ও সমঝোতা ‘রিভিজিট’ অর্থাৎ পুনর্বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকটা জিনিস আমরা রিভিজিট করবো, এবং পরীক্ষা করে দেখবো আমরা কোন কোনখানে রিনেগোশিয়েট (নতুন করে সমঝোতা) করতে পারি। বা আমাদের স্বার্থ যেখানে রক্ষিত হয় নাই বলে মনে করি, সেটা নিয়ে যেন আমরা এগোতে পারি।”

“তবে বিষয়টা হলো যে আমাদের প্রত্যেকটাই পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, কোনখানে আমাদের পক্ষে রিনেগোশিয়েট করা সম্ভব এবং কোনখানে সম্ভব না, সে অনুযায়ী আমরা এগোবো।”

চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ কি আছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছেন, যেসব চুক্তি নিয়ে সমালোচনার জায়গা রয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ কতটা রয়েছে – সেটা নির্দিষ্ট চুক্তিতে কী আছে, তার ওপরই নির্ভর করে।

সাধারণত সমঝোতা স্মারকের আইনগত বাধ্যবাধকতার জায়গা থাকে না, যা চুক্তির ক্ষেত্রে থাকে।

তিনি বলছিলেন, “যখনই একটা চুক্তি সম্পাদন করা হয়, তখনি কিন্তু তাতে লেখা থাকে যে কোনও একটা পার্টিকুলার পরিস্থিতিতে এ চুক্তিটা প্রযোজ্য হবে না কারো জন্যই। আরও যেমন এক্সিট ক্লসে থাকে যে, যদি এখানে কোনও ধরণের এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন হয় তাহলে এটা কারো ওপরেই অ্যাপ্লিকেবল হবে না।”

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “প্রত্যেকটা চুক্তিতে বিভিন্ন ধরণের এক্সিট ক্লস থাকে। তো ভারতের সাথে যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, এটার এক্সিট ক্লসগুলো কী আছে – সেগুলো খুব কেয়ারফুলি (সতর্কভাবে) দেখতে হবে। যদি এক্সিট ক্লস ফেভারেবল (অনুকূলে) না থাকে, তাহলে কিন্তু সেই চুক্তিগুলো চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

এদিকে, ভারতের বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে ভারত অতি মাত্রায় শুধু আওয়ামী লীগের উপরই নির্ভর করেছে। যে কারণে এখন তাদের জন্য আগের মতো সহজ পরিবেশটা আর নেই।

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবেই।

কিন্তু সেটা সামনের দিনে ঠিক কেমন হবে এবং এখন কী ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে সেটা পরিষ্কার হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

বিবিসি নিউজ বাংলা

রুশ যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশে, ন্যাটোর শক্তি পরীক্ষায় রাশিয়া

ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রকল্প, চুক্তি বা সমঝোতা কি পুনর্বিবেচনা হতে পারে?

১২:১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

অর্চি অতন্ত্রিলা

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরেফিরে যে দেশের নাম সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে সেটি প্রতিবেশী দেশ ভারত।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সাল থেকে ছয় বছরের মতো ভারতেই কাটিয়েছেন। এখনও তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে তিনি গিয়েছেনও ভারতেই।

কিন্তু তাতে করে বাংলাদেশের সাথে যেসব চুক্তি বা প্রকল্প ভারতের রয়েছে, তার বাস্তবতা ঠিক কী দাঁড়িয়েছে? সেগুলোর ভবিষ্যৎই বা কী?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতে একটা অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে।

বহু দিনের মিত্র হলেও এখন নির্বাসিত অজনপ্রিয় নেতাকে আশ্রয় দেয়া, আবার বাংলাদেশের সাথে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্পর্ক – এসব বিষয় ভারতের জন্য এখন ভাবনার বিষয়।

কিন্তু, বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেক ধরণের প্রকল্প, চুক্তি এবং সমঝোতা রয়েছে।

আর গত ১৬ বছরে ভারতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কাজ করা যতটা সহজ ছিল, এখন সেটি কতটা থাকবে – তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১১ সালে সার্ক সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানি গ্রুপকে বাড়তি সুবিধা দেয়া, বেশি খরচ, ক্যাপাসিটি চার্জের মতো দিকগুলোও দেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে দেখেন অনেকে।

এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও ছিল সমালোচনা।

এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করে তরুণ প্রজন্মও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা মনে করেন তেমনটাই।

তিনি বলেন, “২০০৮ এর নির্বাচনটা বাদ দিলে বাকি তিনটা নির্বাচনেই কিন্তু ভারত সরকারকে নানাভাবে খুশি করে এবং দেখে যাচ্ছে নিজের ক্ষমতাটাকে দীর্ঘায়িত করার একটা বাসনা আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল। সেই জায়গা থেকে এমন চুক্তিগুলোই এখানে হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ কোনোভাবে লাভবান হয়নি।”

“এবং লাভের যে ভাগ সেটার পুরোটাই আসলে ভারতের পকেটে গেছে। সেই চুক্তিগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে এখন,” বলেন উমামা।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা

“প্রতিটি চুক্তি ও সমঝোতা ‘রিভিজিট’ করা হবে”

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে কী-না সে প্রশ্ন জবাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজের জন্য কিছুটা সময় দরকার।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “এখন আসলে এমন একটা পরিস্থিতি চলছে যে, যতটা সম্ভব সরকারকে পুরোপুরি সচল করে তোলা। এর পরের পর্যায়ে খুব তাড়াতাড়ি আমরা সবগুলি নিয়ে বসবো – কোন কন্ট্রাক্ট কীভাবে করা যায়।”

“এবং আমরা ট্রান্সপারেন্সিতে (স্বচ্ছতায়) বিশ্বাস করি, যা যা কিছু সম্ভব বা চুক্তি যেগুলো মানুষের জানার অধিকার আছে, সেগুলো আমরা অবশ্যই পাবলিক করবো,” তিনি আরও বলেছেন।

তবে, ভারত এবং বাংলাদেশের প্রকল্প বা চুক্তিগুলো নিয়ে একটা বড় সমালোচনার জায়গা হলও বাংলাদেশের স্বার্থের জায়গাগুলো নিশ্চিত করতে না পারা।

যেমন তিস্তা বা ফারাক্কার মতো ইস্যু, সীমান্ত হত্যা অথবা নেপাল-ভুটানের সাথে সরাসরি যান চলাচলের মত অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি বলে মনে করেন অনেকে।

কিন্তু যেসব চুক্তি এর মধ্যে হয়ে গেছে, সেগুলো থেকে কি পেছানোর সুযোগ আছে? সেসব চুক্তি কি পুনরায় বিবেচনা করা হতে পারে?

বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মি. হোসেন বলেছেন, প্রতিটি চুক্তি ও সমঝোতা ‘রিভিজিট’ অর্থাৎ পুনর্বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকটা জিনিস আমরা রিভিজিট করবো, এবং পরীক্ষা করে দেখবো আমরা কোন কোনখানে রিনেগোশিয়েট (নতুন করে সমঝোতা) করতে পারি। বা আমাদের স্বার্থ যেখানে রক্ষিত হয় নাই বলে মনে করি, সেটা নিয়ে যেন আমরা এগোতে পারি।”

“তবে বিষয়টা হলো যে আমাদের প্রত্যেকটাই পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, কোনখানে আমাদের পক্ষে রিনেগোশিয়েট করা সম্ভব এবং কোনখানে সম্ভব না, সে অনুযায়ী আমরা এগোবো।”

চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ কি আছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছেন, যেসব চুক্তি নিয়ে সমালোচনার জায়গা রয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ কতটা রয়েছে – সেটা নির্দিষ্ট চুক্তিতে কী আছে, তার ওপরই নির্ভর করে।

সাধারণত সমঝোতা স্মারকের আইনগত বাধ্যবাধকতার জায়গা থাকে না, যা চুক্তির ক্ষেত্রে থাকে।

তিনি বলছিলেন, “যখনই একটা চুক্তি সম্পাদন করা হয়, তখনি কিন্তু তাতে লেখা থাকে যে কোনও একটা পার্টিকুলার পরিস্থিতিতে এ চুক্তিটা প্রযোজ্য হবে না কারো জন্যই। আরও যেমন এক্সিট ক্লসে থাকে যে, যদি এখানে কোনও ধরণের এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন হয় তাহলে এটা কারো ওপরেই অ্যাপ্লিকেবল হবে না।”

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “প্রত্যেকটা চুক্তিতে বিভিন্ন ধরণের এক্সিট ক্লস থাকে। তো ভারতের সাথে যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, এটার এক্সিট ক্লসগুলো কী আছে – সেগুলো খুব কেয়ারফুলি (সতর্কভাবে) দেখতে হবে। যদি এক্সিট ক্লস ফেভারেবল (অনুকূলে) না থাকে, তাহলে কিন্তু সেই চুক্তিগুলো চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

এদিকে, ভারতের বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে ভারত অতি মাত্রায় শুধু আওয়ামী লীগের উপরই নির্ভর করেছে। যে কারণে এখন তাদের জন্য আগের মতো সহজ পরিবেশটা আর নেই।

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবেই।

কিন্তু সেটা সামনের দিনে ঠিক কেমন হবে এবং এখন কী ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে সেটা পরিষ্কার হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

বিবিসি নিউজ বাংলা