০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • 22

শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রবাদ

কবে কোন সুদূর অতীতে মানুষের জীবনাভিজ্ঞতা আপন রসবোধের মাধ্যমে স্বতোৎসারিত হয়েছিল প্রবাদের মাধ্যমে তা আজ ইতিহাসের আড়ালে হারিয়ে গেছে কিন্তু অতীতের মানব-অভিজ্ঞতার সেই ফসল আমাদের কালে এসে ভিড়েছে। জেমস লঙ থেকে শুরু করে ডঃ সুশীল দে, ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য বাংলাদেশ একাডেমির (ঢাকা) মোঃ হানীফ, ডঃ এনামুল হক সাহেব প্রমুখ গবেষক প্রবাদ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য আলোচনা করেছেন।

সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাদ ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রন্থে স্থান পেয়েছে কিন্তু অনেক প্রবাদ গবেষকদের নজরের বাইরে এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে। সেভাবে এগুলিকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আধুনিক জীবনে এই প্রবাদগুলি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির তলে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলির মধ্যে নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যাবে সমাজ ও ব্যক্তিমানসের পরিচয়, প্রবাদগুলির মধ্যে জীবনের বহুবিচিত্র রূপ লক্ষ করা যাবে- কখনও তা তীক্ষ্ণ, কটু শ্লেষ এবং সেই সঙ্গে পরিহাস।

ব্যবহারকারীদের রুচির স্থূলতা অনেক প্রবাদে লক্ষ করা যাবে। আঞ্চলিক ভাষা-বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখার প্রয়োজনে এগুলিকে যথাযথ ভাবে সংকলনের প্রয়োজন আছে। গ্রামীণ সমাজজাত বলে এর মধ্যে একধরনের গ্রাম্যতা লক্ষ করা যায়। এর ভাষা দৈনন্দিন জীবনের ভাষা, জীবনের ঘনিষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। সুতরাং একে জীবনচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করা সঙ্গত নয় এবং সেই সাথে অনুচিত কোন সংশোধন।

সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত প্রবাদগুলিতে এই সব এলাকার সমাজ পরিবার ব্যক্তিমানসের যথার্থ চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেকগুলি প্রবাদের উৎপত্তি সুপ্রাচীনকালে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। স্থানীয় লোকচরিত্র সমাজজীবন, অতীত ইতিহাসের অনেক টুকরো স্মৃতি ধরা পড়ে। আজকের যুগেও গ্রামীণ মানুষরা বিশেষ করে বৃদ্ধারা কথায় কথায় এই প্রবাদগুলি ব্যবহার করে থাকেন। ভাষাতত্ত্বের চর্চা, লোকসাহিত্যের চর্চা কিংবা সামাজিক ইতিহাস রক্ষার উপাদান হিসাবে এদের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার কমছে, ফলে লোকভ।যা থেকে এরা প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের মানুষ- অভাব তার নিত্যসঙ্গী। সামাজিক ধনবৈষম্যের সে শিকার। সেই অসহায় গরিব মানুষ ধনীর অর্থসম্পদ ঐশ্বর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয় আবার কখনও নির্লিপ্ত হয়ে বলে ওঠে- ‘বেল পাগলে কাগের কি? ‘পরের ভাত দাও ঠেসে যায় যাক আমার বকলী (পেট) ফেঁসে।’ সব সময় অবস্থাপন্ন মানুষদের মতো সব জিনিস সে ভোগ করতে পারে না। বছরে কোন একটা জিনিস একবারমাত্র পেয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সুতরাং সে’ বছর খোঁড়া করার’ স্বপ্ন দেখে একবারমাত্র আস্বাদনের মধ্য দিয়ে।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৭)

১২:০০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রবাদ

কবে কোন সুদূর অতীতে মানুষের জীবনাভিজ্ঞতা আপন রসবোধের মাধ্যমে স্বতোৎসারিত হয়েছিল প্রবাদের মাধ্যমে তা আজ ইতিহাসের আড়ালে হারিয়ে গেছে কিন্তু অতীতের মানব-অভিজ্ঞতার সেই ফসল আমাদের কালে এসে ভিড়েছে। জেমস লঙ থেকে শুরু করে ডঃ সুশীল দে, ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য বাংলাদেশ একাডেমির (ঢাকা) মোঃ হানীফ, ডঃ এনামুল হক সাহেব প্রমুখ গবেষক প্রবাদ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য আলোচনা করেছেন।

সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাদ ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রন্থে স্থান পেয়েছে কিন্তু অনেক প্রবাদ গবেষকদের নজরের বাইরে এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে। সেভাবে এগুলিকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আধুনিক জীবনে এই প্রবাদগুলি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির তলে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলির মধ্যে নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যাবে সমাজ ও ব্যক্তিমানসের পরিচয়, প্রবাদগুলির মধ্যে জীবনের বহুবিচিত্র রূপ লক্ষ করা যাবে- কখনও তা তীক্ষ্ণ, কটু শ্লেষ এবং সেই সঙ্গে পরিহাস।

ব্যবহারকারীদের রুচির স্থূলতা অনেক প্রবাদে লক্ষ করা যাবে। আঞ্চলিক ভাষা-বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখার প্রয়োজনে এগুলিকে যথাযথ ভাবে সংকলনের প্রয়োজন আছে। গ্রামীণ সমাজজাত বলে এর মধ্যে একধরনের গ্রাম্যতা লক্ষ করা যায়। এর ভাষা দৈনন্দিন জীবনের ভাষা, জীবনের ঘনিষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। সুতরাং একে জীবনচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করা সঙ্গত নয় এবং সেই সাথে অনুচিত কোন সংশোধন।

সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত প্রবাদগুলিতে এই সব এলাকার সমাজ পরিবার ব্যক্তিমানসের যথার্থ চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেকগুলি প্রবাদের উৎপত্তি সুপ্রাচীনকালে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। স্থানীয় লোকচরিত্র সমাজজীবন, অতীত ইতিহাসের অনেক টুকরো স্মৃতি ধরা পড়ে। আজকের যুগেও গ্রামীণ মানুষরা বিশেষ করে বৃদ্ধারা কথায় কথায় এই প্রবাদগুলি ব্যবহার করে থাকেন। ভাষাতত্ত্বের চর্চা, লোকসাহিত্যের চর্চা কিংবা সামাজিক ইতিহাস রক্ষার উপাদান হিসাবে এদের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার কমছে, ফলে লোকভ।যা থেকে এরা প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের মানুষ- অভাব তার নিত্যসঙ্গী। সামাজিক ধনবৈষম্যের সে শিকার। সেই অসহায় গরিব মানুষ ধনীর অর্থসম্পদ ঐশ্বর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয় আবার কখনও নির্লিপ্ত হয়ে বলে ওঠে- ‘বেল পাগলে কাগের কি? ‘পরের ভাত দাও ঠেসে যায় যাক আমার বকলী (পেট) ফেঁসে।’ সব সময় অবস্থাপন্ন মানুষদের মতো সব জিনিস সে ভোগ করতে পারে না। বছরে কোন একটা জিনিস একবারমাত্র পেয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সুতরাং সে’ বছর খোঁড়া করার’ স্বপ্ন দেখে একবারমাত্র আস্বাদনের মধ্য দিয়ে।