০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • 20

শশাঙ্ক মণ্ডল

গীতিকা

বাংলার লোক-সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য শাখা গীতিকা। যুগ যুগ ধরে বাংলার অগণিত চাষিদের মধ্যে এই গীতিকাগুলি চলে আসছে। বিভিন্ন সময়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতরা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গীতিকাগুলি সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছেন এবং তা অনুবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে। সুন্দরবনের চাষিদের মধ্যে বিভিন্ন পালা প্রচলিত ছিল, এ সব পালা অনেক সময় পাঁচালী যাত্রার ঢঙে শ্রোতাদের সামনে পরিবেশিত হত।

জরিনা, রূপভান পালা, রাখালবন্ধু, সাগর ভাসা, রুমনি ঝুমনি পালা, দুখে ধনার পালা প্রভৃতি জনচিত্তকে আলোড়িত ও মুগ্ধ করত। এই পালাগুলির লেখক কে তা জানা যায় না। বিভিন্ন মানুষের হাতের ছোঁয়া এসব পালায় পড়েছে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। এসব গীতিকার ধর্মনিরপেক্ষ উদার মানবীয় রস শ্রোতাদের মুগ্ধ করত। এসব পালায় নারী চরিত্রগুলি বিশেষ ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, প্রেম সতীত্ব মূল্যবোধের জন্য সর্বংসহা নারী হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেয়েছে।

রূপভান পালা

খুলনা বরিশাল ফরিদপুর এলাকার সব চাইতে জনপ্রিয় পালা হিসাবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রতিষ্ঠ পেয়েছিল। লেখক কে জানা যায় না। কিন্তু কাহিনীটির ওপর বিভিন্ন কবির হাতের প্রলেপ গড়েছে; পালাটির বিভিন্ন চরিত্রের মুখে উচ্ছ্বাসময় সংলাপ থাকলেও যথেষ্ট নাটকীয়তা লক্ষ করা যায়। এই পালায় রূপভান ও তার স্বামীর কাহিনীর মধ্যে পল্লীজীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের কাহিনী এসে মিশেছে। গ্রামের পোদ্দার রূপভানের দেওয়া বকশিস ঠকিয়ে নিচ্ছে মাঝিদের কাছ থেকে।

ওরা যখন বুঝতে পারল পোদ্দার মূল্যবান মাণিকের পরিবর্তে তাদের মাত্র দু আনা দিয়েছে তখন তারা নদীতীরে কাঁদতে লাগল। এ দৃশ্য রূপভান পালার এক অপূর্ব সৃষ্টি এবং সুন্দরবনের কৃষকের জীবনে এ এক প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা। শাহেদ বাদশার পাঠশালার শিক্ষক-ছাত্রদের কথাবার্তা পড়াশুনার মধ্যে যে অপূর্ব হাস্যরস মিশ্রিত নকশার পরিচয় ফুটে ওঠে তা আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য-পাঠশালার একটি বাস্তব চিত্র।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬২)

১২:০০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

গীতিকা

বাংলার লোক-সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য শাখা গীতিকা। যুগ যুগ ধরে বাংলার অগণিত চাষিদের মধ্যে এই গীতিকাগুলি চলে আসছে। বিভিন্ন সময়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতরা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গীতিকাগুলি সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছেন এবং তা অনুবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে। সুন্দরবনের চাষিদের মধ্যে বিভিন্ন পালা প্রচলিত ছিল, এ সব পালা অনেক সময় পাঁচালী যাত্রার ঢঙে শ্রোতাদের সামনে পরিবেশিত হত।

জরিনা, রূপভান পালা, রাখালবন্ধু, সাগর ভাসা, রুমনি ঝুমনি পালা, দুখে ধনার পালা প্রভৃতি জনচিত্তকে আলোড়িত ও মুগ্ধ করত। এই পালাগুলির লেখক কে তা জানা যায় না। বিভিন্ন মানুষের হাতের ছোঁয়া এসব পালায় পড়েছে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। এসব গীতিকার ধর্মনিরপেক্ষ উদার মানবীয় রস শ্রোতাদের মুগ্ধ করত। এসব পালায় নারী চরিত্রগুলি বিশেষ ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, প্রেম সতীত্ব মূল্যবোধের জন্য সর্বংসহা নারী হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেয়েছে।

রূপভান পালা

খুলনা বরিশাল ফরিদপুর এলাকার সব চাইতে জনপ্রিয় পালা হিসাবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রতিষ্ঠ পেয়েছিল। লেখক কে জানা যায় না। কিন্তু কাহিনীটির ওপর বিভিন্ন কবির হাতের প্রলেপ গড়েছে; পালাটির বিভিন্ন চরিত্রের মুখে উচ্ছ্বাসময় সংলাপ থাকলেও যথেষ্ট নাটকীয়তা লক্ষ করা যায়। এই পালায় রূপভান ও তার স্বামীর কাহিনীর মধ্যে পল্লীজীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের কাহিনী এসে মিশেছে। গ্রামের পোদ্দার রূপভানের দেওয়া বকশিস ঠকিয়ে নিচ্ছে মাঝিদের কাছ থেকে।

ওরা যখন বুঝতে পারল পোদ্দার মূল্যবান মাণিকের পরিবর্তে তাদের মাত্র দু আনা দিয়েছে তখন তারা নদীতীরে কাঁদতে লাগল। এ দৃশ্য রূপভান পালার এক অপূর্ব সৃষ্টি এবং সুন্দরবনের কৃষকের জীবনে এ এক প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা। শাহেদ বাদশার পাঠশালার শিক্ষক-ছাত্রদের কথাবার্তা পড়াশুনার মধ্যে যে অপূর্ব হাস্যরস মিশ্রিত নকশার পরিচয় ফুটে ওঠে তা আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য-পাঠশালার একটি বাস্তব চিত্র।