আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
ইতিমধ্যে মাস ছয়েক কেটে গেছে।
এপ্রিল মাসের এক রৌদ্রকরোজ্জল দিনে একটা রেলস্টেশন থেকে মা-র নামে একখানা চিঠি ছাড়লুম।
‘মা-মণি,
বিদায়, বিদায়! বীর কমরেড সিভের্সে’র দলে আমরা যোগ দিতে চলেছি এখন।
কমরেড সিভের্স কর্নি’লভ আর কালেদিনের শ্বেতরক্ষী-বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আমরা তিন জন যাচ্ছি। সরমোভোর যোদ্ধ-স্কোয়াডের কাছ থেকে পরিচয়-পত্র পেয়েছি আমরা। আমি আর বেলুকা আমরা দু-জন ওই স্কোয়াডেরই লোক।
আমাকে ওরা প্রথমে পরিচয়-পত্র দিতে চায় নি। বলছিল, আমার বয়েস নাকি খুবই কম। যাই হোক, দাঁড়কাককে রাজী করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে আমায়। শেষপর্যন্ত উনিই অবিশ্যি আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন। উনি নিজেই লড়াইয়ে যেতেন, কিন্তু শরীরটা দুর্বল আর খুব কাশছেন বলে যেতে পারলেন না। আনন্দে আমার মাথার ঠিক নেই, মা। এর আগে যা কিছু ঘটেছে সে সবই ছিল ছেলেখেলার সামিল। জীবনে আসল ব্যাপার এই প্রথম শুরু হচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে, আজ দুনিয়ায় আমার মতো আর কেউ সুখী নয়।’
যাত্রা শুরু করার পর তৃতীয় দিনে একটা ছোট্ট স্টেশনে ঘণ্টা ছয়েক আটকে থাকার সময় আমরা জানতে পারলুম আমাদের চারপাশের গ্রামাঞ্চলে অশান্তির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট ডাকাতের দল মাথা চাড়া দিয়েছে, আর কোনো-কোনো জায়গায় কুলাক বা ধনী চাষীদের সঙ্গে খাদ্য-সংগ্রাহক দলের লড়াই হয়ে গেছে। সেদিন অনেক রাতে আমাদের ট্রেনে একটা এঞ্জিন এসে লাগল। একটা মালগাড়ির ওপরের বাকে আমি আর আমার কমরেডরা পাশাপাশি শুয়ে ছিলুম। চাকার নিয়মিত ঝনঝনানি, গাড়ির দুলুনি আর ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ শুনতে-শুনতে ভারি পশমী ওভারকোটটা মাথা পর্যন্ত টেনে দিয়ে আমি ঘুমের উদ্যোগ করতে লাগলুম।