সারাক্ষণ ডেস্ক
আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য বিশ্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বযুদ্ধের আগের সময় থেকে এত কঠিন পরিস্থিতি আর কখনো দেখা যায়নি। লেবাননে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ এবং হিজবুল্লাহর সদস্যদের ডিভাইসের একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির জটিলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতাদের জন্য।
বর্তমান সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন। হেনরি কিসিঞ্জারের সময়ের মতো কূটনৈতিক সাফল্য এখন সহজলভ্য নয়। কিসিঞ্জার যেমন সহজেই কয়েকটি দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আরও জটিল। একদিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, অন্যদিকে ব্যর্থ রাষ্ট্র ও শক্তিশালী ব্যক্তি ও দলগুলো কূটনীতির জগৎকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
এখনকার মধ্যপ্রাচ্য, যেখানে গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুথি এবং ইরাকে শিয়া মিলিশিয়া সক্রিয়, সেখানে মার্কিন কূটনীতিকদের কাজ অনেক বেশি কঠিন। এসব অঞ্চলে শুধু সরকার নয়, বেসরকারি শক্তিগুলোর প্রভাবও ব্যাপক। সিরিয়াতেও সরকার এবং বিভিন্ন শক্তির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই চলছে।
হিজবুল্লাহর মতো অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো এখন সমসাময়িক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি দেশের সাথে সমন্বিত ধ্বংসের হুমকি দিতে সক্ষম। তারা যেমন তেল আবিব বিমানবন্দরকে আক্রমণ করতে পারে, তেমনি ইসরাইলও বৈরুত বিমানবন্দর ধ্বংসের হুমকি দিতে পারে।
বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একা কাজ করা সম্ভব নয়। আমাদের দরকার অনেক মিত্র এবং শক্তিশালী জোট। তাই আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের “আমেরিকা একা” নীতির চেয়ে “আমেরিকা এবং বন্ধুরা” নীতি আরও কার্যকর হতে পারে।
জো বাইডেনের প্রশাসন বিভিন্ন জোট তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। এশিয়া-প্যাসিফিকে চীনের বিরুদ্ধে, ইউরোপে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ঠেকাতে তারা জোটবদ্ধ হয়েছে। এসব জোটের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন সাফল্য পেয়েছে।
আগামী বিশ্বে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিশ্বব্যাপী এই জোটগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং প্রতিকূল শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা।এটি এমন একটি কাজ যা সহজ হবে না। রাশিয়া, ইরান এবং চীন দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে, এবং আমরা এখন যে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, তার জন্য সামরিকভাবে প্রস্তুত নই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, একসাথে তিনটি ফ্রন্টে লড়াই করার মতো অস্ত্র আমাদের কাছে নেই। তাই সমাধান একটিই: আমাদের মিত্রদের শক্তি যুক্ত করে এগিয়ে যাওয়া। এটি ছিল আমাদের বিশ্বযুদ্ধ এবং ঠান্ডা যুদ্ধে জয়ের মূলমন্ত্র।
ইতিহাসবিদ মাইকেল ম্যান্ডেলবামও এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তার মতে, “মিত্রদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা সহজ নয়, কিন্তু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চার্চিল এবং রুজভেল্টের মতো মহান নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে একা তাদের দেশগুলো এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না।
তাই মিত্রতা তাদের জন্য ছিল অপরিহার্য।” একইভাবে, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্যও মিত্রদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
কিন্তু শুধু মিত্রতার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। একটি শক্তিশালী নেতা তার দেশের জনগণের কাছে ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানাতেও প্রস্তুত থাকতে হবে। চার্চিল এবং রুজভেল্টের মতো নেতারা তাদের দেশের জনগণকে সঠিক, সৎ এবং স্পষ্টভাবে বিপদের কথা জানিয়ে ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা তাদের নেতৃত্বকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটি অন্যরকম। তিনি সবসময়ই সরাসরি তার মতামত জানিয়ে দিয়েছেন, যদিও সেগুলো বিতর্কিত। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হবে কিনা, তা তার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিসকে তার নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে হবে, বিশেষ করে যেসব চ্যালেঞ্জগুলো তিনি সামনে পাবেন সেগুলোর সমাধানে। আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য জটিল এই বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ।
Leave a Reply