সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- অনেক কারখানা মালিক কারাগারে আছেন বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন
- বেশিভাগ পোশাক কারখানা পুনরায় চালু হয়েছে
- বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকার ৫২৫.৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে
জুলাই এর আন্দোলনের সময় সহিংসতা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কারণে বাংলাদেশের অনেক কারখানা ধ্বংস হয়েছে। ব্যাংক ঋণের অভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ এখনো চালু হয়নি।
প্রায় ১ লাখ শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করতেন, কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের জীবিকা চরম সংকটে পড়েছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও শিল্পের ক্ষতি
২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তে থাকে, যার ফলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কারখানাগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো হয়। সাত মাসের বেশি সময় ধরে এসব কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল বা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী মূলধনের তীব্র সংকটে পড়েছে।
অনেক কারখানা মালিক কারাগারে আছেন বা আগের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর তালিকা
- বেক্সিমকো গ্রুপ: ১৪টি টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানা
- গাজী গ্রুপ: ৫টি টায়ার কারখানা
- বেঙ্গল গ্রুপ: ৩টি প্লাস্টিক কারখানা
- অন্যান্য: আশুলিয়া, সাভার, জিরাবো ও জিরানির বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস
গাজী গ্রুপের পুনর্গঠন পরিকল্পনা
গাজী গ্রুপ কর্তপক্ষ জানান, তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কারখানা পুনরায় চালু করতে চান। এজন্য তারা ১,৮০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের পাঁচটি কারখানা পুড়ে যাওয়ায় প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গাজী টায়ার, গাজী ট্যাঙ্ক, গাজী পাইপ, গাজী ডোর ও গুদাম ধ্বংস হয়েছে। গাজী গোলাম দস্তগীর বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের সংকট
বেক্সিমকো গ্রুপের ৩১,৬৬৯ জন শ্রমিক ও ১,৫৬৫ জন কর্মকর্তার বেতন পরিশোধের জন্য সরকার ৫২৫.৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রতিষ্ঠানটি বড় সংকটে পড়ে। বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বেক্সিমকোর ঋণের পরিমাণ ৪০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
বেঙ্গল গ্রুপের ক্ষতি ও পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা
বেঙ্গল গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, তাদের তিনটি প্লাস্টিক, সিমেন্ট ব্যাগ ও প্যাকেজিং কারখানা পুড়ে গেছে। এসব কারখানায় ২,০০০ শ্রমিক কাজ করতেন, এবং প্রতি মাসে ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব উৎপাদিত হতো।
তিনি ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করতে চান, যাতে নতুন মেশিনারি কেনা ও কারখানা পুনর্গঠন করা যায়।
অন্যান্য কারখানার অবস্থা
বিগ বস নামের একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ৬০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বীমা ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে। বর্তমানে সেখানে ১২,০০০ শ্রমিক কাজ করছেন।
কারখানা পুনরায় চালুর সম্ভাবনা
বিজিএমইএ’র প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসেন মিডিয়াকে জানান, বেশিভাগ পোশাক কারখানা পুনরায় চালু হয়েছে। তবে মালিকদের অনুপস্থিতি ও ঋণের চাপের কারণে কিছু কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন মিডিয়াকে বলেন, সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রমিকদের সহায়তা দিলেও, বেক্সিমকোর বিশাল ঋণের কারণে বড় আকারের আর্থিক সহায়তা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
উপসংহার
জুলাই এর আন্দোলন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের শিল্প খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক কারখানা এখনো বন্ধ, শ্রমিকরা বিপাকে, এবং মালিকরা ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার কিছু সহায়তা দিচ্ছে, তবে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনের জন্য আরও কার্যকর নীতি প্রয়োজন।