হামিদ দাবাশি
আব্বাস কিয়ারোস্তামির তিনটি চলচ্চিত্র – ক্লোজ-আপ (৩৯), হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হোম? (৯৪), এবং টেস্ট অব চেরি (৯৭) – এবং আসগর ফারহাদির আ সেপারেশন (২১)।
আসগর ফারহাদির আ সেপারেশন, যা বিবিসি কালচার-এর জরিপে ২০১৮তে ২১তম স্থানে ছিল, ইরানি চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে।
ইরানি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও আরও অনেক চমৎকার চলচ্চিত্র এই তালিকায় থাকতে পারত, কিন্তু এই চারটি চলচ্চিত্রের গুরুত্ব এবং কিয়ারোস্তামির বিশ্বমানের নির্মাতাদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
ইরানি সিনেমার বৈশ্বিক যাত্রা
ইরানি সিনেমার দীর্ঘ ইতিহাসে কখনোই এটি কেবল ইরানের সীমানায় সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রথম ইরানি সাউন্ড চলচ্চিত্র ডোখতার-এ লোর (১৯৩২) বোম্বের ইম্পেরিয়াল ফিল্ম কোম্পানিতে নির্মিত হয়েছিল।
১৯৬২ সালে ফরোগ ফাররোখজাদের দ্য হাউস ইজ ব্ল্যাক তথ্যচিত্রটি ইরানি সিনেমাকে এমন এক সৃজনশীল পথে নিয়ে যায়, যা পরে এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। লেপার কলোনিতে ধারণ করা এই চলচ্চিত্র বাস্তব ও কল্পনার এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করেছিল।
পরবর্তীতে দারিউশ মেহরজুইয়ের দ্য কাউ (১৯৬৯) ইরান থেকে চোরাইপথে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।
বিপ্লব এবং স্বীকৃতি
ইরান বিপ্লব (১৯৭৭-১৯৭৯) বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আমির নাদেরির দ্য রানার (১৯৮৪) ইরানি সিনেমার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
এরপর আব্বাস কিয়ারোস্তামির হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হোম? (১৯৮৫) লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। কিয়ারোস্তামি তখন ইরানে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু ইউরোপে তার গ্রহণযোগ্যতা তাকে বৈশ্বিক পরিসরে সবার সামনে নিয়ে আসে।
১৯৯৮ সালে সামিরা মাখমালবাফ তার প্রথম চলচ্চিত্র দ্য অ্যাপল কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। এটি ইরানের প্রতি বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।
আধুনিক ইরানি সিনেমার পথচলা
২০০০-এর দশকে জাফর পানাহির দ্য সার্কেল (১৯৯৯) ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরে।
এরপর আসগর ফারহাদি ইরানি সিনেমার পরিচিতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তার পারিবারিক নাটক আ সেপারেশন (২০১১) ২০১২ সালে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কার জয় করে।
ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন প্রজন্ম
ইরানের বাইরে শিরিন নেশাত এবং রামিন বাহরানির মতো নির্মাতারা ইরানি সিনেমাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছেন। এদের চলচ্চিত্রগুলো ইরানি সিনেমার ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎকে একত্রে মেলে ধরে।
এই নিবন্ধের লেখক হামিদ দাবাশি, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানের সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস এবং বিশ্ব সিনেমা পড়ান।