১১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৪২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • 111

মেজদি আর সেজদি

ধীরেনের দুই দিদি, মৃণালিনী দেবী আর পঙ্কজিনী দেবী। ইহারা দুই বোন যমজ। একজনকে আর একজন হইতে পৃথক করিয়া দেখা মুস্কিল হইত। ধীরেনের সঙ্গে আমিও তাঁহাদিগকে মেজদি আর সেজদি বলিয়া ডাকিতাম। এই মেজদি ও সেজদির কথা না লিখিলে আমার জীবনকাহিনীই অসম্পূর্ণ থাকিবে। কিন্তু কোন ভাষায় যে আমার এত আদরের দুই দিদির কথা লিখিব তাহা ভাবিয়া পাইতেছি না। দুর্গাপূজার দিন এই দুই দিদি একই রঙের দু’খানা শাড়ি পরিয়া সারা বাড়ি ভরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেন। সেই তো কতকালের ঘটনা। আজও দুর্গাপূজার ঢোলের বাদ্য শুনিলে আমার সেই দুই দিদিকে আমার মানস-চক্ষে স্পষ্ট দেখিতে পাই। কপালে কাঁচ-পোকার ফোঁটা, মাথায় সিন্দুর। হাসি-খুশি মুখে যেন সেই আগের মতোই তাঁহারা দুই বোনে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন।

এই দুই দিদি আড়াআড়ি করিয়া আমাকে আদর করিতেন। কোনো খাবার জিনিস এ দিদি যদি গোপনে আনিয়া আমাকে দিলেন, অপর দিদি তাঁর নিজের ভাগটি সমস্তই আমার হাতে ঢালিয়া দিলেন। দিদিরা তাঁহাদের আপনাপন স্বামীর কাছে যত পত্র লিখিতেন সবই আমার হাত দিয়া পোস্ট করাইতেন। একবার মেজদি একখানা অতি রঙিন চিঠি আনিয়া আমাকে পোস্ট করিতে দিলেন। বালক-বয়সের কৌতূহল অতিক্রম করিতে পারিলাম না। সেই চিঠিখানা খুলিয়া পড়িলাম। কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখিয়াছেন দিদি তাঁর বরকে, “তুমি মিনুকে মোটেই ভালোবাস না। সেবার তোমাকে খুকুর জন্য অমুক রঙের জামা কিনিয়া দিতে বলিয়াছিলাম। তা দিলে না। গত মাসে তুমি আস নাই। এবার কিন্তু অবশ্য অবশ্য আসিবে।” ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই চিঠি বন্ধ করিয়া আবার পোস্ট-অফিসের বাক্সে ফেলিয়া দিয়াছিলাম। এই দিদি এখন পশ্চিমবঙ্গের কোথায় আছেন জানি না। আমার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তখনকার সেই ছোট ভাইটিকে হয়তো তিনি ক্ষমা করিবেন কিন্তু এই পরিণত বয়স্ক ভাইটি যে আজ তাঁহার গোপন কথা পাঠকসমাজে প্রচার করিয়া দিল, ইহার জন্য তিনি কি শাস্তি দিবেন জানি না, কিন্তু সেই শাস্তির দিনটির জন্য আমি অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিব। সেই শাস্তির উপলক্ষ করিয়া আবার হয়তো সেদিন দিদির সেই অলক্তক রঞ্জিত পা দুইটি দেখিতে পাইব।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৪২)

১১:০০:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

মেজদি আর সেজদি

ধীরেনের দুই দিদি, মৃণালিনী দেবী আর পঙ্কজিনী দেবী। ইহারা দুই বোন যমজ। একজনকে আর একজন হইতে পৃথক করিয়া দেখা মুস্কিল হইত। ধীরেনের সঙ্গে আমিও তাঁহাদিগকে মেজদি আর সেজদি বলিয়া ডাকিতাম। এই মেজদি ও সেজদির কথা না লিখিলে আমার জীবনকাহিনীই অসম্পূর্ণ থাকিবে। কিন্তু কোন ভাষায় যে আমার এত আদরের দুই দিদির কথা লিখিব তাহা ভাবিয়া পাইতেছি না। দুর্গাপূজার দিন এই দুই দিদি একই রঙের দু’খানা শাড়ি পরিয়া সারা বাড়ি ভরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেন। সেই তো কতকালের ঘটনা। আজও দুর্গাপূজার ঢোলের বাদ্য শুনিলে আমার সেই দুই দিদিকে আমার মানস-চক্ষে স্পষ্ট দেখিতে পাই। কপালে কাঁচ-পোকার ফোঁটা, মাথায় সিন্দুর। হাসি-খুশি মুখে যেন সেই আগের মতোই তাঁহারা দুই বোনে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন।

এই দুই দিদি আড়াআড়ি করিয়া আমাকে আদর করিতেন। কোনো খাবার জিনিস এ দিদি যদি গোপনে আনিয়া আমাকে দিলেন, অপর দিদি তাঁর নিজের ভাগটি সমস্তই আমার হাতে ঢালিয়া দিলেন। দিদিরা তাঁহাদের আপনাপন স্বামীর কাছে যত পত্র লিখিতেন সবই আমার হাত দিয়া পোস্ট করাইতেন। একবার মেজদি একখানা অতি রঙিন চিঠি আনিয়া আমাকে পোস্ট করিতে দিলেন। বালক-বয়সের কৌতূহল অতিক্রম করিতে পারিলাম না। সেই চিঠিখানা খুলিয়া পড়িলাম। কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখিয়াছেন দিদি তাঁর বরকে, “তুমি মিনুকে মোটেই ভালোবাস না। সেবার তোমাকে খুকুর জন্য অমুক রঙের জামা কিনিয়া দিতে বলিয়াছিলাম। তা দিলে না। গত মাসে তুমি আস নাই। এবার কিন্তু অবশ্য অবশ্য আসিবে।” ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই চিঠি বন্ধ করিয়া আবার পোস্ট-অফিসের বাক্সে ফেলিয়া দিয়াছিলাম। এই দিদি এখন পশ্চিমবঙ্গের কোথায় আছেন জানি না। আমার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তখনকার সেই ছোট ভাইটিকে হয়তো তিনি ক্ষমা করিবেন কিন্তু এই পরিণত বয়স্ক ভাইটি যে আজ তাঁহার গোপন কথা পাঠকসমাজে প্রচার করিয়া দিল, ইহার জন্য তিনি কি শাস্তি দিবেন জানি না, কিন্তু সেই শাস্তির দিনটির জন্য আমি অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিব। সেই শাস্তির উপলক্ষ করিয়া আবার হয়তো সেদিন দিদির সেই অলক্তক রঞ্জিত পা দুইটি দেখিতে পাইব।