সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- শ্রমিক-কর্মচারীদের দেনাপাওনা পরিশোধের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছে
- বেক্সিমকো টেক্সটাইলস তাদের ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে
- বেক্সিমকো টেক্সটাইলস গত ছয় বছর ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৩২ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে
- ধাপে ধাপে ৪০০ কোটি টাকার ঋণ এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা পুনরায় চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছে
বেক্সিমকো টেক্সটাইলস সরকারি সহায়তা নিয়ে তাদের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের দেনাপাওনা পরিশোধের জন্য প্রায় ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা দরকার বলে তারা উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি কারখানাগুলো পুরোদমে চালু রাখতে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা হিসেবে মোট ৪০০ কোটি টাকার সিসি লোন এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা চেয়েছে গ্রুপটি। তারা মনে করে কারখানাগুলো বন্ধ না করে চালু রাখলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে।
শ্রম উপদেষ্টার কাছে আবেদন
- আবেদনের তারিখ ও প্রেক্ষাপট:
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন)-এর কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওসমান কায়সার চৌধুরী।
- কেন এই আবেদন:
বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত রিসিভার জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফ করা কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতেই চিঠিটি পাঠানো হয়।
আগের চিঠি ও আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন
- ৩০শে জানুয়ারির চিঠি:
এর আগেও বেক্সিমকো টেক্সটাইলস শ্রম উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা অব্যাহত রাখা ও ৪০০ কোটি টাকার সিসি লোন সহায়তা চেয়েছিল। - নতুন চিঠিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে:
- কারখানা বন্ধ ও শ্রমিকদের পাওনা শোধে প্রয়োজন ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা।
- আগামী চার মাসে (প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা হিসেবে) মোট ৪০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পেলে এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা সচল থাকলে কারখানা পুরোদমে চালু রাখা সম্ভব হবে।
ঋণ সহায়তা ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি নিয়ে বেক্সিমকোর বক্তব্য
- ধাপে ধাপে ৪০০ কোটি টাকার ঋণ:
চিঠিতে বলা হয়েছে, ধাপে ধাপে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা পুনরায় চালু রাখা হলে প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। - যে কোনো পরামর্শ গ্রহণের প্রস্তুতি:
বেক্সিমকো জানিয়েছে, সংকট সমাধানে শ্রম উপদেষ্টার যেকোনো পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা মানতে তারা প্রস্তুত।
সংকটের কারণ ও ভুল তথ্যের অভিযোগ
- সংকটের পেছনে ভুল সিদ্ধান্ত ও অনিবার্য পরিস্থিতি:
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অতীতে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং বাজারের অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে আজকের এই সংকট দেখা দিয়েছে।
- ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগ:
বেক্সিমকো বলেছে, মাঝে মাঝে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে আস্থার সংকট বেড়েছে।
ঋণের পরিমাণ ও কারখানার সংখ্যা নিয়ে সংশয়
- ৩১টি কারখানা ও ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ:
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশনের আওতায় ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও অপারেশনাল সেট-আপসহ মোট ৩১টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার বিপরীতে জনতা ব্যাংকের কাছে ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা। - ৪৫ হাজার কোটি টাকার তথ্য ভুল:
বেক্সিমকো দাবি করেছে, তাদের ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা হলেও কোথাও কোথাও ভুলভাবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও কর্মীসংখ্যা
- রপ্তানির গতি-প্রকৃতি:
- গত ছয় বছর ধরে বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশন প্রতি মাসে গড়ে ৩২ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে।
- ২০২২ সালে এ গড় বেড়ে প্রতি মাসে ৫৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
- কর্মীসংখ্যা হ্রাস:
২০২২ সালের জুলাই মাসে এই ডিভিশনে ৪৫ হাজার শ্রমিক-কর্মকর্তা কাজ করছিলেন; বর্তমানে এই সংখ্যা কমে ৩৫ হাজারে নেমেছে।
সংক্ষেপে, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সহায়তা চায়। তারা চায় ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা দিয়ে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে কারখানা সচল রাখা হোক এবং অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকার সিসি লোন ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা চালু থাকলে রপ্তানি অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত রিসিভার কারখানা বন্ধ করে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধই মূলত তাদের আবেদন।