(ইউএনবি থেকে অনূদিত)
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশ এবং ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রসারিত, যার প্রায় ৬০% বা ১০,০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা বাংলাদেশের সীমায় পড়েছে। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং ১৯৯২ সালে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃত এই অনন্য প্রতিবেশ-ব্যবস্থা অসংখ্য প্রাণবৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল এবং বিপন্ন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয় হিসাবে পরিচিত। এই অসাধারণ বনভূমির ইতিহাস, প্রতিবেশ ও রহস্য জানতে চাইলে, ইংরেজি ভাষায় লেখা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।
১. The Man-Eating Tigers of Sundarbans —মন্টগোমেরি
সাই মন্টগোমেরির লেখা The Man-Eating Tigers of Sundarbans বইটি সুন্দরবনের এক অনন্য অনুসন্ধান। বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বিরল বৈশিষ্ট্যের বাঘের বাস।
মন্টগোমেরির বর্ণনায় সুন্দরবনের বাঘকে ঘিরে নানা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তিনি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, স্থানীয় লোককথা আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে বাঘের আচরণ, সুন্দরবনের দুর্গম জলাভূমির পরিবেশ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাঘের জটিল সম্পর্ক তুলে ধরেছেন, যেখানে মানুষ বাঘকে একদিকে শ্রদ্ধা করে, আবার অন্যদিকে ভয়ও পায়।
সমালোচকরা মন্টগোমেরির লেখনীকে প্রশংসা করেছেন, যেখানে তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পেরেছেন। তার লেখা সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় শৈলীতে পরিপূর্ণ, যা জটিল বিষয়কেও পাঠকদের কাছে সহজবোধ্য করে তোলে।
সব মিলিয়ে, The Man-Eating Tigers of Sundarbans বইটি বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় অঞ্চলের গভীরে নিয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বর্ণনাকে একত্রে উপস্থাপন করে বইটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও আকর্ষণীয় চিত্র এঁকেছে।
২. The Bangladesh Sundarbans — এনায়েতুল্লাহ খান
২০১১ সালে প্রকাশিত এনায়েতুল্লাহ খানের The Bangladesh Sundarbans বইটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের একটি বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরে। এখানে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবনে বসবাসকারী মানুষের জীবনধারা, বিশ্বাস, সামাজিক আচার এবং বনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তাদের গভীর সম্পর্কও আলোকপাত করা হয়েছে।
এই বইটিতে লেখক সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। বন থেকে সম্পদ আহরণকারীদের জীবনযাত্রা এবং বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত একটি ধারণা দেওয়া আছে। The Bangladesh Sundarbans বইটিতে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক বাঁধ হিসেবে কাজ করে।
বইটিতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য, সেখানকার মানুষ আর বন্যপ্রাণীর ছবি সংযোজন করা হয়েছে, যা পাঠকদের সামনে একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।
সমালোচকরা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ব্যাপক চিত্রায়নের জন্য বইটিকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে যারা সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র আর স্থানীয় মানুষের পারস্পরিক নির্ভরশীল সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি অত্যন্ত মূল্যবান।
৩. Sundarbans and its Ecosystem Services: Traditional Knowledge, Customary Sustainable Use and Community-Based Innovation
সম্পাদনা: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
এই সংকলনে সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান, প্রথাগত টেকসই ব্যবহার এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম একক অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা, এর নানা মূল্যমান ও বাস্তুতান্ত্রিক সেবা (ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস) মূল্যায়ন করে দেখায় যে, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও আদিবাসী জ্ঞানের (ILK) ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই বন শুধু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৪ (জলজ প্রাণী) ও ১৫ (স্থলজ জীববৈচিত্র্য) পূরণে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অনেক লক্ষ্য পূরণেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে মানুষের প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে—সে আলোকে বইটি টেকসই উন্নয়নের নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানকে স্থানীয় ও বহু-শাখার (multi, inter এবং trans-disciplinary) জ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করে বইটি। প্রাকৃতিক সম্পদকে কেবল বাজারদৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করার ধারণাকেও বইটিতে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এর প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশের অংশ, বনের বাকি অংশটি ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই বন মূলত খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় বিস্তৃত।
এ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের সুন্দরবন নিয়ে ইংরেজি ভাষায় লেখা সেরা ৩টি বই পর্যালোচনা করেছি। সুন্দরবনের অবস্থান, ভূগোল, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে এগুলো পাঠকদের সহায়তা করতে পারে।