০৩:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • 18

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই সমস্ত মন্দিরের চারিপাশে রাজবাটী ছিল। রাজবাটীর দক্ষিণ- দিকের পরিখার চিহ্ন অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। এই পরিখার সহিত একটি ক্ষুদ্র খালের সংযোগ ছিল বলিয়া কথিত আছে। এই পরিখা ও সেই খাল দিয়া প্রতিরাত্রি তরণী আরোহণে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনার্থ কিরীটেশ্বরী গমন করিতেন। ভবানীশ্বর ও গোপালমন্দিরেরু উত্তরদিকে রাজবাটীর চিহ্ন অস্থাপি বিঘ্নমান রহিয়াছে।
তাহার অধি- কাংশই ভগ্নস্তূপে পরিণত; কিয়দংশ সংস্কৃত করিয়া বড়নগরের বর্তমান কুমার বাস করিতেছেন। তাহার মধ্যে একটি পূর্ব্বদ্বারী ঘরের নীচের তলায় রাণী ভবানী বাস করিতেন। সেই পবিত্র গৃহ বিঘ্নমান থাকিয়া আজিও রাজসংসারের পবিত্রতা রক্ষা করিতেছে। গৃহের বারাণ্ডায় একটি ফোয়ারার হ্রদ আছে। এই বর্তমান রাজবাটীর দক্ষিণে দেওয়ানখানা। তাহার দক্ষিণে রাণী ভবানীর ব্রাহ্মণভোজনের বাটী ছিল; তথায় তিনি স্বহস্তে ব্রহ্মণভোজন করাইতেন।
বর্তমান রাজবাটা হইতে কিছুদূরে উত্তর দিকে অষ্টভুজ গণেশের মন্দির। ইনিই বড়নগরের গ্রাম্যদেবতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। ইহার মূর্তিটি অতীব রমণীয়। গণেশের মূর্ত্তি পাষাণমন্ত্রী। মন্দিরমধ্যে একটি ক্ষুদ্র কালীমূত্তি আছেন।’ প্রবাদ আছে উভয়েই ভাগীরথী হইতে উত্থিত হইয়া- ছিলেন। মন্দিরের বারাণ্ডায় হলহলি কলকলি নামে দুইখণ্ড সিনুরলেপিত প্রস্তরখণ্ড আছে। অ্যাপি পীড়াশান্তির জন্য মুর্শিদাবাদের অনেক স্থান হইতে লোকজন সমাগত হইয়া হলহলি কলকলির পূজা দিয়া থাকে।।
গণেশের মন্দির হইতে উত্তরদিকে মঠবাটা। মঠবাটীর ঠাকুরেরা রাণী ভবানীর গুরুবংশ বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটীতে এক যোড়বাঙ্গলা আছে; তাহারও ইষ্টকে শিল্পকার্য্যের পরিচয় দেওয়া যায়। যোড়বাঙ্গলায় তিনটি শিব বিরাজিত আছেন, তাঁহারাও রাণী ভবানীর প্রতিষ্ঠিত। ইহার নিকটে কস্তুরীশ্বর শিব; তিনি রাণী ভবানীর মাতার স্থাপিত বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটীতে একটি প্রকাণ্ড তোরণদ্বার আপনার বিশাল মস্তক উত্তোলন করিয়া অদ্যাপি ভাগীরথীতীরে অবস্থিত আছে।
মঠবাটীর উত্তরে দয়াময়ীবাটী। দয়াময়ী পাষাণময়ী কালীমূর্তি। একটি উচ্চ বেদীর উপর তিনি অবস্থিত। তাঁহার মনোহারিণীমূর্ত্তি দশন করিলে, পাষাণেরও মনে ভক্তির উদয় হইয়া থাকে। পূর্ণানন্দ ও ব্রহ্মানন্দ নামে রাজা রামকৃষ্ণের পরমমিত্র দুইজন সন্ন্যাসীর কথা শুনা যায়। দয়াময়ী ব্রহ্মানন্দের স্থাপিত বলিয়া কথিত। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, পুষ্করিণীখননের সময় তিনি উত্থিতা হইয়াছিলেন। দয়াময়ী-মন্দিরটি -সংস্কৃত করিয়া অধিকতর রমণীয় করা হইয়াছে। মঠবাটীর ঠাকুর তারিণীশঙ্কর ইহার সংস্কার করিয়াছেন।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭৭)

১১:০০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই সমস্ত মন্দিরের চারিপাশে রাজবাটী ছিল। রাজবাটীর দক্ষিণ- দিকের পরিখার চিহ্ন অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। এই পরিখার সহিত একটি ক্ষুদ্র খালের সংযোগ ছিল বলিয়া কথিত আছে। এই পরিখা ও সেই খাল দিয়া প্রতিরাত্রি তরণী আরোহণে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনার্থ কিরীটেশ্বরী গমন করিতেন। ভবানীশ্বর ও গোপালমন্দিরেরু উত্তরদিকে রাজবাটীর চিহ্ন অস্থাপি বিঘ্নমান রহিয়াছে।
তাহার অধি- কাংশই ভগ্নস্তূপে পরিণত; কিয়দংশ সংস্কৃত করিয়া বড়নগরের বর্তমান কুমার বাস করিতেছেন। তাহার মধ্যে একটি পূর্ব্বদ্বারী ঘরের নীচের তলায় রাণী ভবানী বাস করিতেন। সেই পবিত্র গৃহ বিঘ্নমান থাকিয়া আজিও রাজসংসারের পবিত্রতা রক্ষা করিতেছে। গৃহের বারাণ্ডায় একটি ফোয়ারার হ্রদ আছে। এই বর্তমান রাজবাটীর দক্ষিণে দেওয়ানখানা। তাহার দক্ষিণে রাণী ভবানীর ব্রাহ্মণভোজনের বাটী ছিল; তথায় তিনি স্বহস্তে ব্রহ্মণভোজন করাইতেন।
বর্তমান রাজবাটা হইতে কিছুদূরে উত্তর দিকে অষ্টভুজ গণেশের মন্দির। ইনিই বড়নগরের গ্রাম্যদেবতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। ইহার মূর্তিটি অতীব রমণীয়। গণেশের মূর্ত্তি পাষাণমন্ত্রী। মন্দিরমধ্যে একটি ক্ষুদ্র কালীমূত্তি আছেন।’ প্রবাদ আছে উভয়েই ভাগীরথী হইতে উত্থিত হইয়া- ছিলেন। মন্দিরের বারাণ্ডায় হলহলি কলকলি নামে দুইখণ্ড সিনুরলেপিত প্রস্তরখণ্ড আছে। অ্যাপি পীড়াশান্তির জন্য মুর্শিদাবাদের অনেক স্থান হইতে লোকজন সমাগত হইয়া হলহলি কলকলির পূজা দিয়া থাকে।।
গণেশের মন্দির হইতে উত্তরদিকে মঠবাটা। মঠবাটীর ঠাকুরেরা রাণী ভবানীর গুরুবংশ বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটীতে এক যোড়বাঙ্গলা আছে; তাহারও ইষ্টকে শিল্পকার্য্যের পরিচয় দেওয়া যায়। যোড়বাঙ্গলায় তিনটি শিব বিরাজিত আছেন, তাঁহারাও রাণী ভবানীর প্রতিষ্ঠিত। ইহার নিকটে কস্তুরীশ্বর শিব; তিনি রাণী ভবানীর মাতার স্থাপিত বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটীতে একটি প্রকাণ্ড তোরণদ্বার আপনার বিশাল মস্তক উত্তোলন করিয়া অদ্যাপি ভাগীরথীতীরে অবস্থিত আছে।
মঠবাটীর উত্তরে দয়াময়ীবাটী। দয়াময়ী পাষাণময়ী কালীমূর্তি। একটি উচ্চ বেদীর উপর তিনি অবস্থিত। তাঁহার মনোহারিণীমূর্ত্তি দশন করিলে, পাষাণেরও মনে ভক্তির উদয় হইয়া থাকে। পূর্ণানন্দ ও ব্রহ্মানন্দ নামে রাজা রামকৃষ্ণের পরমমিত্র দুইজন সন্ন্যাসীর কথা শুনা যায়। দয়াময়ী ব্রহ্মানন্দের স্থাপিত বলিয়া কথিত। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, পুষ্করিণীখননের সময় তিনি উত্থিতা হইয়াছিলেন। দয়াময়ী-মন্দিরটি -সংস্কৃত করিয়া অধিকতর রমণীয় করা হইয়াছে। মঠবাটীর ঠাকুর তারিণীশঙ্কর ইহার সংস্কার করিয়াছেন।