০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

জেন অস্টেনের চিঠিপত্র কেন তার নিজের বোন ধ্বংস পুড়িয়ে ফেলেন  

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 23

নীল আর্মস্ট্রং

জেন অস্টেন ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক – কিন্তু তাঁকে নিয়ে তুলনামূলকভাবে খুব কমই জানা যায়। এর পেছনে রয়েছে এমন একটি ঘটনাযা আজও অনেককে ক্ষুব্ধ করে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে নতুন টিভি নাটক মিস অস্টেন

জানুয়ারির গোড়ার দিকে ১৭৯৬ সালেবিশ বছরের তরুণী জেন অস্টেন তাঁর প্রিয় বড় বোন ক্যাসান্দ্রাকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি নিজের সাম্প্রতিক পছন্দের মানুষএকজন খুব ভদ্রসুদর্শন ও আনন্দময়” তরুণ আইনজীবী টম লেফ্রয় সম্পর্কে নানা গসিপের কথা জানান। তিনটি নাচের আসরে একসঙ্গে সময় কাটানোর পরতিনি ক্যাসান্দ্রাকে মজা করে লেখেন: এবার তুমি ভাবতেই পারো যে আমরা কতটা ঔচ্ছ্বল্যপূর্ণ ও রোমহর্ষক হয়ে নাচলাম এবং পাশাপাশি বসলাম।” এরপরের সাক্ষাতের কথাও তিনি উত্তেজিত মনে উল্লেখ করেনআর কয়েক দিনের মধ্যেই আরেকটি চিঠিতে ক্যাসান্দ্রাকে লেখেন যে তাঁদের বান্ধবী মেরিকে চাইলে তিনি তাঁর অন্যান্য সব আগ্রহী পুরুষ অনুরাগী” দিয়ে দিতে পারেনকারণ এখন টম ছাড়া আর কারও প্রতি তাঁর মন নেই। কিন্তু ঠিক তখনই টমকে দেশ ছাড়তে হলো। একই চিঠিতে জেন লেখেন: অবশেষে সেই দিনটি এসে গেলযেদিন আমাকে টম লেফ্রয়ের সঙ্গে শেষবারের মতো ফ্লার্ট করতে হবেআর তুমি যখন এই চিঠিটি পাবে তখন সব শেষ হয়ে যাবে। এই বিষণ্ন চিন্তায় আমি কাঁদছি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলোজেনের এ চিঠিগুলো তাঁর বেঁচে থাকা সময়ের সবচেয়ে পুরোনো চিঠি যা এখনো অবশিষ্ট আছে। সেগুলো থেকে বোঝা যায়তিনি ছিলেন একজন প্রাণবন্তপ্রফুল্লরসিক তরুণীযিনি পার্টিনাচ আর বিপরীত লিঙ্গের মনোযোগ উপভোগ করতেন। এই চিত্রটি দুর্লভ ও মহামূল্যবানকারণ জেন অস্টেন জীবদ্দশায় হাজার হাজার চিঠি লিখে থাকলেও আমাদের হাতে এখন মাত্র ১৬০টি চিঠি আছে। ১৮১৭ সালে অজানা অসুস্থতায় জেনের মৃত্যু হওয়ার অনেক বছর পরবোন ক্যাসান্দ্রা – যাঁকে জেন আলাদা থাকলেই প্রায় প্রতিদিন চিঠি লিখতেন – প্রায় সমস্ত চিঠি পুড়িয়ে ফেলেন।

বহু ঐতিহাসিক ও জীবনীকার ক্যাসান্দ্রার এই কাজ নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতেশেক্সপিয়রের পর ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বড় কথাসাহিত্যিক হলেন জেন অস্টেন। তাঁর ছয়টি উপন্যাসতীক্ষ্ণ রসবোধমনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি ও অসাধারণ গঠনশৈলীর কারণেআজও অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেসব উপন্যাসের বহু চলচ্চিত্র ও টিভি রূপান্তর হয়েছে। কিন্তু মৌলিক কয়েকটি তথ্য ছাড়া জেনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি নির্ভরযোগ্য উপাদান নেই। তাঁকে ঘিরে নানা অনুমানতিনি কি গোপন বিপ্লবী ছিলেনতিনি কি সমকামী ছিলেনতাঁকে কি বিষক্রিয়া করে মারা হয়েছিল?—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা কঠিনকারণ ক্যাসান্দ্রা তাঁর চিঠিগুলো সংরক্ষণ না করে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। কী এমন ছিল ওই চিঠিতে যার কারণে ক্যাসান্দ্রা মনে করেছিলেনসেগুলো রাখার থেকে ধ্বংস করে ফেলাই শ্রেয়?

বিভিন্ন অনুমান নতুন চার পর্বের টেলিভিশন নাটক মিস অস্টেন” গিল হর্নবি-র একই নামের জনপ্রিয় ও সমালোচক-প্রশংসিত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। এই নাটকে দেখানো হয়েছে ঠিক কী কারণে ক্যাসান্দ্রা (কিলি হাউস) বোনের চিঠি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। ১৮৩০ সালের পটভূমিতে দেখা যায়জেন অস্টেনের মৃত্যুর কয়েক বছর পর ক্যাসান্দ্রা বার্কশায়ারের কিন্টবুরিতে যান। সেখানে অস্টেন পরিবারের পুরোনো বন্ধু ফাউল পরিবার বাস করত। নাটকে দেখানো হয়অসুস্থ ফুলওয়ার ফাউলের মেয়ে ইসাবেলা (রোজ লেসলি) সাহায্যের জন্য ক্যাসান্দ্রার উপস্থিতি কামনা করলেও ক্যাসান্দ্রার গোপন উদ্দেশ্য ছিল জেনের লেখা কিছু চিঠি খুঁজে পাওয়াযা তিনি মনে করেন জেনের খ্যাতির ক্ষতি করতে পারে। বাড়িটির সেসব চিঠি পেলে সেগুলো পড়তে গিয়ে ক্যাসান্দ্রার স্মৃতিতে অনেক পুরনো ঘটনা ভেসে ওঠে।

গল্প দুটো সময়রেখায় এগোয়১৮৩০ সালেযখন অবিবাহিত ইসাবেলা পিতৃহারা হয়ে বাড়ি ছাড়তে বসেছেন আর ক্যাসান্দ্রা বোনের সুনাম রক্ষার লড়াই করছেনএবং এর আগে বহু বছর আগেযখন তরুণী ক্যাসান্দ্রা (সিন্নভে কারলসেন) আর তরুণী জেন (প্যাটসি ফেরান) তাঁদের জীবনে প্রেমপারিবারিক সংকট ও নানাবিধ উত্থান-পতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

মিস অস্টেন” লেখক গিল হর্নবি বাস করতেন কিন্টবুরিতে। তিনি সেখানকার গির্জার তৎকালীন ভিকারের ছেলে সম্পর্কে জেন অস্টেনের বাগদানের গল্প শুনে ক্যাসান্দ্রার চরিত্রে আগ্রহী হন। কেন ক্যাসান্দ্রা চিঠিগুলো পুড়িয়েছিলেনতা নিয়ে তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব রয়েছেযা উপন্যাসে বিবৃত হয়েছে। সিরিজের দর্শকেরা নাটকের মধ্যেই সেটি আবিষ্কার করবেন।

হর্নবি আরও বলেনকিছু সাধারণ ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। যেমনওইসব চিঠিতে অনেক ব্যক্তিগতরসালো গসিপ ও গালগল্প ছিল। দুই বোনেরই ছয়জন ভাই ছিলহয়তো অন্য আত্মীয়দের নিয়ে মন্তব্য বা উষ্মা ক্যাসান্দ্রা মনে করতেন পরবর্তীতে কষ্টের কারণ হতে পারে। পাশাপাশি আর্থিক দুশ্চিন্তাও ছিল বড় বিষয় – জেন বারবার টাকার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। সুতরাং চিঠিগুলো হয়তো জেনকে অতটা সদয় বা দীপ্তিময় অবস্থায় দেখাত না।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও জেন অস্টেন-বিশেষজ্ঞ ডিভনি লুজার মনে করেনআরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ফ্রান্সেস বার্নির মৃত্যুর পর তাঁর চিঠিপত্র প্রকাশিত হলে সমালোচকেরা যে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেনসেটি দেখেই ক্যাসান্দ্রা বিচলিত হয়ে থাকতে পারেন। বার্নি ছিলেন সমাজ-বিদ্রূপধর্মী লেখা ও উপন্যাসের লেখিকাযাঁর লেখা অস্টেন খুব পছন্দ করতেন।

ক্যাসান্দ্রা সম্ভবত দেখছিলেনঅস্টেনের চিঠিগুলোও একই রকমের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে পারত। আজ প্রায় দুই শতাব্দী পর আমরা জানিসে চিঠিগুলো প্রকাশিত হলে হয়তো তাতে থাকা রসিকতা ও সমাজ-দৃষ্টিভঙ্গি আরও সমাদৃত হতো। কিন্তু একুশ শতকের পাঠকের ভাবনায় সেটাই কষ্টের বিষয় – সেগুলো আর নেই।

তবে লুজার এবং হর্নবি দুজনেই ক্যাসান্দ্রাকে সম্পূর্ণ দোষারোপ করতে রাজি নন। বরং তাঁরা যুক্তি দেনজেন নিজেও অতি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেনএবং বোন হিসেবে ক্যাসান্দ্রা হয়তো সেটাই রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। মিস অস্টেন” গ্রন্থ রচনার পেছনেও হর্নবি আংশিকভাবে এই যুক্তি তুলে ধরতে চেয়েছেনকেন ক্যাসান্দ্রা হয়তো ঠিক কাজই করেছিলেন।

আসলেইজেন নিজের জীবদ্দশায় বাই সে একজন মহিলা’ (নামহীনভাবে) উপন্যাস প্রকাশ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর১৮১৭ সালের ডিসেম্বরে ভাই হেনরি প্রথমবার তাঁর পরিচয় rộngভাবে প্রকাশ করেন (তাঁর লেখা একটি ভূমিকায়যা জেনের মৃত্যুর পর প্রকাশিত পারসুয়েশন” ও নর্থাঙ্গার অ্যাবি” গ্রন্থে ছাপা হয়)। হর্নবি মনে করেনখ্যাতি জেন অস্টেনের উদ্দেশ্য ছিল নাতাঁর তাগিদ ছিল শুধুই লেখার প্রতি। তাই দুজন বোনই নিশ্চয়ই চাইতেন নাতাঁদের ব্যক্তিগত গসিপ গোটা পৃথিবী জানুক। উপরন্তুজেনকে ঘিরে যত কম জানা গেছেততই যেন তাঁর রহস্যময় ব্যক্তিত্ব আজও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।

লুজারও বলেন, “ক্যাসান্দ্রা আসলে একমাত্র অস্টেন-ভাইবোন যিনি বহু চিঠি সংরক্ষণ করেছিলেন। আমরা বুঝি যে আরও চিঠি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনককারণ সেগুলোয় নিশ্চয়ই জেনের আরও মজার হাস্যরস এবং সমাজ-দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যেত।

দুই বোনের অটুট বন্ধন জেন আর ক্যাসান্দ্রার মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুজনই হ্যাম্পশায়ারের একজন গির্জাপরিবারের মেয়ে। তাঁদের মা বলেছিলেন, “যদি ক্যাসান্দ্রার মাথা কাটার হুকুম হতোজেনও তার মাথা কাটা দিতে রাজি হতো।” জীবনের বহু সময় তাঁরা একসঙ্গে কাটিয়েছেনগল্প-লেখালেখি নিয়েও একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতেন। জেনের যে একমাত্র অঙ্কিত জলরং ছবি রয়েছেসেটিও ক্যাসান্দ্রার আঁকা। জেনের মৃত্যুর পরদিন ক্যাসান্দ্রা এক চিঠিতে লেখেন, “সে ছিল আমার জীবনের সূর্যসকল আনন্দকে রাঙিয়ে তুলতদুঃখকে প্রশমিত করত। যেন আমার অস্তিত্বের একটা অংশ হারিয়ে গেল।” দুজনের কেউই শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেননি।

আসলেহর্নবির উপন্যাসের অন্তরালে যে রহস্যবৃত্তান্ত রয়েছেসেটি মূলত অবিবাহিত নারীদের দুর্বল অবস্থানতাঁদের আর্থিক ও সামাজিক দুর্দশার চিত্রকে সামনে নিয়ে আসে। তখনকার দিনে নারীরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না বা নিজের সম্পদ নিয়ন্ত্রণের সুযোগও ছিল কমঅনেক ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনের দয়ার ওপর নির্ভর করে থাকতে হতোযা সবসময় সহানুভূতিপূর্ণ ছিল না।

হর্নবি বলেন, “তখন নারীদের অস্তিত্ব জুড়ে ছিল অবরুদ্ধ অবস্থাপ্রতিটি দিন ছিল একেকটি ফাঁদ এড়িয়ে চলার মতো। আমরা এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু দেখি বলে বুঝি নাকিন্তু অস্টেনের উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তুই হলো নারীর এই অবরুদ্ধ অবস্থা। তাঁর সব নায়িকাই (এমমা ব্যতীত) উপন্যাসের শুরুতে কোনো না কোনো বিপদের মুখে। যেমন প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’-এর বেনেট পরিবারতাঁদের বাবা মারা গেলে মেয়েদের আর্থিক নিরাপত্তা থাকে নাঘরবাড়িও থাকে না। বিয়েই যেন তাঁদের একমাত্র রক্ষা-পদ্ধতিযা মিসেস বেনেট খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন। আমরা তাঁকে হাস্যরসাত্মক চরিত্র বলে পড়িকিন্তু তিনি আসলে বাস্তববাদীযিনি সামনে আসা বিপদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।

মিস অস্টেন” নাটকে রূপান্তর করেছেন আন্দ্রিয়া গিবযিনি বলেন, “এই উপন্যাসটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এতে সবকিছু রয়েছেরহস্যভালোবাসারোমান্সআর নারীদের অনন্য সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতার কথা। শুধুই রোমান্টিক প্রেম নয়বরং আজীবনের স্নেহ-মমতাময়ী বোনতুল্য ভালোবাসাও আছে। তৎকালীন সমাজে নারীরা পুরুষদের ওপর সম্পূর্ণভাবে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। ভালো বিয়ে’ ছিল টিকে থাকার মাধ্যমঠিক যতটা তা রোমান্টিক আকাঙ্ক্ষাও।

এই বছর জেন অস্টেনের জন্মের ২৫০তম বার্ষিকী। মিস অস্টেন” ছাড়াও বিবিসি দ্য আদার বেনেট সিস্টার” নামে আরেকটি নাটক নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছেযা জেনিস হ্যাডলো রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হবে এবং প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস”-এর মেরি বেনেটকে কেন্দ্রে নিয়ে গল্প এগোবে। নেটফ্লিক্সেও প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস”-এর আরেকটি রূপান্তর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এ বছরের শেষ দিকে বেরোবে ডিভনি লুজারের বই ওয়াইল্ড ফর অস্টেন: এ রেবেলিয়াসসাবভার্সিভঅ্যান্ড আনটেইমড লেগেসি”, যেখানে তিনি অস্টেনকে ঘিরে নিরীহগম্ভীরএকঘেয়ে” এমন সব প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দিতে চান। সব মিলিয়ে জেন অস্টেনের আবেদন এখনো অপ্রতিরোধ্য।

নাট্যরূপকার আন্দ্রিয়া গিব মনে করেন, “জেন অস্টেনের চরিত্রগুলো যুগে যুগে টিকে আছেকারণ তিনি সার্বজনীন অনুভূতি আর সমাজের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আজকের নারীদের জন্যও তাঁর বক্তব্যের যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা আছে। তরুণীবয়স্কযে কেউই তাঁর লেখায় নিজেদের খুঁজে পেতে পারেন। তিনি মানুষের আচরণকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেনসেই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত ব্যঙ্গধর্মী ও হাস্যরসাত্মক।

আর আমরা ক্যাসান্দ্রাকে বেশ কিছুটা সহানুভূতিতেই দেখতে পারি। কারণনিজের ব্যক্তিগত রসাত্মক বা বিদ্রূপাত্মক চিঠি বা বার্তা কে-ই বা চায় সারা বিশ্বের সকলের কাছে প্রকাশ পাক?

জেন অস্টেনের চিঠিপত্র কেন তার নিজের বোন ধ্বংস পুড়িয়ে ফেলেন  

১১:০০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নীল আর্মস্ট্রং

জেন অস্টেন ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক – কিন্তু তাঁকে নিয়ে তুলনামূলকভাবে খুব কমই জানা যায়। এর পেছনে রয়েছে এমন একটি ঘটনাযা আজও অনেককে ক্ষুব্ধ করে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে নতুন টিভি নাটক মিস অস্টেন

জানুয়ারির গোড়ার দিকে ১৭৯৬ সালেবিশ বছরের তরুণী জেন অস্টেন তাঁর প্রিয় বড় বোন ক্যাসান্দ্রাকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি নিজের সাম্প্রতিক পছন্দের মানুষএকজন খুব ভদ্রসুদর্শন ও আনন্দময়” তরুণ আইনজীবী টম লেফ্রয় সম্পর্কে নানা গসিপের কথা জানান। তিনটি নাচের আসরে একসঙ্গে সময় কাটানোর পরতিনি ক্যাসান্দ্রাকে মজা করে লেখেন: এবার তুমি ভাবতেই পারো যে আমরা কতটা ঔচ্ছ্বল্যপূর্ণ ও রোমহর্ষক হয়ে নাচলাম এবং পাশাপাশি বসলাম।” এরপরের সাক্ষাতের কথাও তিনি উত্তেজিত মনে উল্লেখ করেনআর কয়েক দিনের মধ্যেই আরেকটি চিঠিতে ক্যাসান্দ্রাকে লেখেন যে তাঁদের বান্ধবী মেরিকে চাইলে তিনি তাঁর অন্যান্য সব আগ্রহী পুরুষ অনুরাগী” দিয়ে দিতে পারেনকারণ এখন টম ছাড়া আর কারও প্রতি তাঁর মন নেই। কিন্তু ঠিক তখনই টমকে দেশ ছাড়তে হলো। একই চিঠিতে জেন লেখেন: অবশেষে সেই দিনটি এসে গেলযেদিন আমাকে টম লেফ্রয়ের সঙ্গে শেষবারের মতো ফ্লার্ট করতে হবেআর তুমি যখন এই চিঠিটি পাবে তখন সব শেষ হয়ে যাবে। এই বিষণ্ন চিন্তায় আমি কাঁদছি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলোজেনের এ চিঠিগুলো তাঁর বেঁচে থাকা সময়ের সবচেয়ে পুরোনো চিঠি যা এখনো অবশিষ্ট আছে। সেগুলো থেকে বোঝা যায়তিনি ছিলেন একজন প্রাণবন্তপ্রফুল্লরসিক তরুণীযিনি পার্টিনাচ আর বিপরীত লিঙ্গের মনোযোগ উপভোগ করতেন। এই চিত্রটি দুর্লভ ও মহামূল্যবানকারণ জেন অস্টেন জীবদ্দশায় হাজার হাজার চিঠি লিখে থাকলেও আমাদের হাতে এখন মাত্র ১৬০টি চিঠি আছে। ১৮১৭ সালে অজানা অসুস্থতায় জেনের মৃত্যু হওয়ার অনেক বছর পরবোন ক্যাসান্দ্রা – যাঁকে জেন আলাদা থাকলেই প্রায় প্রতিদিন চিঠি লিখতেন – প্রায় সমস্ত চিঠি পুড়িয়ে ফেলেন।

বহু ঐতিহাসিক ও জীবনীকার ক্যাসান্দ্রার এই কাজ নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতেশেক্সপিয়রের পর ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বড় কথাসাহিত্যিক হলেন জেন অস্টেন। তাঁর ছয়টি উপন্যাসতীক্ষ্ণ রসবোধমনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি ও অসাধারণ গঠনশৈলীর কারণেআজও অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেসব উপন্যাসের বহু চলচ্চিত্র ও টিভি রূপান্তর হয়েছে। কিন্তু মৌলিক কয়েকটি তথ্য ছাড়া জেনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি নির্ভরযোগ্য উপাদান নেই। তাঁকে ঘিরে নানা অনুমানতিনি কি গোপন বিপ্লবী ছিলেনতিনি কি সমকামী ছিলেনতাঁকে কি বিষক্রিয়া করে মারা হয়েছিল?—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা কঠিনকারণ ক্যাসান্দ্রা তাঁর চিঠিগুলো সংরক্ষণ না করে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। কী এমন ছিল ওই চিঠিতে যার কারণে ক্যাসান্দ্রা মনে করেছিলেনসেগুলো রাখার থেকে ধ্বংস করে ফেলাই শ্রেয়?

বিভিন্ন অনুমান নতুন চার পর্বের টেলিভিশন নাটক মিস অস্টেন” গিল হর্নবি-র একই নামের জনপ্রিয় ও সমালোচক-প্রশংসিত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। এই নাটকে দেখানো হয়েছে ঠিক কী কারণে ক্যাসান্দ্রা (কিলি হাউস) বোনের চিঠি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। ১৮৩০ সালের পটভূমিতে দেখা যায়জেন অস্টেনের মৃত্যুর কয়েক বছর পর ক্যাসান্দ্রা বার্কশায়ারের কিন্টবুরিতে যান। সেখানে অস্টেন পরিবারের পুরোনো বন্ধু ফাউল পরিবার বাস করত। নাটকে দেখানো হয়অসুস্থ ফুলওয়ার ফাউলের মেয়ে ইসাবেলা (রোজ লেসলি) সাহায্যের জন্য ক্যাসান্দ্রার উপস্থিতি কামনা করলেও ক্যাসান্দ্রার গোপন উদ্দেশ্য ছিল জেনের লেখা কিছু চিঠি খুঁজে পাওয়াযা তিনি মনে করেন জেনের খ্যাতির ক্ষতি করতে পারে। বাড়িটির সেসব চিঠি পেলে সেগুলো পড়তে গিয়ে ক্যাসান্দ্রার স্মৃতিতে অনেক পুরনো ঘটনা ভেসে ওঠে।

গল্প দুটো সময়রেখায় এগোয়১৮৩০ সালেযখন অবিবাহিত ইসাবেলা পিতৃহারা হয়ে বাড়ি ছাড়তে বসেছেন আর ক্যাসান্দ্রা বোনের সুনাম রক্ষার লড়াই করছেনএবং এর আগে বহু বছর আগেযখন তরুণী ক্যাসান্দ্রা (সিন্নভে কারলসেন) আর তরুণী জেন (প্যাটসি ফেরান) তাঁদের জীবনে প্রেমপারিবারিক সংকট ও নানাবিধ উত্থান-পতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

মিস অস্টেন” লেখক গিল হর্নবি বাস করতেন কিন্টবুরিতে। তিনি সেখানকার গির্জার তৎকালীন ভিকারের ছেলে সম্পর্কে জেন অস্টেনের বাগদানের গল্প শুনে ক্যাসান্দ্রার চরিত্রে আগ্রহী হন। কেন ক্যাসান্দ্রা চিঠিগুলো পুড়িয়েছিলেনতা নিয়ে তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব রয়েছেযা উপন্যাসে বিবৃত হয়েছে। সিরিজের দর্শকেরা নাটকের মধ্যেই সেটি আবিষ্কার করবেন।

হর্নবি আরও বলেনকিছু সাধারণ ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। যেমনওইসব চিঠিতে অনেক ব্যক্তিগতরসালো গসিপ ও গালগল্প ছিল। দুই বোনেরই ছয়জন ভাই ছিলহয়তো অন্য আত্মীয়দের নিয়ে মন্তব্য বা উষ্মা ক্যাসান্দ্রা মনে করতেন পরবর্তীতে কষ্টের কারণ হতে পারে। পাশাপাশি আর্থিক দুশ্চিন্তাও ছিল বড় বিষয় – জেন বারবার টাকার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। সুতরাং চিঠিগুলো হয়তো জেনকে অতটা সদয় বা দীপ্তিময় অবস্থায় দেখাত না।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও জেন অস্টেন-বিশেষজ্ঞ ডিভনি লুজার মনে করেনআরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ফ্রান্সেস বার্নির মৃত্যুর পর তাঁর চিঠিপত্র প্রকাশিত হলে সমালোচকেরা যে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেনসেটি দেখেই ক্যাসান্দ্রা বিচলিত হয়ে থাকতে পারেন। বার্নি ছিলেন সমাজ-বিদ্রূপধর্মী লেখা ও উপন্যাসের লেখিকাযাঁর লেখা অস্টেন খুব পছন্দ করতেন।

ক্যাসান্দ্রা সম্ভবত দেখছিলেনঅস্টেনের চিঠিগুলোও একই রকমের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে পারত। আজ প্রায় দুই শতাব্দী পর আমরা জানিসে চিঠিগুলো প্রকাশিত হলে হয়তো তাতে থাকা রসিকতা ও সমাজ-দৃষ্টিভঙ্গি আরও সমাদৃত হতো। কিন্তু একুশ শতকের পাঠকের ভাবনায় সেটাই কষ্টের বিষয় – সেগুলো আর নেই।

তবে লুজার এবং হর্নবি দুজনেই ক্যাসান্দ্রাকে সম্পূর্ণ দোষারোপ করতে রাজি নন। বরং তাঁরা যুক্তি দেনজেন নিজেও অতি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেনএবং বোন হিসেবে ক্যাসান্দ্রা হয়তো সেটাই রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। মিস অস্টেন” গ্রন্থ রচনার পেছনেও হর্নবি আংশিকভাবে এই যুক্তি তুলে ধরতে চেয়েছেনকেন ক্যাসান্দ্রা হয়তো ঠিক কাজই করেছিলেন।

আসলেইজেন নিজের জীবদ্দশায় বাই সে একজন মহিলা’ (নামহীনভাবে) উপন্যাস প্রকাশ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর১৮১৭ সালের ডিসেম্বরে ভাই হেনরি প্রথমবার তাঁর পরিচয় rộngভাবে প্রকাশ করেন (তাঁর লেখা একটি ভূমিকায়যা জেনের মৃত্যুর পর প্রকাশিত পারসুয়েশন” ও নর্থাঙ্গার অ্যাবি” গ্রন্থে ছাপা হয়)। হর্নবি মনে করেনখ্যাতি জেন অস্টেনের উদ্দেশ্য ছিল নাতাঁর তাগিদ ছিল শুধুই লেখার প্রতি। তাই দুজন বোনই নিশ্চয়ই চাইতেন নাতাঁদের ব্যক্তিগত গসিপ গোটা পৃথিবী জানুক। উপরন্তুজেনকে ঘিরে যত কম জানা গেছেততই যেন তাঁর রহস্যময় ব্যক্তিত্ব আজও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।

লুজারও বলেন, “ক্যাসান্দ্রা আসলে একমাত্র অস্টেন-ভাইবোন যিনি বহু চিঠি সংরক্ষণ করেছিলেন। আমরা বুঝি যে আরও চিঠি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনককারণ সেগুলোয় নিশ্চয়ই জেনের আরও মজার হাস্যরস এবং সমাজ-দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যেত।

দুই বোনের অটুট বন্ধন জেন আর ক্যাসান্দ্রার মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুজনই হ্যাম্পশায়ারের একজন গির্জাপরিবারের মেয়ে। তাঁদের মা বলেছিলেন, “যদি ক্যাসান্দ্রার মাথা কাটার হুকুম হতোজেনও তার মাথা কাটা দিতে রাজি হতো।” জীবনের বহু সময় তাঁরা একসঙ্গে কাটিয়েছেনগল্প-লেখালেখি নিয়েও একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতেন। জেনের যে একমাত্র অঙ্কিত জলরং ছবি রয়েছেসেটিও ক্যাসান্দ্রার আঁকা। জেনের মৃত্যুর পরদিন ক্যাসান্দ্রা এক চিঠিতে লেখেন, “সে ছিল আমার জীবনের সূর্যসকল আনন্দকে রাঙিয়ে তুলতদুঃখকে প্রশমিত করত। যেন আমার অস্তিত্বের একটা অংশ হারিয়ে গেল।” দুজনের কেউই শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেননি।

আসলেহর্নবির উপন্যাসের অন্তরালে যে রহস্যবৃত্তান্ত রয়েছেসেটি মূলত অবিবাহিত নারীদের দুর্বল অবস্থানতাঁদের আর্থিক ও সামাজিক দুর্দশার চিত্রকে সামনে নিয়ে আসে। তখনকার দিনে নারীরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না বা নিজের সম্পদ নিয়ন্ত্রণের সুযোগও ছিল কমঅনেক ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনের দয়ার ওপর নির্ভর করে থাকতে হতোযা সবসময় সহানুভূতিপূর্ণ ছিল না।

হর্নবি বলেন, “তখন নারীদের অস্তিত্ব জুড়ে ছিল অবরুদ্ধ অবস্থাপ্রতিটি দিন ছিল একেকটি ফাঁদ এড়িয়ে চলার মতো। আমরা এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু দেখি বলে বুঝি নাকিন্তু অস্টেনের উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তুই হলো নারীর এই অবরুদ্ধ অবস্থা। তাঁর সব নায়িকাই (এমমা ব্যতীত) উপন্যাসের শুরুতে কোনো না কোনো বিপদের মুখে। যেমন প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’-এর বেনেট পরিবারতাঁদের বাবা মারা গেলে মেয়েদের আর্থিক নিরাপত্তা থাকে নাঘরবাড়িও থাকে না। বিয়েই যেন তাঁদের একমাত্র রক্ষা-পদ্ধতিযা মিসেস বেনেট খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন। আমরা তাঁকে হাস্যরসাত্মক চরিত্র বলে পড়িকিন্তু তিনি আসলে বাস্তববাদীযিনি সামনে আসা বিপদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।

মিস অস্টেন” নাটকে রূপান্তর করেছেন আন্দ্রিয়া গিবযিনি বলেন, “এই উপন্যাসটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এতে সবকিছু রয়েছেরহস্যভালোবাসারোমান্সআর নারীদের অনন্য সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতার কথা। শুধুই রোমান্টিক প্রেম নয়বরং আজীবনের স্নেহ-মমতাময়ী বোনতুল্য ভালোবাসাও আছে। তৎকালীন সমাজে নারীরা পুরুষদের ওপর সম্পূর্ণভাবে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। ভালো বিয়ে’ ছিল টিকে থাকার মাধ্যমঠিক যতটা তা রোমান্টিক আকাঙ্ক্ষাও।

এই বছর জেন অস্টেনের জন্মের ২৫০তম বার্ষিকী। মিস অস্টেন” ছাড়াও বিবিসি দ্য আদার বেনেট সিস্টার” নামে আরেকটি নাটক নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছেযা জেনিস হ্যাডলো রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হবে এবং প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস”-এর মেরি বেনেটকে কেন্দ্রে নিয়ে গল্প এগোবে। নেটফ্লিক্সেও প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস”-এর আরেকটি রূপান্তর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এ বছরের শেষ দিকে বেরোবে ডিভনি লুজারের বই ওয়াইল্ড ফর অস্টেন: এ রেবেলিয়াসসাবভার্সিভঅ্যান্ড আনটেইমড লেগেসি”, যেখানে তিনি অস্টেনকে ঘিরে নিরীহগম্ভীরএকঘেয়ে” এমন সব প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দিতে চান। সব মিলিয়ে জেন অস্টেনের আবেদন এখনো অপ্রতিরোধ্য।

নাট্যরূপকার আন্দ্রিয়া গিব মনে করেন, “জেন অস্টেনের চরিত্রগুলো যুগে যুগে টিকে আছেকারণ তিনি সার্বজনীন অনুভূতি আর সমাজের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আজকের নারীদের জন্যও তাঁর বক্তব্যের যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা আছে। তরুণীবয়স্কযে কেউই তাঁর লেখায় নিজেদের খুঁজে পেতে পারেন। তিনি মানুষের আচরণকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেনসেই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত ব্যঙ্গধর্মী ও হাস্যরসাত্মক।

আর আমরা ক্যাসান্দ্রাকে বেশ কিছুটা সহানুভূতিতেই দেখতে পারি। কারণনিজের ব্যক্তিগত রসাত্মক বা বিদ্রূপাত্মক চিঠি বা বার্তা কে-ই বা চায় সারা বিশ্বের সকলের কাছে প্রকাশ পাক?