আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
কথাগুলো দূরে মিলিয়ে গেল। হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম আমি, কী ভাবব তা-ই ভেবে পেলুম না। তা হলে ব্যাপারটা সত্যি লাল ফৌজ ওই গ্রামেই আছে। আর আমার সঙ্গীটি আমায় ধোঁকা দিয়েছে তাহলে। লাল ফৌজ রাত বারোটায় গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এরপর আবার চেষ্টা করে ওদের নাগাল পাওয়া যাবে? কাজেই আমাদের তাড়াতাড়ি গিয়ে ওদের ধরতে হবে। কিন্তু, কিন্তু ছেলেটা আমায় ঠকাল কেন?
একবার মনে হল, থাক আর কাউকে দরকার নেই একাই রাস্তা ধরে গ্রামের দিকে ছুট লাগাই। কিন্তু মনে পড়ল আমার কোটটা-যে আমাদের শোওয়ার জায়গায় রয়ে গেছে। ‘নাঃ, ফিরেই যাই। এখনও ঢের সময় আছে। ছেলেটাকেও গিয়ে খবরটা দিই। ছেলেটা ভিতু বটে, তবু আমাদেরই তো একজন।’
একটা খড়মড় আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে দেখলুম। আমার সঙ্গীটি ঝোপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছিল। বোঝা গেল, ও আমার পেছন-পেছন অনুসরণ করে এসেছিল। তাহলে ও-ও নিশ্চয় ঝোপে লুকিয়ে থেকে দুই চাষীর মধ্যেকার কথাবার্তা শুনেছিল।
‘আচ্ছা, কী করে তুমি…’ আমি অনুযোগের সুরে আরম্ভ করলুম।
জবাবে উত্তেজিতভাবে ও বলল, ‘এদিকে এস!’
আমি রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করলুম। ও আমার পেছনে-পেছনে এল।
হঠাৎ লাঠির একটা সজোর ঘা খেয়ে লুটিয়ে পড়লুম। মাথায় লোমের টুপির আড়াল থাকা সত্ত্বেও জ্ঞান হারিয়ে ফেললুম ঘা খেয়ে। যখন চোখ খুললুম, দেখলুম উবু হয়ে বসে চাঁদের আলোয় আমার সঙ্গীটি আমার ট্রাউজার্সের পকেট থেকে ইতিমধ্যে টেনে-বের-করে-নেয়া পরিচয়-পত্রটায় চোখ বুলোচ্ছে।
এতক্ষণে জ্ঞানোদয় হল আমার। ‘ও, ওর এ-ই মতলব ছিল। তাহলে যা ভেবেছিলুম তা নয়, মোটেই ভয় পেয়ে ও মিথ্যে কথা বলে নি। ও জানত, লাল ফৌজ ওই গ্রামেই আছে। কিন্তু ইচ্ছে করেই আমায় সেকথা বলে নি, কারণ রাত্রে ও আমার সঙ্গে থেকে আমার পরিচয়-পত্রটি হাতাবে, এই ছিল মতলব। ও ভিতুও নয়, বিদ্রোহীও নয়, কারণ কুলাকদেরও ও ভয় পাচ্ছিল। ও দেখছি তাহলে একেবারে খাঁটি শ্বেতরক্ষী।’
অল্প একটু উচু হয়ে ঝোপের মধ্যে গুড়ি মেরে ঢোকার চেষ্টা করলুম। ছেলেটা এটা লক্ষ্য করে পরিচয়-পত্রটা ওর চামড়ার ব্যাগে গুজে দিয়ে আমার কাছে এল।