০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে অনাগত দিনের যুদ্ধ

  • Sarakhon Report
  • ০৯:১৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • 19

স্বদেশ রায়

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টিাকারী বিজয়ীদের একজন। তবে তাঁর দুর্ভাগ্য, তিনি দুই বারই বিজয়ী হয়েছেন দুর্বল প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। দু’বারই তিনি ল্যান্ডস্লাইড বিজয় লাভ করেছেন ঠিকই। কিন্তু প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী এতটাই দুর্বল যে তাঁর প্রকৃত জনপ্রিয়তা বোঝার কোন সুযোগ গোটা বিশ্ব পায়নি।

প্রথমবার তিনি জিতেছিলেন, সে সময়ের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারীর বিরুদ্ধে।হিলারী নির্বাচনে হেরে যাবার পরে তিনি যে প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, সেই বারাক ওবামা বলেছিলেন, হিলারী’র ক্ষেত্রে তাঁর যদি প্রার্থী হবার সুযোগ থাকতো- তাহলে তিনি জিততেন। এমনকি আমেরিকার কিছু মিডিয়া ও এনালিস্ট বলেছিলেন, হিলারির বদলে মিশেল অর্থাৎ মিসেস ওবামা প্রার্থী হলে ওই নির্বাচনে হয়তো মিশেল জিতে যেতেন। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলেছিলেন, আমেরিকানরা এমন একটি জাতি তারা নিজেরা যাই করুক না কেন, তাদের সরকার প্রধানকে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চায়। মনিকা ও ক্লিন্টনের বিষয়ে হিলারীর নিশ্চুপতা এবং ক্লিন্টন ফাউন্ডেশানের ডোনেশানের অস্বচ্ছতা হিলারীকে সে দেশের মানুষের কাছে অস্বচ্ছ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছিলো। তেমনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতি অনেক বেশি যুদ্ধ ও দেশে দেশে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার পক্ষে থাকার কারণেও তিনি সে দেশের একটি রয়েল ফ্যামিলির সন্তান ও বড় এর্টনী হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন।

অন্যদিকে কমলা হারিস শুরু থেকেই আন্ডার ডগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন- সে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া ও দল নিরপেক্ষ মিডিয়া এবং ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের কাছে। তাছাড়া তিনি দলীয় ফোরামে নিজের জনপ্রিয়তার জোরে বিজয়ী কোন প্রার্থী ছিলেন না। তিনি শেষ মুহূর্তে কোনমতে ডেমোক্র্যাটকে নির্বাচনে রাখার জন্যে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া একজন প্রার্থী ছিলেন।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত চার বছর ধরেই তাঁর দলের প্রার্থী। গত চার বছরই তিনি যে কোন ভাবে হোক না কেন নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে ২০২০ এ তার নির্বাচনে হেরে যাওয়াটা অন্তত আমেরিকার বড় একটি শ্রেনীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। যাকে আরো বেশি সত্যতা দিয়েছে গত চার বছরে ডেমোক্র্যাটরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও অহেতুক মামলা দিয়ে -তাকে সব সময় মিডিয়ার একটি বড় চরিত্র হিসেবে রেখে। এমনকি ডেমোক্র্যাটরা তাদের নিজেদের অনেক কাজ বাদ দিয়ে ট্রাম্পের পেছনেই শক্তি ব্যয় করেছেন একটা বড় সময়। সব মিলিয়ে তাকে আরো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে পরিণত হতে ডেমোক্র্যাটরা সাহায্য করেছে।

তারপরে যাই হোক ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুটো দলই সম-শক্তির দল। তাই প্রার্থী সেখানে যিনি থাকুন না কেন, দল তাকে স্বাভাবিকই অনেক বেশি শক্তি দেয়। এ কারণে ট্রাম্পের এই দুই বারের ল্যান্ডস্লাইড বিজয়কে কম গুরুত্ব দেবার সুযোগও কাগজে কলমে খুব বেশি থাকে না।

তাছাড়া ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে এলেও ট্রাম্পকে সফল মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে। কারণ ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সফল। আর পৃথিবীতে বহু কপো‍র্রেট ব্যক্তি যেমন রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হয়েছেন তেমনি পপুলিস্ট রাজনীতিবিদও হয়েছেন। পপুলিস্ট রাজনীতির দুটো অর্থ করা যায়। এক,  জনগণতান্ত্রিক। দুই, জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাসানো। বর্তমানে পপুলিস্ট অর্থে শেষেরটা ধরা হচ্ছে। কিন্তু পপুলিস্ট রাজনীতিকে অনেকে অনেক বেশি জনকল্যানের কর্মসূচী মূলক অর্থাৎ বেশি সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ারের পক্ষেও মনে করতেন এক সময়ে। বর্তমানে এর গতি ভিন্ন দিকে গেছে। কিন্তু যে অর্থেই হোক না কেন, আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কতটা পপুলিস্ট বলা ঠিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, তার যে নিজস্ব অর্থনৈতিক চিন্তা ও “আমেরিকা গ্রেট”  স্লোগান এই দুই এর এক ধরনের বাস্তবতা সে দেশের মানুষ ও বর্তমানের প্রাকটিকাল অর্থনীতিবিদরা মেনে নিয়েছেন শুধু নয়, অনেকে সেটাকে সঠিক পথ মনে করেন।

 

ট্রাম্পের প্রথম চার বছরের শাসনামলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রগম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসে তাঁর নিয়মিত কলামে কখনও ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকার করেননি। বরং তিনি বার বার বলেছেন, তিনি তাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানেন না। ট্রাম্প তা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কখনও মানহানির মামলাও করেননি- এমনকি কোন প্রতিবাদও করা হয়নি তার পক্ষ থেকে। সাধারণত বর্তমানে যাদেরকে পপুলিস্ট বলা হয় তারা একটু স্বৈরতন্ত্রী ও কম ভিন্নমত সহনশীল হয়। কিন্তু ট্রাম্পের এই আচরণে প্রমান করে তিনি ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল- তাই সে মত তাঁর প্রতি যত কঠোর হোক না কেন। আর যিনি ভিন্নমতকে অবাধ স্বাধীনতা দেন তিনি আর যাই হোক স্বৈরতন্ত্রী নন। এবারও নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপরীতে কমলার পক্ষে সি এন এন, সি বি সি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট সরাসরি অবস্থান নিয়েছিলো। ট্রাম্প তার নির্বাচনের বিজয়ী ভাষনে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং তাদের সঙ্গে দেখা করবেনও বলেছেন। শুধু এ নয় তিনি বলেছেন, বিরোধীদের প্রতি এক মুহূর্তে বৈরি আচরণ বা প্রতিহিংসার পথে গিয়ে তিনি তাঁর মূল কাজের ক্ষতি বা রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষতি করবেন না।

কিন্তু এর পরে্ও কি ট্রাম্প তার আগামী চার বছরে যতই তার কর্মসূচী যেগুলো তিনি বলেছেন অর্থাৎ, অর্থনৈতিক উন্নতি, অবৈধ অভিবাসন দূর করে- বৈধ অভিবাসন দেয়া ও  জনগনের জন্যে যে কর্মসূচী তিনি দিয়েছেন সেগুলো এবং নতুন নতুন কর্মসূচী বা প্রমিজ করা ও সেগুলো বা্স্তবায়ন করা- অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা বা তার গতি  কমিয়ে আনা, মিডল ইস্ট যুদ্ধের সমাধানের দিকে যাওয়া – এ গুলো যদি তিনি করা শুরু করেন বা কিছুটা সাকসেসফুল হন- তারপরেও কি তিনি সমালোচনার বাইরে থাকবেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কিছু রাজনীতিক বা রাষ্ট্র নায়ক পৃথিবীতে থাকেন, যারা করপোরেট স্টাইলে এ মুহূর্তে রাষ্ট্র চালান। কারণ, তারা মনে করেন,  এ মুহূর্তে পৃথিবীতে সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের থেকে কর্পোরেট অনেক বেশি আধুনিক ও বাস্তব সম্মত, ইনোভেটিভ এবং কার্যকর । তাই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কর্পোরেট ক্যারেকটারের অনেক কিছু যোগ করার আছে।

তাদের এ চিন্তা ধারা ট্রাডিশনাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ও আইডিয়াল গণতান্ত্রিক হিসেবে যারা পরিচিত তাদের চিন্তা বা থিওরির সঙ্গে মেলে না। এরা অধিকাংশই শিক্ষক এবং গবেষক। সমাজে তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি, তারা অনেক বেশি সম্মানও পান- তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তাদের অবদান খুবই কম বা নেই বললে চলে। তারপরেও তারা রাষ্ট্রের অনেক বড় শক্তি। কারণ, তারা সিভিল সোসাইটির অংশ। তাই ট্রাম্পের গত আমলেও যেমন তাকে , How democracy die, Democracy in peril, Narrow corridor, এ ধরনের বই বা গবেষণার আঘাত তাকে সহ্য করতে হয়।  ট্রাম্প তার গত টার্মের চার বছরে এমন শত শত আঘাত সহ্য করেছিলেন। এবং তাদের মতামতে কোনরূপ বাধা দেননি। যার ফলে আইডেলস্টিক ডেমোক্রেসির থিওরিটিক্যাল চর্চাটা তার আমলে ডেমোক্র্যাটদের আমল থেকে তুলনামূলক বেশি হয়েছিলো। যেহেতু এই আদর্শবাদীরা অনেকেই ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মুগ্ধ। তাই তারা সিরিয়ার সভ্যতা ধ্বংসকারী ও লিবিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসকারী ওবামাকে শুধু নোবেল পুরস্কার দেন না- তাকে এখনো অনেকটা পুঁজো করেন। এমনকি হিলারি পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন করে যে অর্থনৈতিক ও ভিন্ন ধরনের একটি কোল্ড ওয়ার আনলেন, যা এখনো ডেমোক্র্যাটরা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে পৃথিবীতে নতুন আরেক ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে- তা নিয়ে আদর্শবাদীদের এতটা কঠোর গবেষণা নেই। এমনকি লিবিয়া, সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান অবধি ডেমোক্র্যাটরা যে যুদ্ধবাজ রিপাবলিকান বুশের মতোই শুধু যুদ্ধ আর ধ্বংস নয়, দেশগুলোকে মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিলো- তা নিয়েও এই সিভিল সোসাইটির গবেষণার আঘাত কম। সাংবাদিক ক্রিস্টিনা ল্যাম্বের, “ আওয়ার বডি দেয়ার ব্যটল ফিল্ড” বা ফেরার ওয়েল কাবুলে ক্রিস্টিনা মৌলবাদীদের হাতে আমেরিকা কীভাবে দেশগুলোকে তুলে দিয়েছে এবং সেখানে নারীর শরীর কত সহজ ও অনিরাপদ হয়েছে- তা বাংলাদেশের মানুষও তার ইতিহাসের বিভিন্ন পাতার সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে পারবে সেই সব বাস্তবতার নির্মমতা।

জো বাইডেন এর আকস্মিক নীতি না গণতান্ত্রিক নীতি বা  কোন নীতির ফলে যে আফগানিস্তানে অন্ধকার যুগ নেমে এলো আবার- এ নিয়ে আমেরিকার ওই সিভিল সোসাইটির গবেষণার আগ্রহ কম।হয়তো দক্ষিণ এশিয়ার এই দরিদ্র জাতিগোষ্টি তাদের কাছে গিনিপিগের থেকে বড় কিছু নয়। তারপরে আমাদের মতো অনেকের যাদের সে দেশের মধ্যবিত্ত বন্ধুবান্ধব গোপন পথে দেশ ছাড়া হয়েছে। যারা পালিয়ে একের পর এক প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় নিয়েছে- তাদের জীবন দেখেই বোঝা যায়- মৌলবাদের অধীনে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কত অসহায়। ট্রাম্প আফগানিস্তানের থেকে তার সৈন্য ফেরানোর লক্ষ্যে দোহা আলোচনা শুরু করেছিলেন। তাই আফগানিস্তানের এই মৌলবাদ জো বাইডেনের নীতির কারণে আজ প্রতিষ্ঠিত হলেও তার কিছুটা দায় ট্রাম্পও এড়াতে পারেন না। ট্রাম্প এখন তার আমেরিকা গ্রেট করার জন্যে অনেকগুলো যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলছেন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করার আগে শুধু নয়, আমেরিকা গ্রেট নীতিকে বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে মৌলবাদ বিরোধী যুদ্ধে থাকতে হবে। কারণ মৌলবাদের কোন সীমানা নেই। আর পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে মৌলবাদ ৯/১১ ঘটাতে পারে। পাশাপাশি তার নিজ দেশের মতো গোটা পৃথিবীতে রয়েছে নানান ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। যারা সব সবই একটি ভালনারেবল গোষ্টি। পৃথিবীর বড় শক্তিগুলো যদি তাদের প্রতি যত্নশীল ও দ্বায়িত্ববান না হয় তাহলে মানবতা ভেঙ্গে পড়ে। মানবতার স্থিতিস্থাপকতার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে জড়িত।

ট্রাম্প তাঁর আমেরিকা গ্রেট নীতিতে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। যার সব থেকে বড় বিষয় হলো এশিয়ান দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে তিনি ১০ থেকে ৬০ পারস্টেন্ট পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করবেন। এর ফলে চায়না, ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম সকলেই রফতানি নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। এবং ট্রাম্প এর বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের  ক্রিপ্টো কারেন্সি ও শেয়ার বাজার উর্ধমূখী হয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী ফল যখন উর্ধমূখী তখনই সিঙ্গপুরের ডলারের বিপরীতে আমেরিকার ডলারের মূল্য বেড়ে যায়।

বাস্তবে গত কিছুদিন যাবত আমেরিকান ডলার, গোল্ড এবং এশিয়ান কারেন্সি এই তিনের একটি যুদ্ধ শুরু হবার যে যাত্রাটি আরাম্ভ হতে যাচ্ছিলো- সেটা বেশি কঠিন যুদ্ধে পড়ে যাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। দ্রুত গোল্ড ও এশিয়ান মুদ্রার অবস্থান করে নেবার বিষয়টি একটু কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে এশিয়ার প্রতি এই ট্যারিফ আরোপ করলেও ট্রাম্পকে শেষ অবধি ভিন্ন ভিন্ন এশিয়ান দেশের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তিতে যেতে হতে পারে। কারণ, তার তো শুধু আমদানী নয় রফতানিও আছে। যেমন ভিয়েতনাম, ভারত, চায়না ও তাইওয়ানকে তিনি সরল রেখায় রাখতে পারবেন কি? এত দূর থেকে সফটওয়ার ও সেমিকন্ডাকটর প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রন করা বেশ কঠিন।

অন্যদিকে স্থলের নরহত্যা বা দেশ ধ্বংসের যুদ্ধের বিপরীতে দাঁড়ালেও যুদ্ধের ধরণ এখন বদলে গেছে।কারণ, অতীতের সকল যুদ্ধ সমুদ্র পথ বেয়ে স্থলে গেছে । এখন যুদ্ধ সমুদ্রে। সাগর বা মহাসাগরের এই যুদ্ধ ও তার ব্যয়, কৌশল ও স্ট্রাটেজিক পার্টনার এবং সমঝোতা সব মিলে পৃথিবী সাগর ও মহাসাগরকে নিয়ে আরেক জটিল পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে।

 

এই যুদ্ধ যেমন নতুন। তেমনি এই নতুন যুদ্ধের পৃথিবীর টেকনোলজি শুধু নতুন নয়, অনাগত। আর এখন অনাগত দিন বলতে সেই বারো বছরের যুগ নয় -এখন যুগ চেঞ্জ হয় ছয় মাসের ও কম সময়ে। এই টেকনোলজি শুধু যে দ্রুত আরেকটা নতুন পৃথিবী দেবে তা নয়, বর্তমানের সকল রাজনীতির চরিত্রও বদলে দেবে। অতীতের অভিজ্ঞতা ও সফলতা নিয়ে অনাগত এক টেকনোলজি ও নতুন সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীতে- এ মুহূর্তের পৃথিবীতে সব থেকে বেশি বয়সের একজন রাষ্ট্রনায়ক যাকে তার দেশের অধিকাংশ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে- তিনি তার আগামী দিনকে কোথায় নিয়ে যাবেন, এ একটি অনেক বড় প্রশ্ন। কারণ, তাকে ঘিরে যেমন শংঙ্কা আছে, তেমনি ছোট বড় অনেক দেশের আশাও তাকে ঘিরে। আর সেটা ন্যাটো ভুক্ত দেশ থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষের।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.   

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে অনাগত দিনের যুদ্ধ

০৯:১৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

স্বদেশ রায়

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টিাকারী বিজয়ীদের একজন। তবে তাঁর দুর্ভাগ্য, তিনি দুই বারই বিজয়ী হয়েছেন দুর্বল প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। দু’বারই তিনি ল্যান্ডস্লাইড বিজয় লাভ করেছেন ঠিকই। কিন্তু প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী এতটাই দুর্বল যে তাঁর প্রকৃত জনপ্রিয়তা বোঝার কোন সুযোগ গোটা বিশ্ব পায়নি।

প্রথমবার তিনি জিতেছিলেন, সে সময়ের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারীর বিরুদ্ধে।হিলারী নির্বাচনে হেরে যাবার পরে তিনি যে প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, সেই বারাক ওবামা বলেছিলেন, হিলারী’র ক্ষেত্রে তাঁর যদি প্রার্থী হবার সুযোগ থাকতো- তাহলে তিনি জিততেন। এমনকি আমেরিকার কিছু মিডিয়া ও এনালিস্ট বলেছিলেন, হিলারির বদলে মিশেল অর্থাৎ মিসেস ওবামা প্রার্থী হলে ওই নির্বাচনে হয়তো মিশেল জিতে যেতেন। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলেছিলেন, আমেরিকানরা এমন একটি জাতি তারা নিজেরা যাই করুক না কেন, তাদের সরকার প্রধানকে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চায়। মনিকা ও ক্লিন্টনের বিষয়ে হিলারীর নিশ্চুপতা এবং ক্লিন্টন ফাউন্ডেশানের ডোনেশানের অস্বচ্ছতা হিলারীকে সে দেশের মানুষের কাছে অস্বচ্ছ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছিলো। তেমনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতি অনেক বেশি যুদ্ধ ও দেশে দেশে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার পক্ষে থাকার কারণেও তিনি সে দেশের একটি রয়েল ফ্যামিলির সন্তান ও বড় এর্টনী হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন।

অন্যদিকে কমলা হারিস শুরু থেকেই আন্ডার ডগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন- সে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া ও দল নিরপেক্ষ মিডিয়া এবং ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের কাছে। তাছাড়া তিনি দলীয় ফোরামে নিজের জনপ্রিয়তার জোরে বিজয়ী কোন প্রার্থী ছিলেন না। তিনি শেষ মুহূর্তে কোনমতে ডেমোক্র্যাটকে নির্বাচনে রাখার জন্যে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া একজন প্রার্থী ছিলেন।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত চার বছর ধরেই তাঁর দলের প্রার্থী। গত চার বছরই তিনি যে কোন ভাবে হোক না কেন নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে ২০২০ এ তার নির্বাচনে হেরে যাওয়াটা অন্তত আমেরিকার বড় একটি শ্রেনীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। যাকে আরো বেশি সত্যতা দিয়েছে গত চার বছরে ডেমোক্র্যাটরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও অহেতুক মামলা দিয়ে -তাকে সব সময় মিডিয়ার একটি বড় চরিত্র হিসেবে রেখে। এমনকি ডেমোক্র্যাটরা তাদের নিজেদের অনেক কাজ বাদ দিয়ে ট্রাম্পের পেছনেই শক্তি ব্যয় করেছেন একটা বড় সময়। সব মিলিয়ে তাকে আরো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে পরিণত হতে ডেমোক্র্যাটরা সাহায্য করেছে।

তারপরে যাই হোক ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুটো দলই সম-শক্তির দল। তাই প্রার্থী সেখানে যিনি থাকুন না কেন, দল তাকে স্বাভাবিকই অনেক বেশি শক্তি দেয়। এ কারণে ট্রাম্পের এই দুই বারের ল্যান্ডস্লাইড বিজয়কে কম গুরুত্ব দেবার সুযোগও কাগজে কলমে খুব বেশি থাকে না।

তাছাড়া ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে এলেও ট্রাম্পকে সফল মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে। কারণ ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সফল। আর পৃথিবীতে বহু কপো‍র্রেট ব্যক্তি যেমন রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হয়েছেন তেমনি পপুলিস্ট রাজনীতিবিদও হয়েছেন। পপুলিস্ট রাজনীতির দুটো অর্থ করা যায়। এক,  জনগণতান্ত্রিক। দুই, জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাসানো। বর্তমানে পপুলিস্ট অর্থে শেষেরটা ধরা হচ্ছে। কিন্তু পপুলিস্ট রাজনীতিকে অনেকে অনেক বেশি জনকল্যানের কর্মসূচী মূলক অর্থাৎ বেশি সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ারের পক্ষেও মনে করতেন এক সময়ে। বর্তমানে এর গতি ভিন্ন দিকে গেছে। কিন্তু যে অর্থেই হোক না কেন, আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কতটা পপুলিস্ট বলা ঠিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, তার যে নিজস্ব অর্থনৈতিক চিন্তা ও “আমেরিকা গ্রেট”  স্লোগান এই দুই এর এক ধরনের বাস্তবতা সে দেশের মানুষ ও বর্তমানের প্রাকটিকাল অর্থনীতিবিদরা মেনে নিয়েছেন শুধু নয়, অনেকে সেটাকে সঠিক পথ মনে করেন।

 

ট্রাম্পের প্রথম চার বছরের শাসনামলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রগম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসে তাঁর নিয়মিত কলামে কখনও ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকার করেননি। বরং তিনি বার বার বলেছেন, তিনি তাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানেন না। ট্রাম্প তা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কখনও মানহানির মামলাও করেননি- এমনকি কোন প্রতিবাদও করা হয়নি তার পক্ষ থেকে। সাধারণত বর্তমানে যাদেরকে পপুলিস্ট বলা হয় তারা একটু স্বৈরতন্ত্রী ও কম ভিন্নমত সহনশীল হয়। কিন্তু ট্রাম্পের এই আচরণে প্রমান করে তিনি ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল- তাই সে মত তাঁর প্রতি যত কঠোর হোক না কেন। আর যিনি ভিন্নমতকে অবাধ স্বাধীনতা দেন তিনি আর যাই হোক স্বৈরতন্ত্রী নন। এবারও নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপরীতে কমলার পক্ষে সি এন এন, সি বি সি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট সরাসরি অবস্থান নিয়েছিলো। ট্রাম্প তার নির্বাচনের বিজয়ী ভাষনে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং তাদের সঙ্গে দেখা করবেনও বলেছেন। শুধু এ নয় তিনি বলেছেন, বিরোধীদের প্রতি এক মুহূর্তে বৈরি আচরণ বা প্রতিহিংসার পথে গিয়ে তিনি তাঁর মূল কাজের ক্ষতি বা রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষতি করবেন না।

কিন্তু এর পরে্ও কি ট্রাম্প তার আগামী চার বছরে যতই তার কর্মসূচী যেগুলো তিনি বলেছেন অর্থাৎ, অর্থনৈতিক উন্নতি, অবৈধ অভিবাসন দূর করে- বৈধ অভিবাসন দেয়া ও  জনগনের জন্যে যে কর্মসূচী তিনি দিয়েছেন সেগুলো এবং নতুন নতুন কর্মসূচী বা প্রমিজ করা ও সেগুলো বা্স্তবায়ন করা- অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা বা তার গতি  কমিয়ে আনা, মিডল ইস্ট যুদ্ধের সমাধানের দিকে যাওয়া – এ গুলো যদি তিনি করা শুরু করেন বা কিছুটা সাকসেসফুল হন- তারপরেও কি তিনি সমালোচনার বাইরে থাকবেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কিছু রাজনীতিক বা রাষ্ট্র নায়ক পৃথিবীতে থাকেন, যারা করপোরেট স্টাইলে এ মুহূর্তে রাষ্ট্র চালান। কারণ, তারা মনে করেন,  এ মুহূর্তে পৃথিবীতে সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের থেকে কর্পোরেট অনেক বেশি আধুনিক ও বাস্তব সম্মত, ইনোভেটিভ এবং কার্যকর । তাই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কর্পোরেট ক্যারেকটারের অনেক কিছু যোগ করার আছে।

তাদের এ চিন্তা ধারা ট্রাডিশনাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ও আইডিয়াল গণতান্ত্রিক হিসেবে যারা পরিচিত তাদের চিন্তা বা থিওরির সঙ্গে মেলে না। এরা অধিকাংশই শিক্ষক এবং গবেষক। সমাজে তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি, তারা অনেক বেশি সম্মানও পান- তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তাদের অবদান খুবই কম বা নেই বললে চলে। তারপরেও তারা রাষ্ট্রের অনেক বড় শক্তি। কারণ, তারা সিভিল সোসাইটির অংশ। তাই ট্রাম্পের গত আমলেও যেমন তাকে , How democracy die, Democracy in peril, Narrow corridor, এ ধরনের বই বা গবেষণার আঘাত তাকে সহ্য করতে হয়।  ট্রাম্প তার গত টার্মের চার বছরে এমন শত শত আঘাত সহ্য করেছিলেন। এবং তাদের মতামতে কোনরূপ বাধা দেননি। যার ফলে আইডেলস্টিক ডেমোক্রেসির থিওরিটিক্যাল চর্চাটা তার আমলে ডেমোক্র্যাটদের আমল থেকে তুলনামূলক বেশি হয়েছিলো। যেহেতু এই আদর্শবাদীরা অনেকেই ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মুগ্ধ। তাই তারা সিরিয়ার সভ্যতা ধ্বংসকারী ও লিবিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসকারী ওবামাকে শুধু নোবেল পুরস্কার দেন না- তাকে এখনো অনেকটা পুঁজো করেন। এমনকি হিলারি পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন করে যে অর্থনৈতিক ও ভিন্ন ধরনের একটি কোল্ড ওয়ার আনলেন, যা এখনো ডেমোক্র্যাটরা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে পৃথিবীতে নতুন আরেক ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে- তা নিয়ে আদর্শবাদীদের এতটা কঠোর গবেষণা নেই। এমনকি লিবিয়া, সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান অবধি ডেমোক্র্যাটরা যে যুদ্ধবাজ রিপাবলিকান বুশের মতোই শুধু যুদ্ধ আর ধ্বংস নয়, দেশগুলোকে মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিলো- তা নিয়েও এই সিভিল সোসাইটির গবেষণার আঘাত কম। সাংবাদিক ক্রিস্টিনা ল্যাম্বের, “ আওয়ার বডি দেয়ার ব্যটল ফিল্ড” বা ফেরার ওয়েল কাবুলে ক্রিস্টিনা মৌলবাদীদের হাতে আমেরিকা কীভাবে দেশগুলোকে তুলে দিয়েছে এবং সেখানে নারীর শরীর কত সহজ ও অনিরাপদ হয়েছে- তা বাংলাদেশের মানুষও তার ইতিহাসের বিভিন্ন পাতার সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে পারবে সেই সব বাস্তবতার নির্মমতা।

জো বাইডেন এর আকস্মিক নীতি না গণতান্ত্রিক নীতি বা  কোন নীতির ফলে যে আফগানিস্তানে অন্ধকার যুগ নেমে এলো আবার- এ নিয়ে আমেরিকার ওই সিভিল সোসাইটির গবেষণার আগ্রহ কম।হয়তো দক্ষিণ এশিয়ার এই দরিদ্র জাতিগোষ্টি তাদের কাছে গিনিপিগের থেকে বড় কিছু নয়। তারপরে আমাদের মতো অনেকের যাদের সে দেশের মধ্যবিত্ত বন্ধুবান্ধব গোপন পথে দেশ ছাড়া হয়েছে। যারা পালিয়ে একের পর এক প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় নিয়েছে- তাদের জীবন দেখেই বোঝা যায়- মৌলবাদের অধীনে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কত অসহায়। ট্রাম্প আফগানিস্তানের থেকে তার সৈন্য ফেরানোর লক্ষ্যে দোহা আলোচনা শুরু করেছিলেন। তাই আফগানিস্তানের এই মৌলবাদ জো বাইডেনের নীতির কারণে আজ প্রতিষ্ঠিত হলেও তার কিছুটা দায় ট্রাম্পও এড়াতে পারেন না। ট্রাম্প এখন তার আমেরিকা গ্রেট করার জন্যে অনেকগুলো যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলছেন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করার আগে শুধু নয়, আমেরিকা গ্রেট নীতিকে বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে মৌলবাদ বিরোধী যুদ্ধে থাকতে হবে। কারণ মৌলবাদের কোন সীমানা নেই। আর পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে মৌলবাদ ৯/১১ ঘটাতে পারে। পাশাপাশি তার নিজ দেশের মতো গোটা পৃথিবীতে রয়েছে নানান ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। যারা সব সবই একটি ভালনারেবল গোষ্টি। পৃথিবীর বড় শক্তিগুলো যদি তাদের প্রতি যত্নশীল ও দ্বায়িত্ববান না হয় তাহলে মানবতা ভেঙ্গে পড়ে। মানবতার স্থিতিস্থাপকতার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে জড়িত।

ট্রাম্প তাঁর আমেরিকা গ্রেট নীতিতে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। যার সব থেকে বড় বিষয় হলো এশিয়ান দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে তিনি ১০ থেকে ৬০ পারস্টেন্ট পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করবেন। এর ফলে চায়না, ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম সকলেই রফতানি নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। এবং ট্রাম্প এর বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের  ক্রিপ্টো কারেন্সি ও শেয়ার বাজার উর্ধমূখী হয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী ফল যখন উর্ধমূখী তখনই সিঙ্গপুরের ডলারের বিপরীতে আমেরিকার ডলারের মূল্য বেড়ে যায়।

বাস্তবে গত কিছুদিন যাবত আমেরিকান ডলার, গোল্ড এবং এশিয়ান কারেন্সি এই তিনের একটি যুদ্ধ শুরু হবার যে যাত্রাটি আরাম্ভ হতে যাচ্ছিলো- সেটা বেশি কঠিন যুদ্ধে পড়ে যাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। দ্রুত গোল্ড ও এশিয়ান মুদ্রার অবস্থান করে নেবার বিষয়টি একটু কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে এশিয়ার প্রতি এই ট্যারিফ আরোপ করলেও ট্রাম্পকে শেষ অবধি ভিন্ন ভিন্ন এশিয়ান দেশের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তিতে যেতে হতে পারে। কারণ, তার তো শুধু আমদানী নয় রফতানিও আছে। যেমন ভিয়েতনাম, ভারত, চায়না ও তাইওয়ানকে তিনি সরল রেখায় রাখতে পারবেন কি? এত দূর থেকে সফটওয়ার ও সেমিকন্ডাকটর প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রন করা বেশ কঠিন।

অন্যদিকে স্থলের নরহত্যা বা দেশ ধ্বংসের যুদ্ধের বিপরীতে দাঁড়ালেও যুদ্ধের ধরণ এখন বদলে গেছে।কারণ, অতীতের সকল যুদ্ধ সমুদ্র পথ বেয়ে স্থলে গেছে । এখন যুদ্ধ সমুদ্রে। সাগর বা মহাসাগরের এই যুদ্ধ ও তার ব্যয়, কৌশল ও স্ট্রাটেজিক পার্টনার এবং সমঝোতা সব মিলে পৃথিবী সাগর ও মহাসাগরকে নিয়ে আরেক জটিল পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে।

 

এই যুদ্ধ যেমন নতুন। তেমনি এই নতুন যুদ্ধের পৃথিবীর টেকনোলজি শুধু নতুন নয়, অনাগত। আর এখন অনাগত দিন বলতে সেই বারো বছরের যুগ নয় -এখন যুগ চেঞ্জ হয় ছয় মাসের ও কম সময়ে। এই টেকনোলজি শুধু যে দ্রুত আরেকটা নতুন পৃথিবী দেবে তা নয়, বর্তমানের সকল রাজনীতির চরিত্রও বদলে দেবে। অতীতের অভিজ্ঞতা ও সফলতা নিয়ে অনাগত এক টেকনোলজি ও নতুন সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীতে- এ মুহূর্তের পৃথিবীতে সব থেকে বেশি বয়সের একজন রাষ্ট্রনায়ক যাকে তার দেশের অধিকাংশ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে- তিনি তার আগামী দিনকে কোথায় নিয়ে যাবেন, এ একটি অনেক বড় প্রশ্ন। কারণ, তাকে ঘিরে যেমন শংঙ্কা আছে, তেমনি ছোট বড় অনেক দেশের আশাও তাকে ঘিরে। আর সেটা ন্যাটো ভুক্ত দেশ থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষের।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.