০১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১, আহত ২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ.এফ. রহমান হলে ভিপি-জিএসের ‘সিঙ্গেল রুম’ বরাদ্দের অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার: সরকারের আশ্বাসে অবসান মেট্রোরেল কর্মীদের ছুটি বাতিল, নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কার্যকর নারায়ণগঞ্জে মাইক্রোবাসে ধর্ষণ: ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা তানজানিয়ায় দমন-পীড়ন: রক্তে রাঙানো এক নতুন বাস্তবতা গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত: সাইপ্রাস হচ্ছে মূল রুট সময়ের পরীক্ষায় অটল বন্ধন — ভারত-রাশিয়া কূটনীতির নতুন দিগন্ত সিরিয়ার দক্ষিণে ধর্মীয় সংঘর্ষে উৎখাত বেদুইনদের ফিরে যাওয়ার আশাও ম্লান চীনের বিনিয়োগে ধস: লুকানো সংকেত নাকি পরিসংখ্যানের কারসাজি?

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৪)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • 64

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

সদ্য-সবুজ গাছপালার আবছায়ায়-ঘেরা জঙ্গলটায় তখন প্রাণের সাড়া জেগেছে। দূরে কোথায় যেন মোরগরা পাল্লা দিয়ে দরাজ গলায় ডাকাডাকি শুরু করেছিল। কাছের কোনো একটা ফাঁকা জায়গা থেকে আসছিল জোর গলায় ব্যাঙের ঘ্যাঙরখ্যাও।

ওরা বোধহয় জল থেকে উঠে এসে ওখানে শরীর গরম করছিল। এখানে-ওখানে গাছের ছায়ায় তখনও বয়ে গিয়েছিল নোংরা জমা তুষারের ছোট ছোট সব স্বীপ,

কিন্তু যে-সব জায়গা রোদ্দুর পায় সেখানে আগের বছরের শক্ত ঘাসগুলো এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছিল।

বিশ্রাম নিতে-নিতে আমি বার্চে’র একটুকরো বাকল দিয়ে বুটজোড়া থেকে কাদা মুছে সাফ করে ফেললুম। তারপর একমুঠো ঘাস ছি’ড়ে জলে ডুবিয়ে মুখের কাদাও পরিষ্কার করে নিলুম।

কিন্তু এ-সমন্তই আমার অচেনা জায়গা। আমার সমস্যা হল, ওখান থেকে বেরিয়ে কাছাকাছির মধ্যে কোনো রেলস্টেশনে যাই কী করে? থেকে-থেকে কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছিলুম, তার মানে কাছেই গ্রাম ছিল। আচ্ছা, ওখানে গিয়ে পথের সন্ধান নিলে কেমন হয়? কিন্তু তাতে আবার কুলাকদের গোপন আস্তানার সামনাসামনি পড়ে যাবার ভয় ছিল। ওরা হয়ত জিজ্ঞেস করবে কে তুমি, কোথা থেকে আসছ, এই সব। এদিকে আমার পকেটে পরিচয়-পত্র, আবার একটা মাওজারও আছে। কাগজখানা আমি অবিশ্যি বুটের মধ্যে লুকোতে পারি, কিন্তু পিস্তলটা নিয়ে কাঁ করা যায়? ফেলে দেব ওটা?

পিস্তলটা বের করে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলুম। না, ওটা ফেলে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। চকচকে ইস্পাতের ছটা ছড়িয়ে ছোট্ট মাওজারটা আমার হাতের মধ্যে এমন আরামে শুয়েছিল যে ওটাকে ফেলে দেবার কথা চিন্তা করতে পেরেছি ভেবেই লজ্জা পেলুম। গায়ে হাত বুলিয়ে ওটাকে ফের রেখে দিলুম, তবে এবার আমার জ্যাকেটের ভেতর দিকে আন্তরের মধ্যে সেলাই-করা একটা চোরা-পকেটের মধ্যে।

সকালটা ছিল আলোয় ঝলমলে। আর চারিদিকে কত রকমের যে শব্দ শোনা যাচ্ছিল তার ইয়ত্তা ছিল না। জঙ্গলের মধ্যে হলদে একটা খোলা জায়গার মাঝখানে একটা গাছের গুড়ির ওপর বসে আমার মনেই হচ্ছিল না যে কোথাও বিপদ বলে কোনো বন্ধু আছে।

পিঞ্জ, পিজ… এরর!’ খুব কাছে একটা পরিচিত পাখির ডাক শোনা গেল। একটা নীলরঙের টিটু পাখি ঠিক আমার মাথার ওপর একটা ডালে উড়ে এসে বসে অবাক হয়ে একটা চোখ বের করে আমায় দেখতে লাগল।

‘পিন্তু, পিছ… এক্স… কাঁ হে।’ অনবরত পা বদলাতে বদলাতে আবার ডেকে উঠল পাখিটা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১, আহত ২

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৪)

০৮:০০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

সদ্য-সবুজ গাছপালার আবছায়ায়-ঘেরা জঙ্গলটায় তখন প্রাণের সাড়া জেগেছে। দূরে কোথায় যেন মোরগরা পাল্লা দিয়ে দরাজ গলায় ডাকাডাকি শুরু করেছিল। কাছের কোনো একটা ফাঁকা জায়গা থেকে আসছিল জোর গলায় ব্যাঙের ঘ্যাঙরখ্যাও।

ওরা বোধহয় জল থেকে উঠে এসে ওখানে শরীর গরম করছিল। এখানে-ওখানে গাছের ছায়ায় তখনও বয়ে গিয়েছিল নোংরা জমা তুষারের ছোট ছোট সব স্বীপ,

কিন্তু যে-সব জায়গা রোদ্দুর পায় সেখানে আগের বছরের শক্ত ঘাসগুলো এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছিল।

বিশ্রাম নিতে-নিতে আমি বার্চে’র একটুকরো বাকল দিয়ে বুটজোড়া থেকে কাদা মুছে সাফ করে ফেললুম। তারপর একমুঠো ঘাস ছি’ড়ে জলে ডুবিয়ে মুখের কাদাও পরিষ্কার করে নিলুম।

কিন্তু এ-সমন্তই আমার অচেনা জায়গা। আমার সমস্যা হল, ওখান থেকে বেরিয়ে কাছাকাছির মধ্যে কোনো রেলস্টেশনে যাই কী করে? থেকে-থেকে কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছিলুম, তার মানে কাছেই গ্রাম ছিল। আচ্ছা, ওখানে গিয়ে পথের সন্ধান নিলে কেমন হয়? কিন্তু তাতে আবার কুলাকদের গোপন আস্তানার সামনাসামনি পড়ে যাবার ভয় ছিল। ওরা হয়ত জিজ্ঞেস করবে কে তুমি, কোথা থেকে আসছ, এই সব। এদিকে আমার পকেটে পরিচয়-পত্র, আবার একটা মাওজারও আছে। কাগজখানা আমি অবিশ্যি বুটের মধ্যে লুকোতে পারি, কিন্তু পিস্তলটা নিয়ে কাঁ করা যায়? ফেলে দেব ওটা?

পিস্তলটা বের করে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলুম। না, ওটা ফেলে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। চকচকে ইস্পাতের ছটা ছড়িয়ে ছোট্ট মাওজারটা আমার হাতের মধ্যে এমন আরামে শুয়েছিল যে ওটাকে ফেলে দেবার কথা চিন্তা করতে পেরেছি ভেবেই লজ্জা পেলুম। গায়ে হাত বুলিয়ে ওটাকে ফের রেখে দিলুম, তবে এবার আমার জ্যাকেটের ভেতর দিকে আন্তরের মধ্যে সেলাই-করা একটা চোরা-পকেটের মধ্যে।

সকালটা ছিল আলোয় ঝলমলে। আর চারিদিকে কত রকমের যে শব্দ শোনা যাচ্ছিল তার ইয়ত্তা ছিল না। জঙ্গলের মধ্যে হলদে একটা খোলা জায়গার মাঝখানে একটা গাছের গুড়ির ওপর বসে আমার মনেই হচ্ছিল না যে কোথাও বিপদ বলে কোনো বন্ধু আছে।

পিঞ্জ, পিজ… এরর!’ খুব কাছে একটা পরিচিত পাখির ডাক শোনা গেল। একটা নীলরঙের টিটু পাখি ঠিক আমার মাথার ওপর একটা ডালে উড়ে এসে বসে অবাক হয়ে একটা চোখ বের করে আমায় দেখতে লাগল।

‘পিন্তু, পিছ… এক্স… কাঁ হে।’ অনবরত পা বদলাতে বদলাতে আবার ডেকে উঠল পাখিটা।