০২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • 18

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হেষ্টিংস আরও বলেন যে, তিনি তাঁহার নিজের জীবন দিয়াও কান্ত বাবুকে রক্ষা করিতে প্রস্তুত। অনেক তর্ক বিতর্কের পর ক্লেভারিং সাহেব পুনর্ব্বার প্রস্তাব করিলেন যে, গবর্ণর অতি সামান্য অপরাধের জন্য প্রত্যহ দুর্ভাগ্য হিন্দুদিগকে যে তুড়ুম পরাইয়া থাকেন, আমি কান্ত বাবুকেও সেই শাস্তি প্রদান করিতে ইচ্ছা করি। হেষ্টিংস ইহাতে ঘোর আপত্তি করেন। যাহা হউক সে দিবস এ বিষয়ের কোনই মীমাংসা হয় নাই এবং কান্ত বাবুও অবমাননার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়াছিলেন।

আমরা পুনঃ পুনঃ বলিয়াছি, যে স্থানে হেষ্টিংস সাহেব উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, সেই স্থানেই কান্ত বাবু উপস্থিত থাকিতেন। এ সম্বন্ধে আরও দুই একটি দৃষ্টান্ত দেখান যাইতেছে। হিজলীর ইজারদার পূর্ব্বোল্লিখিত কমল উদ্দীন, মহারাজ নন্দকুমার ও ফাউক সাহেবের নিকট উপস্থিত হইয়া, নিম্নলিখিত মর্ম্মে কাউন্সিলে এক আর্জি পেশ করিয়া বলে যে, তিন বৎসরের মধ্যে তাহার নিকট হইতে বারওয়েল সাহেব ৪৫,০০০ টাকা উৎকোচ লইয়াছেন এবং গবর্ণর হেষ্টিংস নজর বলিয়া ১৫,০০০, ভাপ্সিটার্ট সাহেব ১২,০০০, রাজা রাজবল্লভ ৭,*, ও কৃষ্ণকান্ত ৫,০০০, লইয়াছেন।

কিন্তু কিছুকাল পরে হেষ্টিংস সাহেবের প্ররোচনায় উক্ত কমল উদ্দীন সুপ্রীমকোর্টে এই অভিযোগ উপস্থিত করে যে, নন্দ-কুমার ও ফাউক সাহেব তাহার নিকট হইতে বলপূর্ব্বক, উক্ত আর্জি লিখাইয়া লইয়াছেন। হেষ্টিংস ও বারওয়েল এই ছল ধরিয়া নন্দকুমার প্রভৃ তির নামে এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উপস্থাপিত করেন। কিন্তু ভান্সিটার্ট, রাজবল্লভ ও কান্তবাবু প্রথমে অভিযোগের ইচ্ছা করিলেও পরে মোকদ্দমা উঠাইয়া লন। এ সমস্ত কথা নন্দকুমার প্রবন্ধে উল্লিখিত হইয়াছে। ‘হেষ্টিংসের বিচারের সময়ও উৎকোচ গ্রহণ লইয়া অত্যন্ত আন্দোলন হইয়া-ছিল এবং তাহাতে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ও কান্তবাবু যে বিশেষরূপে লিপ্ত ছিলেন, মহামতি বার্ক তাহা পুনঃপুনঃ প্রদর্শন করেন।

তিনি বলেন যে, বঙ্গদেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হইতে এই দুই জনের দ্বারা উৎকোচ আদার করা হইত। এক সময়ে এই দুই জনে নয় লক্ষ টাকা উৎকোচ আদায় করেন; তন্মধ্যে ৫,৫০,০০০, কেবল কোম্পানীর কোষাগারে জমা দেওয়া হয়; অবশিষ্ট টাকা হয় হেষ্টিংস, নতুবা তাঁহার প্রতিনিধিদ্বয় আত্মসাৎ করিয়াছেন।। কি রাজা, কি জমিদার, কি ইজারদার, সকলের নিকট হইতে অন্যায় ও বলপূর্ব্বক উৎকোচ গ্রহণ করিয়া হেষ্টিংস সাহেব কিরূপ দুর্নাম অর্জন করিয়াছেন, তাহা ভারতবর্ষে ও ইংলণ্ডে কাহারও অবিদিত নাই।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭১)

১১:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হেষ্টিংস আরও বলেন যে, তিনি তাঁহার নিজের জীবন দিয়াও কান্ত বাবুকে রক্ষা করিতে প্রস্তুত। অনেক তর্ক বিতর্কের পর ক্লেভারিং সাহেব পুনর্ব্বার প্রস্তাব করিলেন যে, গবর্ণর অতি সামান্য অপরাধের জন্য প্রত্যহ দুর্ভাগ্য হিন্দুদিগকে যে তুড়ুম পরাইয়া থাকেন, আমি কান্ত বাবুকেও সেই শাস্তি প্রদান করিতে ইচ্ছা করি। হেষ্টিংস ইহাতে ঘোর আপত্তি করেন। যাহা হউক সে দিবস এ বিষয়ের কোনই মীমাংসা হয় নাই এবং কান্ত বাবুও অবমাননার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়াছিলেন।

আমরা পুনঃ পুনঃ বলিয়াছি, যে স্থানে হেষ্টিংস সাহেব উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, সেই স্থানেই কান্ত বাবু উপস্থিত থাকিতেন। এ সম্বন্ধে আরও দুই একটি দৃষ্টান্ত দেখান যাইতেছে। হিজলীর ইজারদার পূর্ব্বোল্লিখিত কমল উদ্দীন, মহারাজ নন্দকুমার ও ফাউক সাহেবের নিকট উপস্থিত হইয়া, নিম্নলিখিত মর্ম্মে কাউন্সিলে এক আর্জি পেশ করিয়া বলে যে, তিন বৎসরের মধ্যে তাহার নিকট হইতে বারওয়েল সাহেব ৪৫,০০০ টাকা উৎকোচ লইয়াছেন এবং গবর্ণর হেষ্টিংস নজর বলিয়া ১৫,০০০, ভাপ্সিটার্ট সাহেব ১২,০০০, রাজা রাজবল্লভ ৭,*, ও কৃষ্ণকান্ত ৫,০০০, লইয়াছেন।

কিন্তু কিছুকাল পরে হেষ্টিংস সাহেবের প্ররোচনায় উক্ত কমল উদ্দীন সুপ্রীমকোর্টে এই অভিযোগ উপস্থিত করে যে, নন্দ-কুমার ও ফাউক সাহেব তাহার নিকট হইতে বলপূর্ব্বক, উক্ত আর্জি লিখাইয়া লইয়াছেন। হেষ্টিংস ও বারওয়েল এই ছল ধরিয়া নন্দকুমার প্রভৃ তির নামে এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উপস্থাপিত করেন। কিন্তু ভান্সিটার্ট, রাজবল্লভ ও কান্তবাবু প্রথমে অভিযোগের ইচ্ছা করিলেও পরে মোকদ্দমা উঠাইয়া লন। এ সমস্ত কথা নন্দকুমার প্রবন্ধে উল্লিখিত হইয়াছে। ‘হেষ্টিংসের বিচারের সময়ও উৎকোচ গ্রহণ লইয়া অত্যন্ত আন্দোলন হইয়া-ছিল এবং তাহাতে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ও কান্তবাবু যে বিশেষরূপে লিপ্ত ছিলেন, মহামতি বার্ক তাহা পুনঃপুনঃ প্রদর্শন করেন।

তিনি বলেন যে, বঙ্গদেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হইতে এই দুই জনের দ্বারা উৎকোচ আদার করা হইত। এক সময়ে এই দুই জনে নয় লক্ষ টাকা উৎকোচ আদায় করেন; তন্মধ্যে ৫,৫০,০০০, কেবল কোম্পানীর কোষাগারে জমা দেওয়া হয়; অবশিষ্ট টাকা হয় হেষ্টিংস, নতুবা তাঁহার প্রতিনিধিদ্বয় আত্মসাৎ করিয়াছেন।। কি রাজা, কি জমিদার, কি ইজারদার, সকলের নিকট হইতে অন্যায় ও বলপূর্ব্বক উৎকোচ গ্রহণ করিয়া হেষ্টিংস সাহেব কিরূপ দুর্নাম অর্জন করিয়াছেন, তাহা ভারতবর্ষে ও ইংলণ্ডে কাহারও অবিদিত নাই।