শশাঙ্ক মণ্ডল
শিল্প-বাণিজ্য
তৃতীয় অধ্যায়
কার্পাসের চাষ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই-বিলাতি সুতার প্রচলন ঘটে গেছে। আমাদের দেশে মোহিনী মিল, দিশারী কটন মিলের মোটা সুতা তাঁতিরা ব্যবহার করত। আড়তদার পাইকাররা তাঁতিদের অগ্রিম সুতা দাদন দিত। তাঁতিরা কাপড় বুনে মহাজনকে কাপড় দিলে তবেই তাঁতিরা মজুরি পেত। ১৯১০-১১ খ্রীষ্টাব্দে একসের চালের দাম ছিল দুই আনা। এ সময়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। ফলে তাঁতিদের জীবনযাত্রা কঠোর হয়ে পড়ে। দৈনিক খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতেই তাদের মজুরি ব্যয়িত হত। উদ্বৃত্ত সম্পদ বলতে থাকত না। (১০) ২৪ পরগনার জেলা গেজেটিয়রে এ সময়ে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরির হিসাব লক্ষ করা যাচ্ছে নিম্নরূপ-
১৯২০-৩০ এর দশকে ভাঙর, হাড়োয়া এলাকার গামছার মজুরি হিসাবে তাঁতিরা একজোড়া গামছার জন্য মজুরি হিসাবে তিন আনা পেত তখন একজন সাধারণ মজুর চাষের কাজে ৬ আনা মজুরি পেত।
একজন তাঁতি বাড়ির মেয়েদের সাহায্য নিয়ে সপ্তাহে ১৫/১৬ জোড়া গামছা তৈরি করতে পারত। তার ফলে সপ্তাহে মজুরি হিসাবে একটা তাঁতিপরিবার একখানা তাঁতে ৩ টাকার বেশি পেত না। সাধারণ তাঁতিদের আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ হয়ে দাঁড়ায়। বরিশালের গৌরনদী, খুলনার বিভিন্ন এলাকায় তাঁতিদের একই করুণ চিত্র সেদিন লক্ষ করা গেছে। তাঁতিদের দুরবস্থা নিয়ে সে যুগে বিভিন্ন পত্রিকায় দু-একটা সংবাদও লক্ষ করা যাচ্ছে। স্বদেশি আন্দোলন যতটা আলোড়ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছিল বাস্তবে কার্পাস শিল্পের ক্ষেত্রে ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তাঁতবস্ত্রের চাহিদা সৃষ্টিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারেনি গরিব কৃষিজীবী মানুষরা যতটুকু পরিধেয় সংগ্রহ করতে পেরেছে তা সস্তার বিলাতি কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল থেকেছে। পরবর্তীকালে মোহিনী মিলস্, বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলস্ এবং স্বদেশি অন্যান্য মিলের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে; প্রকৃতপক্ষে তাঁত শিল্পের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ ভাগেও তেমন অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তের তাঁতি অধ্যুষিত এলাকার মানুষরা বেশি বেশি করে তাদের শিল্পের জগৎ থেকে নির্বাসিত হয়ে অন্য পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। (১৬)