শ্রী নিখিলনাথ রায়
মহারাজ নন্দকুমার
অতীত গৌরবের স্মৃতি জাতীয় জীবনে সঞ্জীবনী শক্তির সঞ্চার করিয়া দেয়। যে জাতির ইতিহাস অতীত গৌরবে পরিপূর্ণ, সহস্র বৎসর ব্যাপিয়া অধঃপতনের বিশ্বগ্রাসকর আবর্ত্তমধ্যে নিপতিত, থাকিলে, তাহারও অভ্যুত্থানের আশা একেবারে বিলয়প্রাপ্ত হয় না। পূর্ব্ব গৌরবের ধ্যান করিতে করিতে তাহার মৃতপ্রায় দেহে এমন এক বৈদ্যুতিক শক্তির আবির্ভাব হয় যে, সেই মহীয়সী শক্তির বলে সে জাতি অধঃপতনের রসাতলস্পর্শী আবর্ত ভেদ করিয়া মস্তক উত্তোলন করে এবং সমস্ত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া জয়োল্লাসে দিগদিগন্তে ধাবিত হয়।
জগতের যে যে জাতির পূর্ব্বমহাত্মগণ মেদিনীমণ্ডলে কীর্ত্তিকিরণ বিকীর্ণ করিয়া গিয়াছেন, অধঃপতিত সে জাতির আশালতা চির– ‘উন্মুলিতা হইবার নহে। কোন না কোন দিন তার্থী ফুলফলে শোভা- শালিনী হইয়া জাতীয় জীবন-শ্মশান হাস্যময় করিয়া ভুলিবে। কিন্তু যে জাতির আদি, মধ্য, অন্ত, সমস্তই অন্ধকারময়, ‘পূর্ব্ব গৌরবের কোন ** নিদর্শন, অনুসন্ধান করিলেও সহজে অবগত হওয়া যায় না, সে জাতি-
কখনও যে উন্নতির উচ্চতম শিখরে আরোহণ করিবে, সেরূপ আশা সুদূরপরাহত। জানি না, বাঙ্গালী জাতির ন্যায় আবহমান কাল হইতে অধঃপতিত এমন জাতি পৃথিবীমধ্যে দ্বিতীয় আছে কি না।
বাঙ্গলার ইতিহাস পাঠে বাঙ্গালী জাতির পূর্ব্বগৌরবের কোন বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না। অবশ্য কোন কোন সময়ে দুই একজন মহাপ্রাণ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু সমস্ত জাতির উপর তাঁহাদের ক্ষমতা দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নাই। ধৰ্ম্ম ও সারস্বত জগৎ ব্যতীত রাজ নৈতিক ক্ষেত্রে এমন কোন মহাপুরুষের প্রতিভার বিকাশ পায় নাই যে, তিনি সমস্ত জাতীয়-জীবনে মহাশক্তির সঞ্চার করিতে পারিয়াছেন।