শশাঙ্ক মণ্ডল
রূপভান রহিমকে নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। পরদিন শিক্ষকের মুখে রহিম জানতে পারে রূপভান তার স্ত্রী। তাঁর স্ত্রীকে পরীক্ষা করার জন্য গনকের বেশে রপভানের নিকটে এসে তার হাত দেখতে চাইলে সে তা প্রত্যাখান করে এবং বলে তার স্বামী ছাড়া কাউকে হাত ধরতে দেবে না। গনক জোর করে হাত ধরতে গেল; রূপভান রেগে গনকের দাড়ি ধরে টান দিতেই নকল দাড়ি খুলে গেল। গ্রামীণ জনতাকে খুশি করার মতো হাসির উপাদান যথেষ্ট রয়েছে এই পালায়। সীতার অগ্নিপরীক্ষা, নাটকীয়তা, হাস্যরস সব উপাদান পালার মধ্যে লক্ষ করা যাবে।
ইতিমধ্যে বার বৎসর অতিক্রান্ত হল। রূপভান নিজে উদ্যোগী হয়ে তাজোলের সাথে রহিমের বিয়ের ব্যবস্থা করল; রহিম দুই স্ত্রী তাজোল এবং রূপভানকে নিয়ে দেশে ফিরে এল। এখানে কাহিনীর শেষ। এই কাহিনীটি যাত্রা পালা হিসাবে আবার পাঁচালী গানের ঢঙে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হত খুলনা বরিশালের বিভিন্ন প্রান্তে। কাহিনীর আকর্ষণ পালাটি সে যুগে দর্শকচিত্তকে আলোড়িত করত। বিভিন্ন গ্রামে এই পালা বিভিন্ন দল অনুষ্ঠান করে ফিরত। যদিও উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলায় বগুড়া দিনাজপুরে বহুল পরিচিত ‘রূপধন কইন্যা’ পালার সাথে এর অনেক জায়গায় মিল লক্ষ্য করেছেন বাংলার লোকগীতি কথার চিত্তরঞ্জন দেব। উক্ত পালার সাথে রূপভান পালার ক্ষেত্রে অনেকগুলি স্থানে অমিল লক্ষ করা যায়।
খুলনা জেলার দেবহাটা থানার একটি পুরানো যাত্রাদলের হাতের লেখা পুঁথি অনুসরণ করে এই কাহিনীর সারাংশ বর্ণনা করা হল। এখানে গুরু রূপভান এবং রহিমকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছেন; ভাষার ক্ষেত্রে খুলনার আঞ্চলিক ভাষা লক্ষ করা যাবে; অবশ্য রূপধন কইন্যার ডাকাতদের কাহিনী এই পালায় অনুপস্থিত তা লক্ষ করা যাবে।
সতী রুমুনা ঝুমুনা পালা
সুন্দর বনের বিভিন্ন অংশে এই পালার ভিন্নরূপ লক্ষ করা যায়। গীতিকাটি শুরু হয়েছে বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতু ইন্দ্রধ্বজ পূজা করে তার রাজত্বকে দ্বিতীয় স্বর্গে পরিণত করার প্রয়াসী হয়েছেন। সেজন্য গঙ্গা দেবীকে নিজের দেশে আনতে চান কিন্তু ইন্দ্র এবং গাজী পীরের চক্রান্তে সে আশা সফল হল না। গঙ্গা দেবীর ক্রোধে এবং গাজী পীরের শত্রুতায় চন্দ্রকেতুর রাজ্য রাজধানী সবই ধ্বংস হল। দৈবক্রমে সেই বংশের একজন ভাসতে ভাসতে আরও দক্ষিণ ভাটি দেশে বসতি স্থাপন করলেন। তিনি বাদাবনের অধীশ্বর দক্ষিণ রায়ের সেবায়েত হয়ে সুখে বসবাস শুরু করলেন। পরে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বনবিবির ভক্ত হয়ে পড়েন।