শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিছুদিন পরে ওমার উল্লার পদচ্যুতি ঘটে। তখন নবাব সিরাজ উদ্দৌলা নন্দকুমারকে সর্ব্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করিয়া এবং তাঁহার বুদ্ধিমত্তা ও কার্য্যদক্ষতা বিশেষরূপে অবগত থাকায়, তাঁহাকেই হুগলীর ফৌজদার নিযুক্ত করিয়াছিলেন।
সেই সময়ে কর্ণেল ফ্লাইব ফরাসীদিগের নিকট হইতে চন্দননগরু অধিকার করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। চন্দননগর অধিকার করিতে গেলে, নবাবের রাজ্যের মধ্যে অনেক উৎপাত করিতে হয়। যদিও ১৭৫৭ খৃঃ অব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারী ইংরেজদিগের সহিত নবাবের যে সন্ধি স্থাপিত হয় এবং তদনুসারে ইংরেজেরা নবারের রাজ্যে কোন রূপ গোলযোগ করিবেন না বলিয়া প্রতিশ্রুত হন, তথাপি তাঁহারা সে প্রতিজ্ঞা ক্রমে ভঙ্গ করিতে আরম্ভ করেন।
নবাব তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, এজন্ত তিনি ইংরেজদিগকে চন্দননগর আক্রমণ করিতে নিষেধ করিয়া রাজা দুর্লভরামের অধীন একদল সৈন্ত হুগলীতে পাঠাইয়া দিলেন, এবং প্রয়োজন হইলে, ফরাসীদিগের সাহায্যার্থ নন্দকুমারকে চেষ্টা করিতে লিখিয়া পাঠাইলেন। ইংরেজেরা দেখিলেন যে, বিষম অনর্থ উপস্থিত; এই সময়ে যদি নবাবসৈন্য হুগলীতে আসিয়া উপস্থিত হয়, এবং নন্দকুমারের ন্যায় চতুর ফৌজদার যদি ইংরেজদিগের কৌশল বুঝিতে পারেন, আর তিনি ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হন, তাহা হইলে চন্দননগর আক্রমণ করা দুরূহ হইবে।
এই জন্য তলে তলে তাঁহারা আমীরচাঁদকে (উমিচাঁদ) দিয়া নন্দকুমারকে হস্তগত করিতে চেষ্টা করিলেন। আমীরচাঁদ হুগলীতে উপস্থিত হইয়া নন্দ- কুমারকে ইংরেজদিগের বলবীর্য্যের কথা জানাইয়া তাঁহাদের সহিত বন্ধুত্বস্থাপনের জন্য, তাঁহাকে অনুরোধ করিলেন। তিনি নন্দকুমারকে জানাইলেন যে, জগৎশেঠ প্রভৃতি যাবতীয় প্রধান কৰ্ম্মচারী ইংরেজ- দিগের সহায়তা করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছেন। যে পক্ষে জগৎশেঠ, সে পক্ষের জয় অবশ্যম্ভাবী এবং সিরাজের প্রত্যেক কৰ্ম্মচারী ও দেশের সকলে ইংরেজদিগের সহায়তা করিতে প্রস্তুত; এরূপ ক্ষেত্রে সিরাজের রাজ্যচ্যুতি নিশ্চয়ই ঘটিবে। অতএব আপনার ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য ইংরাজদিগের সহিত বন্ধুত্বস্থাপন করা উচিত।
Sarakhon Report 



















