শিবলী আহম্মেদ সুজন
সাপ গরুর দুধ খায়
গ্রামীণ জীবনে এ ধরনের মুখরোচক ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় যে, সদ্য বাচ্চা দেওয়া গাভির দুধ না বাছুর, না গরিব গৃহস্থ পাচ্ছে। রাতবিরাতে নিয়মিতভাবে কোনো একটি বিশেষ ধরনের সাপ সেটা খেয়ে যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতির মুখে ভীত ও কৌতূহলী হওয়াটাই স্বাভাবিক।
খুব অনেকেরই আছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, সাপুড়ের বাঁশির বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আকৃতি সাপকে ক্ষিপ্ত করে কিংবা সাপুড়ের ছন্দোময় অঙ্গভঙ্গি সাপকে রেগে ফণা তুলে ধরতে প্ররোচিত করে।
আবার এ কথাও কেউ কেউ বলে থাকেন যে, সাপুড়ে বা বেদে তাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত যেভাবে সাপের চোখের সামনে ধরে হেলাতে-দোলাতে থাকে, তা-ই সাপকে উত্তেজিত করে তোলে। সাপের এই বিচিত্র স্বভাবগত আচরণের সঠিক কোনো প্রমাণ সুনির্দিষ্ট পরীক্ষণের মাধ্যমে এখনো পাওয়া যায়নি।
সাপের বিষ হজম করা: অনেক সাপুড়ে বেশ ফলাও করে দাবি করে থাকে যে সাপের ছোবলে তাদের ক্ষতি হয় না। অর্থাৎ তাদের দেহে সাপের বিষক্রিয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা বা ব্যবস্থা রয়েছে। এসব প্রতিরোধক বস্তু বাহ্যত বেজির কাছ থেকে সংগ্রহ করা গাছের ছাল বা শেকড়।
কিংবা কোনো বিরল অপরিচিত প্রাণীর হাড়গোড়। নয়তো তাবিজকবচ। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা অন্য রকম। সাপুড়ে বা বেদেরা তাদের খেলা দেখতে জমায়েত হওয়া লোকজনের সামনে দর্শনীয়ভাবে ক্ষিপ্ত সাপের ছোবলের সামনে দেহের কোনো নির্দিষ্ট অংশ বা হাত দ্বিধাহীনভাবে পেতে দিতে থাকে। সাপের ক্রমাগত ছোবলেও সাপুড়ের কোনো ক্ষতি হয় না।
ব্যাপারটা তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, সাপুড়ে ওই সব বিষধর সাপের বিষদাঁত আগে থেকে উঠিয়ে ফেলে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এও শোনা যায়, সতর্ক দর্শককে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তারা এদের বিষদাঁতও দেখিয়ে দেয়। আগে থেকেই তারা বিষথলি বিষনালি থেকে সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
সুতরাং বিষদাঁতসংবলিত সাপের ছোবলে সাপুড়ের কার্যত কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এ ধরনের সূক্ষ্ম ও জটিল অস্ত্রোপচারে সমূহ ভয়ের কারণও রয়েছে। অস্ত্রোপচার নির্ভুল না-ও হতে পারে। নির্ভুল হলেও তা যেকোনো সময় আবার নবায়িত হতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে সাপুড়ের মৃত্যু অবধারিত। এমনকি, অন্য কোনো উৎসাহী দর্শকও ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখতে গিয়ে প্রাণ হারাতে পারে।
প্রখ্যাত লেখক রেজাউর রহমান–এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
Leave a Reply