০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • 22

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ছেলেটার মুখটা দেখতে লাগছিল ফ্যাকাশে, চোখের নিচে গোল হয়ে কালিপড়া। দেখে মনে হচ্ছিল, আমার মতো ও-ও খুব সম্ভব রাত্তিরটা জঙ্গলে কাটিয়েছে।

‘ওখানে যাবার কথা ভাবছিলে বুঝি?’ খামারবাড়িটার দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে আস্তে-আস্তে ছেলেটা বলল।

বললুম, ‘হ্যাঁ। আর তুমি?’

‘ওরা দেবে লবডঙ্কা, বুঝলে? তিন-তিনটে হোঁতকা চাষী থাকে ওখানে। আমি দেখে নিয়েছি ওদের। শেষকালে কার পাল্লায় পড়তে হবে, তা কি বলা যায়?’

‘তা হলে? কী করা? কিছু খেতে হবে তো!’

‘সে তো বটেই,’ ও সায় দিল। ‘তবে ভিক্ষে করে নয়। তাছাড়া, আজকাল ভিক্ষে দেয়ও না কেউ। কিন্তু তুমি কে?’ প্রশ্নটা করেই কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে উঠল: ‘আচ্ছা, ওকথা থাক। খাবার আমাদেরই যোগাড় করতে হবে। তবে একার পক্ষে পাওয়া ভারি শক্ত। আমি চেষ্টার কসুর করি নি তো। তা, আমরা দু-জন যখন আছি তখন ঠিক যোগাড় হয়ে যাবে। হাঁসগুলো সব ঝোপেঝাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে- ইয়া বড়-বড় পুরুষ্টু হাঁস।’

‘কিন্তু ও তো আমাদের নয়।’

ছেলেটা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ও আমার বোকার মতো কথা শুনে অবাক হয়েছে।

তারপর সহজভাবে বললে, ‘আজকালকার দিনে সবকিছুই সকলের। আচ্ছা ওই খোলা জায়গাটার পেছনে গিয়ে একটা হাঁসকে আস্তে-আস্তে আমার দিকে তাড়িয়ে আনো দেখি। আমি ঝোপের আড়ালে থাকব’খন।’

একটা মোটাসোটা ছাইরঙের হাঁস দলছাড়া হয়ে পড়েছিল। দেখে পছন্দ হওয়ায় ওটার পথ আগলে দাঁড়ালাম। হাঁসটা উলটো মুখে ফিরে আস্তে-আন্তে হাঁটতে লাগল আর মাঝে মাঝে থেমে মাটি থেকে কী সব খেতে লাগল ঘাটে-ঘাটে। এক-পা এক-পা করে আমি ওটাকে ছেলেটার ঝোপের দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৯)

০৮:০০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ছেলেটার মুখটা দেখতে লাগছিল ফ্যাকাশে, চোখের নিচে গোল হয়ে কালিপড়া। দেখে মনে হচ্ছিল, আমার মতো ও-ও খুব সম্ভব রাত্তিরটা জঙ্গলে কাটিয়েছে।

‘ওখানে যাবার কথা ভাবছিলে বুঝি?’ খামারবাড়িটার দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে আস্তে-আস্তে ছেলেটা বলল।

বললুম, ‘হ্যাঁ। আর তুমি?’

‘ওরা দেবে লবডঙ্কা, বুঝলে? তিন-তিনটে হোঁতকা চাষী থাকে ওখানে। আমি দেখে নিয়েছি ওদের। শেষকালে কার পাল্লায় পড়তে হবে, তা কি বলা যায়?’

‘তা হলে? কী করা? কিছু খেতে হবে তো!’

‘সে তো বটেই,’ ও সায় দিল। ‘তবে ভিক্ষে করে নয়। তাছাড়া, আজকাল ভিক্ষে দেয়ও না কেউ। কিন্তু তুমি কে?’ প্রশ্নটা করেই কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে উঠল: ‘আচ্ছা, ওকথা থাক। খাবার আমাদেরই যোগাড় করতে হবে। তবে একার পক্ষে পাওয়া ভারি শক্ত। আমি চেষ্টার কসুর করি নি তো। তা, আমরা দু-জন যখন আছি তখন ঠিক যোগাড় হয়ে যাবে। হাঁসগুলো সব ঝোপেঝাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে- ইয়া বড়-বড় পুরুষ্টু হাঁস।’

‘কিন্তু ও তো আমাদের নয়।’

ছেলেটা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ও আমার বোকার মতো কথা শুনে অবাক হয়েছে।

তারপর সহজভাবে বললে, ‘আজকালকার দিনে সবকিছুই সকলের। আচ্ছা ওই খোলা জায়গাটার পেছনে গিয়ে একটা হাঁসকে আস্তে-আস্তে আমার দিকে তাড়িয়ে আনো দেখি। আমি ঝোপের আড়ালে থাকব’খন।’

একটা মোটাসোটা ছাইরঙের হাঁস দলছাড়া হয়ে পড়েছিল। দেখে পছন্দ হওয়ায় ওটার পথ আগলে দাঁড়ালাম। হাঁসটা উলটো মুখে ফিরে আস্তে-আন্তে হাঁটতে লাগল আর মাঝে মাঝে থেমে মাটি থেকে কী সব খেতে লাগল ঘাটে-ঘাটে। এক-পা এক-পা করে আমি ওটাকে ছেলেটার ঝোপের দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম।