অর্চি অতন্দ্রিলা
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আবার বেশ অনেকগুলো সুপারিশও করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে যেমন বিচার প্রক্রিয়ায় সামনে এগোনোর জন্য সুবিধাজনক পথ সৃষ্টি হয়েছে, একই সাথে প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের জায়গাও রয়েছে।
এই প্রতিবেদনে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে যা আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং সেসবের সুবিচার হওয়া প্রয়োজন” বিবিসিকে বলছেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন।
কীভাবে কাজে আসবে এই প্রতিবেদন?
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের এই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বড় পরিসরে যে পরিমাণ তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে সেগুলো সামনের দিনগুলোতে বিচারকাজ এগিয়ে নিতে কাজে আসবে।
এমনকি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও বাংলাদেশ চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যেতে বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইতে পারে বলে মনে করছেন মি. মুনগোভেন।
“এগুলো আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সংরক্ষণ করেছি, যা ভবিষ্যতের জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যেকোনো বিচারিক প্রক্রিয়া যেন ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরিচালিত হয়” বলছিলেন তিনি।
এ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের দোষরদের বিচারের আবশ্যকতা, ন্যায্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা আরও অনেক বেশি স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছে। আমি মনে করি এটা বিচারকাজের সহায়ক ম্যাটেরিয়াল হিসেবে সাক্ষ্যমূল্য রয়েছে।”
বাংলাদেশের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং-এ বলেছেন, তারা যেসব তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছেন তার সাথে এই প্রতিবেদনের সাদৃশ্য রয়েছে এবং এটিকে “অকাট্য দলিল প্রমাণ হিসেবে এই আদালতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) ব্যবহার করা যাবে।”
তবে বাংলাদেশে বিচারকাজের চেয়ে সরকারের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করার প্রয়োজন বলে মনে করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্সের আইনের শিক্ষক আব্বাস ফয়েজ।
কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এমন গুরুতর বিষয় মোকাবিলা করার আগে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশে বিচারিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর এবং কার্যকর নয়।”
“একই সাথে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক বা অন্যান্য অগ্রাধিকারের জায়গা রয়েছে।”
“বিচার নিশ্চিত করার জন্য যে পরিমাণ রসদ যোগান দিতে হবে, সেগুলো সরকার অন্যদিকে ব্যবহার করতে পারতো যদি আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটর এই কাজগুলো সামাল দেয়ার কাজে থাকতো।”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো।
এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘সর্বজনীন বিচারব্যবস্থা’র সাহায্যে কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মনে করছেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্সের আইনের শিক্ষক আব্বাস ফয়েজ
‘সর্বজনীন বিচারব্যবস্থা’র আওতাভুক্ত দেশগুলোতে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের কেউ যদি অবস্থান করেন তাহলে সেখানে আন্তর্জাতিক আইন কাজে লাগিয়ে তাদের বিচারকাজ চালানো সম্ভব হবে বলছেন মি. ফয়েজ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ‘রোম সংবিধি’র ১২৫টি দেশ এর আওতায় পড়ে যার মধ্যে যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ এর স্বাক্ষরকারী হলেও ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীনসহ এশিয়ার অনেক দেশই এর আওতায় নেই। আমেরিকা, রাশিয়া আগে থাকলেও এ থেকে সরে গেছে তারা।
যদিও তাজুল ইসলাম বলেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে রাষ্ট্র আগ্রহী বা সক্ষম না হলে তখন আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) যাওয়ার প্রশ্ন আসে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সক্ষম এবং আগ্রহী হওয়ায় সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন নিয়ে যা বলে এসেছে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার একটা নির্ভরযোগ্য ভিত্তি সৃষ্টি হলো বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান।
তার মতে বিচারকাজ আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে এই প্রতিবেদন।
বিচার বিভাগ ও মৃত্যুদণ্ড
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে খাত অনুযায়ী বেশ অনেক ধরনের সুপারিশ রয়েছে।
যেসব খাত উল্লেখ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে–– জবাবদিহিতা ও বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক শাসন ও দুর্নীতি দমন এবং মানবাধিকার রক্ষা।
উদাহরণস্বরূপ জবাবদিহিতা ও বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে – অপরাধের নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত, দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে শাস্তি, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার, সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু, মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাধীন তদন্তের আগ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা, বিচারকদের স্বাধীনতা রক্ষা ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা এবং এটিকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার বিষয়ে বিবেচনা, এমন বিষয় রয়েছে।
বাংলাদেশের মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে জোর দেয়া হয়েছে আবারও।
বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান মৃত্যুদণ্ডের বিধানের বিপক্ষে থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটা সমস্যার জায়গাও দেখছেন।
“মানুষ মৃত্যুদণ্ড কেন চায়? মানুষ যখন দেখে আরেকটা রাজনৈতিক দল আসছে এত দ্রুত এদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই, তখন মানুষ ভয় পেয়ে যায়।”
“সরকার বদলের সাথে সঠিক তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে ছাড়তে সমস্যা নেই।” কিন্তু বাংলাদেশের এমন বাস্তবতায় নির্ভরযোগ্য বিচারব্যবস্থার সাথে রাজনৈতিক ব্যবস্থারও সমস্যার জায়গা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন
বিচার বিভাগে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রভাব থাকা এবং সেজন্য এর স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ার কথা বলছেন মি. মুনগোভেনও। তবে যে কোনো অবস্থাতেই জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মৃত্যুদণ্ডের কারণে দেশ ছেড়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া অপরাধীদের দেশে ফেরানো বা প্রত্যর্পণ করা যায় না বলছেন আব্বাস ফয়েজও। মৃত্যুদণ্ডের বিধান অপরাধ কমাতে কার্যকর না, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়াকে জটিল করে বলে মনে করেন তিনি।
মৃত্যুদণ্ড বন্ধের সুপারিশের ক্ষেত্রে তাজুল ইসলাম বলেছেন, যেহেতু ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ক্ষমতা রয়েছে সেক্ষেত্রে তারা কী দণ্ড দেবেন বা দেবেন না “সে বিষয়টা পরে দেখা যাবে”।
বিচারকাজের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সুপারিশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলছেন “প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো আমরা সরকারে যারা কনসার্ন উপদেষ্টা আছি আমরা বসে অবশ্যই এটা বিবেচনায় নেবো, সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করবো।”
জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ
জাতিসংঘের সুপারিশের অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা
জাতিসংঘের সুপারিশে পুলিশ ও নিরাপত্তা খাতে মানবাধিকার নিশ্চিতে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যপরিধি সীমিত করা, এমন অনেক ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব ভেঙে দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন বড় প্রশ্নের জায়গা তৈরি হয়েছে, তেমন পরবর্তীতে বাহিনীগুলো কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে সেই প্রশ্ন ছয় মাস পরেও চলে যায়নি।
র্যাব বিলুপ্তি ও ডিজিএফআই (গোয়েন্দা সংস্থা) নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ‘সবাই বসে সিদ্ধান্ত’ নেয়া হবে বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও।
তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের যে সংকট অনেক জায়গাতেই হচ্ছে সেটা এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ছাড়াও যতটা বড় পরিসরে জাতিসংঘের সুপারিশ এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। একই সাথে এর বাস্তবায়ন পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করবে।
রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সুপারিশেও সুষ্ঠু নির্বাচন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় মানবাধিকার মান নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের মতো বিষয় রয়েছে।
নানা দিক থেকে দ্বন্দ্ব, সমালোচনা আর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
মি. ফয়েজ মনে করছেন, এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে সংস্কারের সুপারিশ প্রয়োজন ছিল। তার দৃষ্টিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দিক থেকে সামনের দিনে ক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কীভাবে শক্তিশালী ও পোক্ত করা হবে সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে না।
মি. ফয়েজের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলো মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকে এবং ক্ষমতায় গেলেই তারা বদলে গিয়ে দমন করার প্রবণতায় চলে যায়।
“প্রশ্ন হলো, এই চক্র কি আবারও চলতে থাকবে? নাকি এবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিকারের সংস্কার করবে?”
“তারা কি নিশ্চিত করবে যে যদি তারা ক্ষমতায় আসে, তাহলে অতীতের দমনমূলক নীতিগুলো পুনরাবৃত্তি হবে না?” বলছিলেন মি. ফয়েজ।
এছাড়াও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংস্কার, নাগরিক অধিকার রক্ষা এই দিকগুলোও বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আবার রাজনৈতিক দলগুলো চাইলেও সুপারিশগুলো কতটা বাস্তবায়ন হবে সে প্রশ্ন তুলছেন এলিনা খান।
“প্রতিবেদনের সুপারিশের অনেক কিছুই রাজনীতিবিদদের অনেকের সাথে ঠিক মিলবে না।” একই সাথে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও বাস্তবভিত্তিকের চেয়ে আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়া বেশি থাকায় এগুলো বাস্তবায়ন করা খুব বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যেটা অতিক্রম করা কঠিন বলে মনে করছেন তিনি।
আবার সরকারি ও বিরোধী দল যদি একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে তাহলে সেটা খুব কঠিন হবে না বলেও মনে করছেন মিজ খান।
জাতিসংঘ এরপর কী করবে?
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আরও বেশি উপস্থিতির মধ্য দিয়ে তাদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশাবাদ জানান রোরি মুনগোভেন।
পরবর্তী ফলো আপ পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার, নাগরিক সমাজ ও বিচার বিভাগের সাথে কাজ করার, সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করার কথা বিবিসিকে বলেন তিনি।
জাতিসংঘ এত বিস্তারিত তথ্যের পরও বাংলাদেশকে কেন সেগুলো আরও তদন্ত করার কথা বলছে–– সে প্রসঙ্গে মি. মুনগোভেন বলছেন, এগুলো তদন্তকারীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনায় প্রাথমিক পর্যায়ে কাজে দিলেও “আদালতে ব্যবহারের জন্য আরও গভীর ও নির্দিষ্ট অপরাধমূলক তদন্তের প্রয়োজন হবে।”
যদি ঘটনার ভিত্তিতে জাতিসংঘের কাছ থেকে বিচারকাজের জন্য আরও বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন হয় তাহলে জাতিসংঘে নিয়মানুযায়ী আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুমতিসাপেক্ষে ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে তথ্য দেয়া সম্ভব।
আর সামনের সংস্কারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এর মধ্যেই সরকারের সাথে অনেক ক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
“আমরা ইতিমধ্যে আইনি সংস্কারে সহায়তা দিচ্ছি, যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন।”
সামনের দিনগুলিতে “আমরা একটি স্বাধীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনে সহায়তা করতে পারি, যা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করবে। এছাড়া, আমরা মাঠপর্যায়ে উপস্থিত থেকে নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করতে পারি, যাতে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও প্রচারণা রোধ করা যায়,” বলেন মি. মুনগোভেন।
আওয়ামী লীগ কী বলছে?
শেখ হাসিনাকে দেখা না গেলেও অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ
মাঠের রাজনীতিতে না থাকলেও অনলাইনে বেশ সক্রিয় আওয়ামী লীগ। জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে বেশ অনেকগুলো পোস্ট করা হয়েছে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিবরণ তুলে ধরা হলেও আওয়ামী লীগ জোর দিচ্ছে ছয় নম্বর চ্যাপ্টারে যেটি ৭৮ পাতার প্রতিবেদনে ছয় পাতার অংশ।
কারণ সেখানে পাঁচই অগাস্ট পরবর্তী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাসমূহ ছাড়াও সাংবাদিক, সংখ্যালঘু বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মীয় বা জাতিগত গোষ্ঠীর ওপর হামলা নির্যাতনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে এই ছয় নম্বর চ্যাপ্টার পুরোটা বাংলায় তুলে ধরা হয়েছে।
এর সাথে অভিযোগ তোলা হয় যে এই বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং মিডিয়ায় প্রচার করতে দিচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে ছয় নম্বর চ্যাপ্টারের ভিত্তিতে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা গেছে।
এর আগে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘একপেশে’ উল্লেখ করে ‘সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ’কে উদ্ধৃত করে পোস্ট দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পেজে।
আবার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকারের খসড়া তালিকা অনুযায়ী ৮৪৩ জনের তুলনায় জাতিসংঘের ১৪০০ দাবি যথেষ্ট বেশি বলে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া জাতিসংঘের রিপোর্টে তিনটি সময়কালের (পহেলা জুলাই-চৌঠা অগাস্ট-পাঁচই ও আটই অগাস্ট, ৯ই-১৫ই অগাস্ট) বিষয়ে তথ্য থাকা আবশ্যক বলেও উল্লেখ করছে আওয়ামী লীগ।
একই সাথে নিহতের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের কত, রাজনৈতিক দলের কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কত সেটাও জানতে চাইছে দলটি।
বিবিসি নিউজ বাংলা