সারাক্ষণ রিপোর্ট
- ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১২ লাখ মোবাইল গ্রাহক কমে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮.৭৫ কোটিতে
- গত ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মোট প্রায় ৭৫ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো
- সিম ট্যাক্স ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বেড়ে যাওয়ায় নতুন সংযোগ নেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে
- বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের মালিকানা ২০২০ সালের তুলনায় সামান্য হ্রাস পেয়েছে
- মোবাইল ব্যবহারে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য প্রবল: পুরুষদের ৮৬ শতাংশের বিপরীতে নারীদের মাত্র ৬২.৮ শতাংশ মোবাইল ফোন মালিক
ক্রমাগত গ্রাহকহ্রাস
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১২ লাখ কমে ১৮.৭৫ কোটিতে নেমে এসেছে। এটি টানা ছয় মাসের ধারাবাহিক পতন। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৭৫ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো।
সিম বন্ধ হওয়া বনাম নতুন সংযোগ
মোবাইল অপারেটরদের মোট গ্রাহক সংখ্যা নির্ণয় হয় বন্ধ হওয়া সিমের সংখ্যা বাদ দিয়ে এবং নতুন কেনা সিমের সংখ্যা যুক্ত করে। ১৮ মাসের বেশি সময় অনব্যবহৃত সিম সাধারণত গ্রাহক হিসেবে গণ্য হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বন্ধ হওয়া সিমের সংখ্যা বেড়ে গেলেও নতুন সিম কেনা কমে যাওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত কমছে।
সিম ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রভাব
রবির প্রধান করপোরেট ও নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শাহেদ আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের শুরুতে সিম ট্যাক্স ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবহারকারীরা একাধিক সিম নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে প্রান্তিক মানুষের কাছে সংযোগ পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
অপারেটরভিত্তিক গ্রাহকসংখ্যা পতন
- বাংলালিংক: ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৭.৫ লাখ গ্রাহক হারিয়ে বর্তমানে মোট গ্রাহক ৩.৯৭ কোটি
- রবি: প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক হারিয়ে বর্তমান মোট গ্রাহক ৫.৭১ কোটি
- গ্রামীণফোন: প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক কমে মোট গ্রাহক ৮.৪৫ কোটি
- টেলিটক: সরকারি মালিকানাধীন অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ৬৫.৬ লাখে স্থির আছে
মোবাইল ফোন মালিকানা ও সাম্প্রতিক প্রবণতা
বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস প্রকল্পের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোবাইল ফোন মালিকানা ৭৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালের ৭৫.৪ শতাংশের তুলনায় সামান্য কম। কোভিড-১৯ মহামারিজনিত অর্থনৈতিক চাপে ২০২১ সালে এই হার ৭১.৩ শতাংশে নেমে গেলেও ২০২২ সালে কিছুটা উন্নতি হয়ে ৭৩.৮ শতাংশে পৌঁছায়। তবে ২০২৩ সালে সেটা খুব বেশি বাড়তে না পেরে ৭৪.২ শতাংশে স্থির হয়েছে, যেখানে উচ্চমূল্যের কারণে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
লিঙ্গবৈষম্য ও মোবাইল ব্যবহারের অসম সুযোগ
মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাক স্পষ্ট হয়েছে। যেখানে পুরুষদের ৮৬ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করছেন, নারীদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৬২.৮ শতাংশ। প্রায় ২৩.২ শতাংশের এই ব্যবধান প্রযুক্তিগত সুবিধা ও সম্পদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীদের মোবাইল ব্যবহারে উৎসাহ দিতে এবং আর্থসামাজিক বাধাগুলো দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ জরুরি।