মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান
গুগলের ইমেইল মাধ্যম জিমেইলের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা এখন ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন । জিমেইল ব্যবহারকারীদের গড় বয়স ৩১। গ্লোবাল ইমেইল শেয়ার মার্কেটের শতকরা বিশ ভাগ জিমেইলের দখলে। গুগল প্লে স্টোর থেকে বিভিন্ন সময় জিমেইলের অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে কমপক্ষে এক বিলিয়ন বার। শতকরা ৭৫ ভাগ জিমেইল ব্যবহারকারীই তাদের মোবাইলে ‘জিমেইল অ্যাপ’ ডাউনলোড করেন।
এক হিসাবে দেখা গেছে, গুগল বিজ্ঞাপন বাবদ আয় করেছে ৭২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার; যা ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের প্রায় দ্বিগুণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজেটেরও প্রায় দ্বিগুণ। অভিযোগ রয়েছে যে, গুগল তার বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং ফেসবুকের মতোই সে সব তথ্যের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন ও গোপন আরো অনেক খাতে আয় করে থাকে। এইসব তথ্য পেতে গুগল সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে তার প্রতিটি ব্যবহারকারীর ওপর। একশো বিশ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সকল তথ্য নিয়ে তারা কাজ করে।
বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রকাশিত এক লেখায় ডিলান কুর্যান নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে দেখিয়েছেন কীভাবে গুগল আমাদের সব তথ্য রেকর্ড রাখছে। ব্যবহারকারীর প্রতিটি পদক্ষেপ তারা নজরদারি করছে। কথাটি সকল জিমেইল ব্যবহারকারীর জন্য সত্য। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে:
ডিজিটাল আমলনামার নাম গুগল মাই অ্যাকটিভিটি: গুগলের মাই অ্যাকটিভিটির মাধ্যমে আপনার সকল কর্মকা- রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এটা প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি আছে। আলাদাভাবে ডাউনলোড করতে হয় না। দিনে আপনি কতোবার মোবাইল কল করলেন, কতোবার ফেসবুকে ঢুকলেন, কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে কী পড়েছেন, ইউটিউবে কোন ভিডিও দেখেছেন, এমনকি রাতে প্রয়োজনে যদি আপনার স্মার্টফোনে ফ্ল্যাশলাইট অ্যাপ ব্যবহার করে বাতি জে¦লে থাকেন তবে তারও দিন-তারিখ-সময়সহ গুগল রেকর্ড করে রাখছে। আপনার ফোনে কোন ছবি তুললেন, কাকে মেসেজ পাঠালেন, কোন ওয়ার্ড ফাইলে কাজ করলেন সব তথ্য পেয়ে যাবেন। সব বলতে আসলেই ‘সব’। এমনকি যেসব তথ্য আপনি সার্চ হিস্ট্রি থেকে মুছে দিয়েছেন কিংবা যদি ফোন বা ডিভাইসও পরিবর্তন করে থাকেন তারপরও গুগল সেসব তথ্য রেখে দেয়। মনে রাখবেন, আপনার ডিলিট করার অর্থ হলো আপনার ডিভাইস থেকে ডিলিট করা, গুগল থেকে নয়। একারণে কেউ কেউ গুগল অ্যাকটিভিটিকে বলছেন ডিজিটাল আমলনামা। একবার নিজে দেখুন। সন্দেহ নেই, বছরের পর বছর ধরে প্রতিটি দিনে নিজের কর্মকা- দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন।
myactivity.google.com/myactivity
গুগল জানে আপনি কোথায় আছেন, কোথায় ছিলেন: ব্যবহারকারীর মোবাইলে লোকেশন ট্র্যাকিং যদি খোলা থাকে (অধিকাংশেরই খোলা থাকে, বিশেষত এখন পথে চলতে উবার, পাঠাও, ওভাই প্রভৃতি যানবাহন সার্ভিসের সাহায্য নিতে এটি ওপেন রাখতে হয়) তবে তা রেকর্ডে ঢুকে যাচ্ছে। যেদিন থেকে গুগল ব্যবহার শুরু সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি দিনে আপনি কোথায় গিয়েছেন সব তথ্য গুগল সংরক্ষণ করে। আপনি নিজেও তা ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন এখানে, https://www.google.com/maps/timeline?pb
আপনাকে বিজ্ঞাপনের পণ্য বানাচ্ছে গুগল: ব্যবহারকারীর যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে তা বিজ্ঞাপনের কাজে লাগাচ্ছে গুগল। এক্ষেত্রে আপনার লোকেশন, লিঙ্গ, শখ, ক্যারিয়ার, ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন সব কিছুকেই নেড়েচেড়ে দেখা হয়।
দেখুন: google.com/settings/ads/
গুগল জানে আপনি কোন অ্যাপস ব্যবহার করছেন: আপনার ব্যবহার করা প্রতিটি অ্যাপসের তথ্য সংরক্ষণ করে গুগল। গুগল জানে, আপনি কোন অ্যাপস কতোক্ষণ ব্যবহার করেন, বেশি সময় না কম সময়, কার সঙ্গে যোগাযোগ করেনÑ সব কিছুই। তারা জানে ফেসবুক বা অন্য কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোন কোন দেশ বা এলাকায় কথা বলছেন, এমনকি কখন আপনি ফোন ব্যবহার বন্ধ রেখে ঘুমাতে যাচ্ছেন সেটাও!
myaccount.google.com/intro/security
আপনার ইউটিউবের যাবতীয় তথ্য রয়ে গেছে: ব্যবহারের প্রথম দিন থেকে ইউটিউবে কোন ভিডিও আপনি দেখেছেন, সার্চ করেছেনÑ তার সব রেকর্ড গুগল রেখে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আপনি কোন ধর্মের, আপনার মানসিকতা কীÑ সব কিছুই বের করা সম্ভব। আপনি নিজেই এবার দেখুন ইউটিউবে কবে কখন কী দেখেছেন:
https://www.youtube.com/feed/history/search_history
আপনার যাবতীয় তথ্য গুগলের সংরক্ষণে: গুগলে আপনার সম্পর্কে যতো ডেটা আছে তা যদি ওয়ার্ড ফাইলে সংরক্ষণ করতে চান তবে গড়ে অন্তত ত্রিশ লাখ পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে। গুগলের অফারে এসব তথ্য আপনি দেখতে পারেন। যে পরিমাণ তথ্য গুগল আপনার সম্পর্কে হাজির করবে তার আকার যদি হয় সাড়ে পাঁচ গিগাবাইটের বেশি তাহলে কি আপনি বিস্মিত হবেন? গুগল অপনার সামনে যে তথ্যগুলো হাজির করবে তা হলোÑ আপনার বুকমার্ক, সকল ইমেইল এমনকি স্পামে কোন মেইল জমা ছিল সেটা পর্যন্ত, কনটাক্টস, গুগল ড্রাইভের ফাইল, সকল ইউটিউব ভিডিও, আপনার ফোনে যতো ছবি তুলেছেন, যে সব বিজনেস আপনি পেয়েছেন, অনলাইন থেকে কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে থাকলে তার তালিকা, আপনার ক্যালেন্ডারে মার্ক করা এবং নোট রাখা সকল তথ্য, গুগল হ্যাঙ্গআউট সেশনের সব তথ্য, আপনার লোকেশন হিস্ট্রি, যে গানগুলো আপনি শুনেছেন, যে বই পড়েছেন বা কিনেছেন, যে সব গ্রুপের সঙ্গে আপনি জড়িত, যে ওয়েবসাইট আপনি তৈরি করেছেন, আপনার সকল ফোন নাম্বার, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের যে পেজ আপনি ব্রাউজ করেছেন এবং শেয়ার করেছেন অন্যের সঙ্গে, যে ছবি আপনি ডাউনলোড করেছেন, এমনকি প্রতিদিন আপনি কতো পদক্ষেপ হেঁটেছেন সবই পাবেন। দেখুন একবার আপনি কীভাবে গুগলের নজরদারির মধ্যে আছেন:google.com/takeout
লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক