দিলরুবা আহমেদ
আমাদের সাথে আমাদের ক্লাসে অনেক ছেলে ছিল, আমরা ক্লাসে ছিলাম নয় কি দশটি মেয়ে , বাকি আশি জনই ছেলে। অনেকেই কোথায় হারিয়ে গিয়েছে আজ আর তা জানা নেই। আবার তাদের অনেকেই চট্ট্রগ্রামে থাকে। নাম ভুলে গেছি হয়তোবা, হয়তোবা ভার্সিটি জীবনে একদিনও কথা বলা হয়নি, তাতে কি! আজ এতো বছর পর মনে হচ্ছে ওরাই তো আমার বন্ধু।একই ক্লাসে একই সাথে বসে কত বেলা কাটিয়েছি একই শিক্ষকের দিকে চেয়ে থেকে।আমার সতীর্থ তারা।
কি অবাক কান্ড! টেলিপ্যাথি যেন।আমাদের লোক প্রশাসনের আরিফ মেসেজ পাঠাচ্ছে যখন আমি দাড়ায়ে রয়েছি সেই ভার্সিটির রেল স্টেশনে, ভাবছি ওদেরই কথা।সে বলছে, তোমার সাথে উৎপল , জিয়া , নাসের, আনোয়ার, পিন্টু, মঈন, শফিক, মুকুল ভাই আরো অনেকে মিলে দেখ করতে চাইছে একটা রেস্টুরেন্টে। আমারও মন নেচে উঠলো ওদের দেখবার জন্য। আমি এসেছি জেনে তাদের খুব দেখা করার ইচ্ছে। আমারও সাধ হয়েছে তাদের দেখবার।ওদের এতো বছরে নিশ্চয়ই বিয়ে হয়ে গিয়ে ওরা ছেলে মেয়ের বাপও হয়ে গেছে বহুকাল আগেই। কেমন হলো ওদের সংসার-জীবন- জীবিকা, সব জানতে ইচ্ছে হতে লাগলো। কত সময় পেরিয়ে গেছে। ওদের চুলেও পাক ধরে গেছে কম বেশি অবধারিত অনিবার্য ভাবেই। আমার মাত্র কয় দিনের চট্রগ্রামে এই বেড়াতে আসাতে সময়ের স্বল্পতা খুব প্রকট। জানালাম তাই বাসায় পৌঁছে আম্মার সাথে আলাপ করে জানাবো।
রিক্সাওয়ালাকে আমি রিকশা থেকে স্টেশনে নেমেই বলেছি চা কিনে কিমা পরোটা দিয়ে খেয়ে নিতে, সেই সকাল থেকে সে আমাকে নিয়ে চট্রগ্রাম শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে।এদিক ওদিক সেদিক কতদিকে গেলাম, চড়ে বেড়ালাম।এখন দূর থেকেই দেখছি সে খাচ্ছে। আমাকেও সে ওই দিকে যেতে যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চা পানে। বাংলার অতিথিয়তায় মুগ্ধ আমি। পুরা চট্ট্রগ্রামবাসীর পক্ষে একজন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাইবা কম কি !! আমি আনন্দিত। আমার সেই আনন্দকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে এই মাত্র আমার একদার সহপাঠীরা, আমাকে তারা পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ।
ষোলো শহর স্টেশনে আসতে আসতে দেখেছি, চট্ট্রগ্রাম মেডিকেলের পাশে প্রবর্তক সংঘ এর উল্টোদিকে আডং ছিল, নেই আর এখন। অনেক নতুন নতুন খাবারের দোকান হয়েছে কিন্তু আমার চেনা দোকানগুলো আর নেই।পিচ ঢালা পথের পাশে এখন আছে প্রচুর ফেরিওয়ালা। ফকিরও কম না। অনেক ভিড় চারদিকে।মেডিকেলের পাশ দিয়ে চলে গেলে সোজা গোল পাহাড়ের মোড়।ওখান থেকে বাম দিকে গেলে আছে একটি কবরস্থান, ওয়ার সিমেট্রি। আছে কি ওটা এখনো, কেমন হয়েছে দেখতে কে জানে।আমি কখনো ভিতরে ঢুকিনি তাই জানি না কেমন ছিল তখন। কেবল গল্প শুনেছি। অনেক গল্প অনেকের, হ্যা ওই প্রেমের গল্প। আমি পাশ দিয়ে হেলে দুলে হেটে হেটে চলে যাচ্ছে এক মানুষকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো, জানি না, তরুণ ইয়াং কাউকে জিজ্ঞেস করুন, তারা যায় ওখানে প্রেম করতে।তারপর বললো, নিজেই গিয়ে দেখে আসুন না।বললাম না আমার তরুণ বয়স চলে গেছে বহুদিন আগে।তবে বুঝলাম যার তার সবার সাথে কথা বলে বেড়ানো বন্ধ করতে হবে, ওরা সবাই বিদেশ থেকে আসেনি আমার মতন যে দেশবাসীর সাথে কথা বলতে ব্যাকুল হয়ে উঠবে। বরং ভাঙা বাঁশির মতন বেসুরেই বাজতে চাইলো। মনে হলো আমার, ওদের আটপৌরে সাদামাটা জীবনে কারো আন্তরিকতার বা আনন্দের সংগীতের ধ্বনি যেন হুঙ্কার হয়ে শব্দ তুলছে।লোকটা খুব বিরক্ত হয়েছে এরকম ভঙ্গিতে গট গট করে হেটে চলে গেলো।’হেইট ইউ’ – বলতে পারলে ভালো লাগতো।কিন্তু ভাবলাম ‘হেতে আর কন’ ! ‘আপ হামারা কোন হেয়’! লেট্ ইট গো।যেতে দিলাম।যাপিত জীবনে যেতে দিতে পারাই জীবনযাপন ঝঞ্ঝাট মুক্ত রাখার জন্য সবচেয়ে বড় পারা।যেতে দাও, বাদ দাও, প্যারা নিয়ো না।জীবন এগিয়ে যাক হুইসেল বাজিয়ে আকাঁবাকাঁ মেঠো পথ চিরে ছিড়ে ফুটে তরতরিয়ে। হিপ হিপ হুররে।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম স্টেশনের এই পারে। সামনেই কয়েকটা রেলের লাইন।এগুলো পেরুনোর পরে রয়েছে স্টেশন মাস্টারের ঘরটি, প্লাটফর্ম ওখানে। দেখলাম আমি এদিককার স্টেশনের যে কাঁচাপাকা সিমেন্টের উপর দাড়ায়ে রয়েছি তা থেকে প্রায় এক হাটু নিচে নামতে হবে তারপর ওই তিনটা কি চারটা রেললাইনের উপর দিয়ে হেটে প্লাটফর্মে পৌঁছাতে হবে। আগে তো মনে হতো সমান ছিল, এখন এতটা দেবে গেলো, নেমে গেলো! দৌড়ে দৌড়ে পৌঁছে যেতাম ঐপারে। তখন হয়তোবা ঐটুকু উঁচু নিচু ম্যাটারই করতো না। দুর্বার দুরন্ত ছিল গতিবেগ। আজকে এতো কাছে এসেও পেরুতে ইচ্ছে হলো না এই বন্ধূর পথ। উপর দিয়ে গেছে ওভার ব্রিজ, ওটা দিয়েও পার হয়ে যাওয়া যাবে স্টেশনের ঘরটিতে। উঠলাম না ওদিকেও। সেদিনের সাথীরা কেও নেই, একা আর কে যায়! কিছু বাচ্চা ছেলে পিচ্চিপাচ্চি বসে রয়েছে সিঁড়িতে, আমাকে দেখার পর থেকে উৎসুক চোখ ওদের আমার দিকে।ওরা এগিয়ে এসে বললো, ওদের সাথে সেলফি তুলতে। আমি হেসে দিলাম। খুবই চৌকস বাচ্চা বাহিনী।ছবি তুললাম চারদিকের।ওরা বিভিন্ন রকমের পোজ দিলো। ছবি তুললাম ওদের সাথে পাশে দাঁড়িয়ে।ওদের গান শুনলাম। আমি যে পুরাই অচেনা তাদের কাছে, তা যেন তারা আমলেই অনলো না, যেন গত কালকের সুন্দর সকালেই এখান থেকে ট্রেনে উঠতে আমি-ও এসেছিলাম, তাই তারা আমাকে মনে রেখেছে। ওরা জানালো এখানে এলে সবাই নাকি বাদাম খায়।কিনে ওদের সাথে বাদাম খেলাম। ওরা আমার চারপাশে খোসা ফেলে ফেলে বৃত্ত তৈরী করলো। আমার আগমনের উদযাপন যেন। জানতে চাইলাম ওদের কাছে এখানে আশেপাশে বিন নেই, ময়লা ফেলার ডাস্টবিন, ওরা হাসতে লাগলো। একটু বড় একজন বললো, আমরা থাকি ডাস্টবিনেই। ওদের কথায় ওরা নিজেরাই কুটি কুটি করে হেসে একে ওপরের দিকে গড়িয়ে পরতে লাগলো। আমার হাত থেকে আমার খাওয়া বাদামের ছিলকাগুলো নিয়ে একজন আকাশের দিকে ছুড়ে ছুড়ে মারতে লাগলো।আরেকজন টোকাই বললো, আমেরিকা চলে যান আপা, ওখানে রাস্তায় রাস্তায় ডাসবিন পাবেন।
আমি জানালাম না আমি কোথা থেকে এসেছি, আমার আবাস কোথায়।বললাম না, তোমাদের কোথায় পাবো ওখানে! আমি জানি এতো অযত্নে ধুলাতে গড়াগড়ি খাওয়া অথচ মুখ ভরা হাসিতে মাখামাখিময় এতগুলো চমৎকার শিশু আমাদের দেশের মতন গরিব কোনো দেশেই কেবল পাবো।
ফেইসবুকে একটা লাইভ দেবো কিনা ভাবলাম, বলবো, দেখো আমি দাড়ায়ে আছি চট্ট্রগ্রামে। কিন্তু ফেইসবুক খুলতেই চমৎকার একটা পোস্টার উড়ে এলো। পোস্টারটা আমার জন্য খুবই প্রযোজ্য তবে দিলাম আপনাদের জন্যও।
এই রিকশা, যাবে ?
হ্যা, কোথায়?
ছোটবেলায়!
এবার হেসে রিক্সাওয়ালা বলে ,
এই অবেলায় ওতো দূরে!!
হায়, এ যেন আমার জন্যই পোস্টার হয়ে ফুটে উঠেছে ফেইসবুকে। ফেইসবুক যে সবার কথা শুনছে গোপনে আড়ি পেতে তা কি সত্যি নাকি!! আমি ভয় পেয়ে দ্রুত ফোন থেকে ডিলেট করে দিলাম ফেসবুকের এপ। কিন্তু জানি দুই ঘন্টা না যেতেই এই এপ আবার আপলোড করবো।ফেইসবুক এখন আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে।
ষোলো শহর স্টেশন থেকে বের হতেই রিক্সাওয়ালা যাকে আগে বলে রেখেছিলাম কোথায় কোথায় যাবো, তার থেকে মনে রেখে সে বললো, চলেন একটানে ওয়ার সেমিট্রি ঘুরায়ে আনি, দেশে থাকতে কত জায়গায় কেও কখনো যায় না, যাবো যাবো করেই সময় পার করে দেয়, পরে বিদেশে গেলে মনে পরে।মন পুড়ে।
আমার যেতে ইচ্ছে হলো না।যেখানে কোনো স্মৃতি নেই, গিয়ে কি মিলাবো সেখানে! আর তাছাড়াও কবরস্থানে কেও একা একা যায় কি? নেহ, না।জিন্দা থাকলে যায় না, মরে গেলে তো আর কি করার আছে, একা একা থাকবার জন্য যেতেই হবে।
ওই দিকে যাওয়া হবে না। তবে আগের শোনা গল্প থেকে বেছে বেছে তুলে নিয়ে কয়েকটা দিল ধাড়কানো মন মাতানো নীহারিকার আবির মাখানো জাম্পেশ কিশোর প্রেমের গল্পও তৈরী করে ফেলবো আজ রাতেই, শুয়ে শুয়েই, এরকমই ভাবলাম। স্মৃতির ডালায় না পেলে, না রেখে ফেলে, পাতায় কাগজে তুলে রাখা ভালো। শোনা কথার স্মৃতিও অপচয় না করাই শ্রেয়।এখন যাচ্ছি না ওই পথে, এখন যাবো মিমিতে, মিমি সুপার মার্কেটে। আমাদের ছোটবেলাকার সেই প্রিয় মিমি চকোলেট এর কথা মনে এলো।ছোটবেলাকার সবকিছুই বড় মধুময়।
চললাম মিমি সুপার মার্কেটের দিকে। চট্রগ্রাম বিপনী বিতান তথা নিউ মার্কেটে যেতে পারলে দারুন হতো। কিন্তু জুবিলী রোড বেশ দূরে এখান থেকে। আমার জন্মেরও আগে স্থাপিত এই মার্কেটের মাঝখানে গোল গোল করে ঘূর্ণায়মান চক্রের মতন করে উঠে যাওয়া বিশাল চওড়া প্রশস্ত রাস্তার মতন ধাপবিহীন সিঁড়ির কথা আজও মনে আছে। এতো দেশের এত মলে গিয়েছি কিন্তু ঐরকম ঘুরে ঘুরে উঠে যাওয়া রাস্তা আর দেখিনি। এস্কেলেটরও সেই ছোট বেলাতেই জীবনে প্রথম এই মলে দেখেছিলাম। তখন এস্কেলেটরে উঠতেও সবাই ভয় পেতো। নিউ মার্কেটের সামনেই রিয়াজউদ্দিন বাজার,অথচ তখনো যাওয়া হয়নি,এখনো যাওয়া হয়নি।টেরি বাজারও পরিচিত নাম, কিন্তু যাওয়া হয়নি কোনো দিন।চট্রগ্রামের কত জায়গায় না গিয়েই আমি অন্য কোথাও চলে গিয়েছি।
আসতে আসতে পিছনে রেখে এলাম পাঁচলাইশ থানা, পাসপোর্ট অফিস, এক সময়ের পুরাতন লুসির পার্লারটি, এখন কোথায় পার্লারটি সেটি জানি না। তারপরে প্রবর্তকের মোড় পেরিয়ে গেলাম মিমি সুপার মার্কেট।
আসার পথেই মুরাদপুর বাস স্টেশনের কাছেই নতুন একটা মসজিদ হয়েছে ( আমার কাছে নতুন, হয়তো হয়েছে অনেক আগে, কিন্তু আমার চট্রগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পরে ), তাতে রিকশা থেকে নেমে দাড়ায়ে রিক্সাওয়ালা পানির তৃষ্ণা মিটিয়েছে।সর্বসাধারণের পানি পানের সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে দেখলাম। তখনি রিক্সাওয়ালা ভাইটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নাম কি আপনার? সাথে সাথে সেলুটের ভঙ্গিতে সোজা হয়ে দাড়ায়ে শার্টের কলার ঠিক করে নিয়ে বললো, আবুল আফজাল চৌধুরী। নাম জিগ্গেস করাতে সে বেশ খুশি।কিন্তু নাম বলতে এমন সেলুট ভঙ্গিতে যেতে কেন হবে আমি তা জানি না।নিজের নাম সবার-ই খুব প্রিয় আর আপন কিছু যেন, তাই হয়তোবা।
মিমি সুপারের পাশে আরেকটা নতুন মার্কেট হয়েছে। আফমি প্লাজা।ওটাতেই সে যেতে বললো, ওখানেই নামালো, তাই সই, আমি এখন বাংলার জনতার, যে যা বলে সব শুনি।নির্বিকারভাবে আছি সবার সাথেই একাত্ম হয়ে।
আমি জানতে চাইলাম ভাড়া কত হলো। বললো, দেন আপনার যা ইচ্ছে। আবারো জানতে চাইলাম।সে ওই এক কথা, দেন আপনার যা ইচ্ছে। দিলাম আমার যা ইচ্ছে।কম দেইনি তবে আমি দিয়ে অপেক্ষায় রইলাম সে বলুক আরো কিছু দেন। বললো না। আমি জানি না আমি যথার্থ দিয়েছি কিনা। কিন্তু সে কিছুই বললো না। সে চাইলেই পাবে কিন্তু চাইলো না।
বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভালোবাসাকেই ভালোবাসে। আমার মমতাটুকুর কাছেই যেন সে বিক্রি করলো তার শ্রমটুকু।
আফমি প্লাজায় একচক্কর এদিক ওদিক দিয়েই আমি বাসায় চলে এলাম। কেনার কিছুই নেই শুধু একটু উইন্ডো শপিং করা। আমি বিকেল শেষ হওয়ার আগেই ছুটতে ছুটতে বাসায় ঢুকলাম, আম্মা বলে দিয়েছেন অন্ধকার হওয়ার আগে আগেই যেন বাসায় ঢুকে যাই, আমি যেন এখনো সেই ভার্সিটির ছার্ত্রী, মাতৃ আজ্ঞা পালনে বাধ্য।
আম্মাকে আমাদের ক্লাসের ছেলেদের সাথে দেখা করতে যাবো বলা মাত্রই আম্মা না করে দিলেন।বললেন, বাপরে, রাতে কোথাও একা যেতে হবে না, কোনদিক থেকে কোন বিপদ এসে পরবে কে জানে। আমরা যে শুধু মা মেয়ে এসেছি চট্রগ্রামে এটা জানাজানি হলেও অসুবিধা আছে। আমাদের সাথে যে একজন ডাকসাইডের বডিগার্ড আছে আম্মা তাঁকে আমলেই আনছেন না। আম্মার ভাষ্য মতে সারাদিন যে একা একা শহরময় ঘুরে বেড়িয়েছি সেই-টাই অনেক বিপদজনক ছিল। এটা আমেরিকা নয় এটা বাংলাদেশ, এটা আমাকে বুঝতে হবে ইক্তাদি বললেন উনি।এখানে যে কি কি আমি বুঝিনি তাই আমি বুঝতে পারিনি।ঘোষণাও দিলেন, এতো চটাং চটাং করে ঘুরে বেড়ানোর দরকার নেই।আমি আমার শংকিত মাতাজানের কথা থেকে যে অশনি সংকেত আসছে তাই শুনে ঘাবড়ে গেছি এরকম ভাব করে একটা আদুরে আদুরে বিড়াল বিড়াল পুষি ক্যাট হয়ে ওনার আঁচলে ঢুকে লুকিয়ে থাকবার জায়গা খুঁজতে চাইছি এরকমই ভাব করলাম। উনি আমার বাঁদরামি বিটলামি সবই বুঝেন, তাই আমাকে বিশেষ পাত্তা দিলেন না।যেতে যেতে আবারো বলে গেলেন, ফড়িঙের মতন ফটাং ফটাং চটাং চটাং করে একা একা ঘুরে বেড়ানো খুবই ঠিক না।বেঠিক কাজ।
আমাদের সাথের এক রাজশাহীর বন্ধু (ছাত্র) প্রায় বলতো, চিটাগং এর মেয়েরা খুবই চটাং চটাং হয়, সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো।এটা কিরকম সেটা বুঝলাম না দেখে সে বলেছিলো, ওরা কথা বলতে গেলেই “না” বলে আগে। আমি জানি বাংলা ব্যাকরণে না বোধক অব্যয় ক্রিয়ার পরে বসে কিন্তু চাটগাঁইয়া ব্যাকরণে না বোধক অব্যয় সবসময় ক্রিয়ার আগে বসে। আমি যাবো না হচ্ছে , আঁই ন যাইয়্যুম। এটাকেই সে ইস্যু করেছে।বলতো সে সবাইকে এদের বিয়ে করা থেকে সাবধান। সারা জীবন সব কিছু থেকে না শুনবা। আমি নির্বিকার ভাবে সেদিন বলেছিলাম, নো ডিস্টিক্যালিজম প্লিজ, বিশ্বাস করিনা যে অমুক দেশের মানুষ অমুক তমুক ইক্তাদি, এই সব মানি না। আমার অধিকাংশ বান্ধবীই চিটাগোনিয়ান।দেয় আর ভেরি গুড।আসলেই তাই।তবে আমি হেসে বলতে ছাড়তাম না, রোজার সময় এক ট্রাক ইফতারি যাবে সেটা ভাবলে না কেন। কোরবানের সময় গরু ছাগল, কত কি যায়! আছে কি আজও চট্ট্রগ্রামের এই সব সো কল্ড খান্দানিবাজি? চট্রগ্রামের মেয়েদের তো এতো দিনে প্রচন্ড প্রতিবাদী হয়ে উঠা উচিত। ঝান্ডা উড়িয়ে একেক জনের প্রীতিলতার মতন প্রতিবাদী হয়ে উঠা উচিত। বলা উচিত, পেয়েছো কি আমাদের বাপদের! এনাফ।থামো এবার।আর যৌতুক নয়, বিবাহোত্তর লেনা দেনা নয়। তবে এবার এতো বছর পর এসে শুনলাম, সেই রাজশাহীর প্রচন্ড চট্রগ্রাম নারী বিরোধী পাবলিকটি বিয়ে করেছে চিটাগোনিয়ান মেয়ে, হায় কপাল, তাহলে নথ কেন খসালি! আমি ওকে দেখে চোখ নাচবো বলে ভাবলাম, কিন্তু দেখাই তো হচ্ছে না কারো সাথে। আমার তো ধারণা সে সেই প্রথম থেকেই সেই মেয়েটিকে ভালোবাসতো আর তাই তার নজরে পড়বার জন্য চট্রগ্রামের মেয়েদের নিয়ে আবোলতাবোল মন বানানি পেট জ্বালানি গাল ফুলানি সব কথা বলতো সারাক্ষন।দেখা পেলে জানা যেতো সব। কিন্তু এবার আর দেখা হচ্ছে না। আম্মা ফুল স্টপ দিয়ে দিয়েছেন।