শ্রী নিখিলনাথ রায়
দুই চারি জন উচ্ছৃঙ্খল ভৌমিকের কাহিনী ভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রের গৌরব করিবার বাঙ্গালীর পক্ষে আর কিছুই নাই। ধৰ্ম্ম ও সারস্বত জগতেও যাঁহারা অলৌকিক ব্যাপার সংঘটিত করিয়াছেন, তাঁহাদের সংখ্যাও এত অল্প যে, একটি বিশাল জাতির পক্ষে তাহাও তাদৃশ অধিক নয় বলিয়াই বোধ হয়। তথাপি সমগ্র জাতির মধ্যে তাঁহাদের ক্ষমতা যতদূর কার্য্যকারী হইয়াছে, তাহাতে তাঁহাদের বিষয় লইয়া কিয়ৎপরিমাণে গৌরব করা যাইতে পারে। ফলতঃ বাঙ্গালী জাতির গৌরবের এমন কিছুই নাই, যাহার ধ্যানে তাহার জীবনশক্তির সঞ্চার হইতে পারে।
রাজনীতির বিশাল ক্ষেত্র তাহার পক্ষে চিরমরুভূমি। সেই মরুভূমিতে এক্ মহান্- বৃক্ষের বীজ উপ্ত হইয়াছিল, কিন্তু তাহাও শাখাপ্রশাখাসমন্বিত হইয়া আশাজনক ফলোৎপাদন করিতে পারে নাই, অধিকন্তু পরিণামে মহা- -ঝাটকাঘাতে সমূলে উৎপাটিত হইয়া যায়। যে প্রকাণ্ড পুরুষ আপনার রাজনৈতিক প্রতিভা প্রকাশ করিয়া ইংরেজ জাতির চক্ষুঃশূল হইয়াছিলেন, আমরা সেই মহারাজ নন্দকুমারেরই কথা বলিতেছি। মহারাজ নন্দকুমারের যেরূপ প্রতিভা ছিল, তাহার পূর্ণ বিকাশ হইলে, বাঙ্গালী জাতির গৌরব করিবার একটা বিষয় হইত।
কিন্তু দুঃখের কথা, যে প্রতিভার সর্ব্বাঙ্গীণ বিকাশ হইতে পারে নাই। ইংরেজের কূটনীতিতে তাহাকে এরূপ ভাবে আচ্ছাদিত করিয়াছিল যে, তাহা ভেদ করিয়া সে প্রতিভার কিরণলহরী পরিস্ফুট হইতে পারে নাই এবং সময়ে সময়ে তাহা বিপথে ছুটিয়া অধিকতর হীনবল হইয়াও পড়িয়াছিল। অষ্টা- দশ শতাব্দীর। রাজনৈতিক বিপ্লব বাঙ্গলার ইতিহাসের একটি প্রধান- স্মরণীয় ঘটনা।
সেই ঘটনার আদি হইতে অন্ত পর্য্যন্ত সকল সময়ে মহারাজ নন্দকুমারের প্রতিভা অল্পবিস্তর প্রকাশ পাইয়াছিল। সেই মহাবিপ্লব-সাগরে মহারাজ নন্দকুমারের বুদ্ধি-তরণী যদি প্রথম হইতে বরাবরই স্থিরভাবে একই উদ্দেশ্যে চালিত হইবার সুযোগ পাইত, তাহা হইলে, আমরা বাঙ্গলা রাজ্যের অন্তবিধ অবস্থা দেখিতে পাইতাম। কিন্তু সে বিপ্লবে তাহা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হওয়ায়, তাঁহার সমুদায় শক্তি হতবল হইয়াছিল; তন্নিবন্ধন, বাঙ্গালী জাতীয় জীবনের আশা চির-উন্ম লিত ‘করিয়াছে। মহারাজ নন্দকুমারের’ জীবনীসমালোচনা বড়ই কঠিন ব্যাপার।