১০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১৬)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
  • 53

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

‘কী ব্যাপার? এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে?’ চোঁচিয়ে বললুম। ‘তারপর, খবরকী?’

‘ওখানে কেউ নেই,’ দূর থেকেই মাথা নেড়ে বললে ও। ‘ওদের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। লাল ফৌজ নিশ্চয়ই অন্য পথ ধরে চলে গেছে, খুব সম্ভব এখান থেকে অল্প খানিকটা দূরে সুগুলিনিক বলে যে একটা গ্রাম আছে সেই দিকেই গেছে।’

আমার তখন মুখ দিয়ে কথা সরছে না। তবু ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করলুম, ‘ঠিক জানো তো? সত্যি বলছ, এ-গাঁয়ে কেউ নেই?’

‘একটি প্রাণী নেই। গাঁয়ের ধারের এক কর্তৃড়েয় এক বুড়ির সঙ্গে দেখা, তাছাড়া পেছনদিকের বাগানে একটা ছেলের সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল। ওরা দু-জনে তাই তো বললে। মনে হচ্ছে আজ রাতটা এখানেই কাটাতে হবে, ইয়ার। কাল সকালে আবার ওদের খোঁজে বেরোতে হবে।’

ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে চিন্তায় ডুবে গেলুম। আমার সঙ্গীর কথা কতটা সত্যি সে-সম্পর্কে’ সেই প্রথম আমার মনে সন্দেহ দেখা দিল। আরেকটা জিনিস যা আমায় ভাবিয়ে তুলেছিল তা হল ওর ওই লাঠি। লাঠিটা ছিল ভারি ওক-কাঠের, মাথার দিকটায় আবার গোলমতো একটা গাঁট কেটে তৈরি করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল, ও তখুনি ওটা তৈরি করে এনেছিল। আমরা যেখানে ছিলুম সেখান থেকে গ্রামে পৌছতেই ঘণ্টাখানেক সময় লাগার কথা। আর যদি লুকিয়ে-চুরিয়ে লোককে জিজ্ঞেস করে-করে গ্রামে যেতে হয় তাহলে তো পৌছতেই কম করে ঘণ্টা-দুই সময় লাগা উচিত।

অথচ ছেলেটা বড় জোর এক ঘণ্টার মধ্যে এতটা পথ ঘুরে আবার ফিরে এল, আর শুধু তাই-ই নয়, মাথায় গাঁটওয়ালা ওক-কাঠের অমন একখানা লাঠিও বানিয়ে আনল ওই সময়ের মধ্যে। পকেটছুরি দিয়ে ওই রকম একখানা লাঠি বানাতে কমপক্ষে আধঘণ্টা লাগার কথা। আচ্ছা, এও তো হতে পারে যে শেষপর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে ও কোনো কিছু খোঁজ করার চেষ্টা না করেই কাছাকাছি কোনো ঝোপে বসে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দিয়ে এসেছে? না, ব্যাপারটা তা নয়। তা যদি হত তাহলে ও নিজে থেকেই গিয়ে খোঁজ করার প্রস্তাব করত না। তাছাড়া, ওকে দেখেও ভিতু বলে মনে হয় না। কাজটার মধ্যে বিপদের ঝুঁকি ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু যা হোক, ওকেই উদ্ধারের একটা রাস্তা বের করে নিতে হয়েছে।

একবোঝা শুকনো পাতা জড়ো করে আমরা দু-জন পাশাপাশি শুয়ে পড়লুম। দু-জনে মিলে ভাগাভাগি করে গায়ে দিলুম আমার কোটটা। ওইভাবে আধ ঘণ্টাটাক চুপচাপ শুয়ে রইলুম দু-জনে। তারপর ভিজে মাটির জন্যে আমার একটা পাশে ঠান্ডা অনুভব করতে লাগলুম। তখন ‘আরও কিছু পাতা যোগাড় করা দরকার,’ ভেবে উঠে পড়লুম।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১৬)

০৮:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

‘কী ব্যাপার? এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে?’ চোঁচিয়ে বললুম। ‘তারপর, খবরকী?’

‘ওখানে কেউ নেই,’ দূর থেকেই মাথা নেড়ে বললে ও। ‘ওদের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। লাল ফৌজ নিশ্চয়ই অন্য পথ ধরে চলে গেছে, খুব সম্ভব এখান থেকে অল্প খানিকটা দূরে সুগুলিনিক বলে যে একটা গ্রাম আছে সেই দিকেই গেছে।’

আমার তখন মুখ দিয়ে কথা সরছে না। তবু ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করলুম, ‘ঠিক জানো তো? সত্যি বলছ, এ-গাঁয়ে কেউ নেই?’

‘একটি প্রাণী নেই। গাঁয়ের ধারের এক কর্তৃড়েয় এক বুড়ির সঙ্গে দেখা, তাছাড়া পেছনদিকের বাগানে একটা ছেলের সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল। ওরা দু-জনে তাই তো বললে। মনে হচ্ছে আজ রাতটা এখানেই কাটাতে হবে, ইয়ার। কাল সকালে আবার ওদের খোঁজে বেরোতে হবে।’

ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে চিন্তায় ডুবে গেলুম। আমার সঙ্গীর কথা কতটা সত্যি সে-সম্পর্কে’ সেই প্রথম আমার মনে সন্দেহ দেখা দিল। আরেকটা জিনিস যা আমায় ভাবিয়ে তুলেছিল তা হল ওর ওই লাঠি। লাঠিটা ছিল ভারি ওক-কাঠের, মাথার দিকটায় আবার গোলমতো একটা গাঁট কেটে তৈরি করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল, ও তখুনি ওটা তৈরি করে এনেছিল। আমরা যেখানে ছিলুম সেখান থেকে গ্রামে পৌছতেই ঘণ্টাখানেক সময় লাগার কথা। আর যদি লুকিয়ে-চুরিয়ে লোককে জিজ্ঞেস করে-করে গ্রামে যেতে হয় তাহলে তো পৌছতেই কম করে ঘণ্টা-দুই সময় লাগা উচিত।

অথচ ছেলেটা বড় জোর এক ঘণ্টার মধ্যে এতটা পথ ঘুরে আবার ফিরে এল, আর শুধু তাই-ই নয়, মাথায় গাঁটওয়ালা ওক-কাঠের অমন একখানা লাঠিও বানিয়ে আনল ওই সময়ের মধ্যে। পকেটছুরি দিয়ে ওই রকম একখানা লাঠি বানাতে কমপক্ষে আধঘণ্টা লাগার কথা। আচ্ছা, এও তো হতে পারে যে শেষপর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে ও কোনো কিছু খোঁজ করার চেষ্টা না করেই কাছাকাছি কোনো ঝোপে বসে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দিয়ে এসেছে? না, ব্যাপারটা তা নয়। তা যদি হত তাহলে ও নিজে থেকেই গিয়ে খোঁজ করার প্রস্তাব করত না। তাছাড়া, ওকে দেখেও ভিতু বলে মনে হয় না। কাজটার মধ্যে বিপদের ঝুঁকি ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু যা হোক, ওকেই উদ্ধারের একটা রাস্তা বের করে নিতে হয়েছে।

একবোঝা শুকনো পাতা জড়ো করে আমরা দু-জন পাশাপাশি শুয়ে পড়লুম। দু-জনে মিলে ভাগাভাগি করে গায়ে দিলুম আমার কোটটা। ওইভাবে আধ ঘণ্টাটাক চুপচাপ শুয়ে রইলুম দু-জনে। তারপর ভিজে মাটির জন্যে আমার একটা পাশে ঠান্ডা অনুভব করতে লাগলুম। তখন ‘আরও কিছু পাতা যোগাড় করা দরকার,’ ভেবে উঠে পড়লুম।