০১:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকায় দুই যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১, আহত ২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ.এফ. রহমান হলে ভিপি-জিএসের ‘সিঙ্গেল রুম’ বরাদ্দের অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার: সরকারের আশ্বাসে অবসান মেট্রোরেল কর্মীদের ছুটি বাতিল, নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কার্যকর নারায়ণগঞ্জে মাইক্রোবাসে ধর্ষণ: ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা তানজানিয়ায় দমন-পীড়ন: রক্তে রাঙানো এক নতুন বাস্তবতা গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত: সাইপ্রাস হচ্ছে মূল রুট সময়ের পরীক্ষায় অটল বন্ধন — ভারত-রাশিয়া কূটনীতির নতুন দিগন্ত সিরিয়ার দক্ষিণে ধর্মীয় সংঘর্ষে উৎখাত বেদুইনদের ফিরে যাওয়ার আশাও ম্লান

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • 58

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

আরেকটা কোণ থেকে একটা হিংস্র গলায় জবাব এল, ‘আর তো কিছু নয়, খুব কষে বেত খেতে চায় আর কি!’

আচমকা একটা ধাক্কায় কথাবার্তা গেল বন্ধ হয়ে। কামরাটা সজোরে দুলে উঠে কিসের সঙ্গে যেন ধাক্কা খেল। বাঙ্ক থেকে ছিটকে আমি নিচের লোকের মাথায় গিয়ে পড়লুম। ওই অন্ধকারের মধ্যে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু হয়ে গেল। ‘বাবা রে, গেছি রে’ চিৎকার-চ্যাঁচামেচির মধ্যে সকলেই মালগাড়ির খোলা দরজার দিকে ছুটল।

বোঝা গেল, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রেললাইনের উ’চু বাঁধের পাশেই একটা খানায় লাফিয়ে পড়েছিলুম। লাফ দেয়াটা ঠিক সময়েই হয়েছিল। আরেকটু দেরি হলেই গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে-পড়া যাত্রীদের দেহের ভারে চেটে যেতুম। এরপরই দু-বার গুলির শব্দ শোনা গেল। আমার পাশেই একটা লোক কাঁপা কাঁপা হাত দুটো সামনে মেলে দিয়ে গুনগুন করে বলে

চলেছিল:

‘আরে, ঠিক আচে… সব ঠিক আচে। খালি দৌড়োদৌড়ি করবেন না, তাইলেই ওরা গুলি চালাবে কিন্তু। ওরা শ্বেতরক্ষী লয়, আশপাশের গাঁয়ের নোক। প্রাণে মারে না, খালি সবকিছু কেড়েকুড়ে লিয়ে ছেড়ে দেয়।’

এই সময়ে রাইফেল-হাতে দু-জন লোক আমাদের কামরাটার কাছে দৌড়ে এসে চিৎকার করে বললে:

‘উঠে পড়! গাড়িতে উঠে পড় সব!’

যাত্রীরা আবার মালগাড়িগুলোর দিকে দৌড় লাগাল। ধাক্কাধাক্কিতে হোঁচট খেয়ে একটা স্যাঁতসে’তে খানার মধ্যে পড়ে গেলুম আমি। আর মাটিতে সটান শুয়ে পড়ে গিরগিটির মতো চার হাত-পা টেনে-টেনে ট্রেনের পেছন দিকে দ্রুত এগোতে লাগলুম। আমাদের কামরাটা একেবারে শেষ কামরার ঠিক আগে ছিল। তাই মিনিটখানেকের মধ্যে শেষ কামরার আবছা সিগ্‌ন্যাল লণ্ঠনটার সমান-সমান পৌঁছে গেলুম। জায়গাটায় রাইফেল-হাতে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে দেখে আবার ফেরার চেষ্টা করলুম, কিন্তু দেখলুম ও লাইনের বাঁধের অপর-দিকে কাউকে একটা দেখতে পেয়ে সেই দিকে ছুটে গেল। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে আমি নালার নাবালের মুখে পৌঁছে হড়হড়ে কাদাটে নাবাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লুম। তারপর নাবালের নিচে পৌঁছে শরীরটা ঘসতে ঘসতে, কাদামাখা পা-দুটো প্রায় টেনে টেনে ঢুকে গেলুম ঝোপের মধ্যে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকায় দুই যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৩)

০৮:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

আরেকটা কোণ থেকে একটা হিংস্র গলায় জবাব এল, ‘আর তো কিছু নয়, খুব কষে বেত খেতে চায় আর কি!’

আচমকা একটা ধাক্কায় কথাবার্তা গেল বন্ধ হয়ে। কামরাটা সজোরে দুলে উঠে কিসের সঙ্গে যেন ধাক্কা খেল। বাঙ্ক থেকে ছিটকে আমি নিচের লোকের মাথায় গিয়ে পড়লুম। ওই অন্ধকারের মধ্যে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু হয়ে গেল। ‘বাবা রে, গেছি রে’ চিৎকার-চ্যাঁচামেচির মধ্যে সকলেই মালগাড়ির খোলা দরজার দিকে ছুটল।

বোঝা গেল, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রেললাইনের উ’চু বাঁধের পাশেই একটা খানায় লাফিয়ে পড়েছিলুম। লাফ দেয়াটা ঠিক সময়েই হয়েছিল। আরেকটু দেরি হলেই গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে-পড়া যাত্রীদের দেহের ভারে চেটে যেতুম। এরপরই দু-বার গুলির শব্দ শোনা গেল। আমার পাশেই একটা লোক কাঁপা কাঁপা হাত দুটো সামনে মেলে দিয়ে গুনগুন করে বলে

চলেছিল:

‘আরে, ঠিক আচে… সব ঠিক আচে। খালি দৌড়োদৌড়ি করবেন না, তাইলেই ওরা গুলি চালাবে কিন্তু। ওরা শ্বেতরক্ষী লয়, আশপাশের গাঁয়ের নোক। প্রাণে মারে না, খালি সবকিছু কেড়েকুড়ে লিয়ে ছেড়ে দেয়।’

এই সময়ে রাইফেল-হাতে দু-জন লোক আমাদের কামরাটার কাছে দৌড়ে এসে চিৎকার করে বললে:

‘উঠে পড়! গাড়িতে উঠে পড় সব!’

যাত্রীরা আবার মালগাড়িগুলোর দিকে দৌড় লাগাল। ধাক্কাধাক্কিতে হোঁচট খেয়ে একটা স্যাঁতসে’তে খানার মধ্যে পড়ে গেলুম আমি। আর মাটিতে সটান শুয়ে পড়ে গিরগিটির মতো চার হাত-পা টেনে-টেনে ট্রেনের পেছন দিকে দ্রুত এগোতে লাগলুম। আমাদের কামরাটা একেবারে শেষ কামরার ঠিক আগে ছিল। তাই মিনিটখানেকের মধ্যে শেষ কামরার আবছা সিগ্‌ন্যাল লণ্ঠনটার সমান-সমান পৌঁছে গেলুম। জায়গাটায় রাইফেল-হাতে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে দেখে আবার ফেরার চেষ্টা করলুম, কিন্তু দেখলুম ও লাইনের বাঁধের অপর-দিকে কাউকে একটা দেখতে পেয়ে সেই দিকে ছুটে গেল। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে আমি নালার নাবালের মুখে পৌঁছে হড়হড়ে কাদাটে নাবাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লুম। তারপর নাবালের নিচে পৌঁছে শরীরটা ঘসতে ঘসতে, কাদামাখা পা-দুটো প্রায় টেনে টেনে ঢুকে গেলুম ঝোপের মধ্যে।