শ্রী নিখিলনাথ রায়
দয়াময়ীর বাটীর উত্তরে দেওয়ান দয়ারামের স্থাপিত এক গোপালমূর্তি আছেন। এতদ্ভিন্ন বড়- -নগরের অরণ্যমধ্যে অনেক শিবমন্দির দেখিতে পাওয়া যায়। রাজা রামকৃষ্ণ যে শবে বসিয়া সাধন করিতেন, একটি খর্জুরবৃক্ষের তলায় তাহা প্রোথিত আছে বলিয়া বড়নগরের লোকেরা গল্প করিয়া থাকে। বড়নগরের পরপারে সাধকবাগ। তথায় প্রসিদ্ধ মস্তারাম বাবাজীর আখড়া আছে। এই আখড়ায় রথযাত্রা উপলক্ষে ‘মহাসমারোহ হইয়া থাকে। পূর্ব্বে এই উপলক্ষে অত্যধিক ধুমধাম হইত। নানাস্থান হইতে বহুলোকের সমাগম হইয়া ধুমধামের মাত্রা অধিকতররূপে বাড়াইয়া তুলে। আখড়ার রামচন্দ্রদেবই প্রসিদ্ধ।
পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, রাণী ভবানী রাণী জয়মণিকে সমস্ত দেব- সেবার সম্পত্তি দানপত্র দ্বারা অর্পণ করিয়া যান। জয়মণি কুমার দুর্গা- চন্দ্রকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন। দানপত্রের লিখনদোষে দুর্গাচন্দ্রের সহিত নাটোরবংশের মোকদ্দমা উপস্থিত হয়। সেই মোকদ্দমার শেষে দেবসেবার সম্পত্তি তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া এইরূপ নিদ্দিষ্ট হইয়াছে।
নাটোরবংশীয়েরা রাজরাজেশ্বরীর, বড়নগরের কুমার তারার গোপালের ও মঠবাটীর ঠাকুবেরা সমস্ত শিবের সেবক বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছেন। রাজরাজেশ্বরী ও গোপালের সেরার বন্দোবস্ত মন্দ নাই। ক্ষুধার্তব্যক্তি মাত্র উপস্থিত হইলে, রাজরাজেশ্বরীর বাটীতে প্রসাদ পাইয়া থাকে। শিবগুলির প্রতি বিশেষ কোন যত্ন দেখা যায় না। রাজরাজেশ্বরীর সেবার বন্দোবস্ত থাকিলেও তাহা নাটোরবংশের উপযোগী নহে। রাণী ভবানীর স্থাপিত রাজরাজেশ্বরীসেবায় নাটোররাজের বিশেষ যত্ন থাকা আবশ্যক।
যাঁহার পবিত্র নামের জন্য সমস্ত বঙ্গসমাজ তাঁহাদিগকে নতমস্তকে অভিবাদন করিয়া থাকে, সেই রাণী ভবানীর প্রিয় বাসস্থান বড়নগরের দেবসেবার জন্য তাঁহাদিগের যত্নবান হওয়া অবশ্য কর্তব্য। জয়মণির পোষ্যপুত্র দুর্গচিন্দ্রের দত্তকপুত্র প্রসিদ্ধ উমেশচন্দ্র। উমেশচন্দ্রেরূ দত্তকপুত্র কুমার সতীশচন্দ্র এক্ষুণে বড়নগরে অবস্থিতি করিতেছেন। ভগবান্ তাঁহাকে দীর্ঘজীবী করিয়া স্বধর্ম্মে মৃতি প্রদান করুন।