০৯:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৫৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
  • 154

সুবোধ ডাক্তার

ফরিদপুরে আরও একজন ডাক্তার আসিলেন, বাবু সুবোধচন্দ্র সরকার। এই ভদ্রলোকের দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয়ে আমাদের গ্রামদেশে শত শত কাহিনী ছড়াইয়া আছে। তিনি রোগীর বাড়িতে যাইয়া রোগীকে কিঞ্চিৎ সুস্থ না করিয়া ফিরিতেন না। দূরের কোনো রোগী দেখিতে যাইয়া মাঝে মাঝে তিনি দুই-তিনদিন পর্যন্ত সেখানে কাটাইতেন। পারিশ্রমিকের জন্য কোনোই পরোয়া করিতেন না।

একবার পদ্মানদী পার হইয়া মাধবদিয়ার চরে তিনি এক মুসলমান চাষীর বাড়ি রোগী দেখিতে আসিয়াছেন। রোগী দেখিয়া ঔষধপত্র লিখিয়া দিতেছেন, এমন সময় একটি করুণ দৃশ্য তাঁর চোখে পড়িল। রোগীর পিতা বৃদ্ধ চাষী ধীরে ধীরে তার গোয়াল হইতে দুই-তিনটি হালের বলদ খুলিয়া দিতেছে। অপর একজন লোক সেই গরুগুলি অন্যত্র লইয়া যাইতে বৃথা চেষ্টা করিতেছে। গরুগুলি কিছুতেই যাইতে চাহে না। বৃদ্ধ চোখের পানি ফেলিতে ফেলিতে বলিতেছে, “তোদের আমি রাখিতে পারলাম না। এজন্য আমাকে কোনো দোষ দিস না। অপরের বাড়িতে যাইয়া তোরা সুখে থাকিস।” গরুগুলিও সেই বৃদ্ধের সঙ্গে চোখের পানি ফেলিতেছে। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই গরুগুলি অপরে লইয়া যাইতেছে কেন?” বৃদ্ধ তখন বলিল, “ডাক্তারবাবু। আমার এই একটি মাত্র ছেলে অসুখে পড়িয়াছে। এত দূরের পথে আপনাকে আনিয়াছি, আপনাকে অন্তত একশত টাকা দিতে হইবে। তাহা ছাড়া ঔষধপত্রের দামও আছে। তাই গরুগুলি বেচিয়া দিতেছি।”

ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই গরুগুলি বেচিলে তোমরা হাল চাষ করিবে কি দিয়া?”

বৃদ্ধ বলিল, “সেকথা ভাবিলে তো চারিদিক অন্ধকার দেখি। আগে ছেলে তো ভালো হউক। কিন্তু ডাক্তারবাবু। বড়ই মুস্কিলে পড়িয়াছি, গরুগুলি বোধহয় আগেই টের পাইয়াছে। তাহারা কিছুতেই গোয়াল ছাড়িয়া যাইতে চায় না। বলুন তো কি করি?”

ডাক্তার বলিলেন, “মিঞাসাহেব! আপনাকে গরুগুলি বেচিতে হইবে না। আপনার ছেলের অসুখের জন্য আমাকে কোনো পারিশ্রমিকই দিতে হইবে না।”

লোকটি বলিল, “কিন্তু ঔষধের দাম তো দিতে হইবে। ঘরে যে একটি পয়সাও নাই।”

ডাক্তার উত্তর করিলেন, “আপনার ছেলের জন্য যা কিছু ঔষধ লাগে আমি কিনিয়া দিব। সেজন্য কোনো চিন্তা করিবেন না।”

আমাদের গ্রামদেশে এই ডাক্তারবাবুর বিষয়ে এমনি শত শত গল্প প্রচলিত আছে। এক সময়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে তাঁহার খ্যাতি এতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হইয়াছিল, কেহ যদি তাঁহার মূর্তি গড়িয়া পূজা করিত তবে দেশের শত সহস্র হিন্দু-মুসলমান একত্র হইয়া সেই পূজায় মাঝে মাঝে ডাক্তারবাবু পাঁচ-ছয়দিনের জন্য কোথাও উধাও হইয়া যাইতেন। রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা, ডাক্তারবাবুর ছেলেরা এ-গাঁয়ে সে-গাঁয়ে তাঁহাকে খুঁজিয়া বেড়াইত। থানায় খবর পাঠাইত, ডাক্তারবাবুকে পাওয়া যাইতেছে না। চারিদিকে লোক ছুটিত তাঁহার সন্ধান করিতে।

 

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৫৭)

১১:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫

সুবোধ ডাক্তার

ফরিদপুরে আরও একজন ডাক্তার আসিলেন, বাবু সুবোধচন্দ্র সরকার। এই ভদ্রলোকের দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয়ে আমাদের গ্রামদেশে শত শত কাহিনী ছড়াইয়া আছে। তিনি রোগীর বাড়িতে যাইয়া রোগীকে কিঞ্চিৎ সুস্থ না করিয়া ফিরিতেন না। দূরের কোনো রোগী দেখিতে যাইয়া মাঝে মাঝে তিনি দুই-তিনদিন পর্যন্ত সেখানে কাটাইতেন। পারিশ্রমিকের জন্য কোনোই পরোয়া করিতেন না।

একবার পদ্মানদী পার হইয়া মাধবদিয়ার চরে তিনি এক মুসলমান চাষীর বাড়ি রোগী দেখিতে আসিয়াছেন। রোগী দেখিয়া ঔষধপত্র লিখিয়া দিতেছেন, এমন সময় একটি করুণ দৃশ্য তাঁর চোখে পড়িল। রোগীর পিতা বৃদ্ধ চাষী ধীরে ধীরে তার গোয়াল হইতে দুই-তিনটি হালের বলদ খুলিয়া দিতেছে। অপর একজন লোক সেই গরুগুলি অন্যত্র লইয়া যাইতে বৃথা চেষ্টা করিতেছে। গরুগুলি কিছুতেই যাইতে চাহে না। বৃদ্ধ চোখের পানি ফেলিতে ফেলিতে বলিতেছে, “তোদের আমি রাখিতে পারলাম না। এজন্য আমাকে কোনো দোষ দিস না। অপরের বাড়িতে যাইয়া তোরা সুখে থাকিস।” গরুগুলিও সেই বৃদ্ধের সঙ্গে চোখের পানি ফেলিতেছে। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই গরুগুলি অপরে লইয়া যাইতেছে কেন?” বৃদ্ধ তখন বলিল, “ডাক্তারবাবু। আমার এই একটি মাত্র ছেলে অসুখে পড়িয়াছে। এত দূরের পথে আপনাকে আনিয়াছি, আপনাকে অন্তত একশত টাকা দিতে হইবে। তাহা ছাড়া ঔষধপত্রের দামও আছে। তাই গরুগুলি বেচিয়া দিতেছি।”

ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই গরুগুলি বেচিলে তোমরা হাল চাষ করিবে কি দিয়া?”

বৃদ্ধ বলিল, “সেকথা ভাবিলে তো চারিদিক অন্ধকার দেখি। আগে ছেলে তো ভালো হউক। কিন্তু ডাক্তারবাবু। বড়ই মুস্কিলে পড়িয়াছি, গরুগুলি বোধহয় আগেই টের পাইয়াছে। তাহারা কিছুতেই গোয়াল ছাড়িয়া যাইতে চায় না। বলুন তো কি করি?”

ডাক্তার বলিলেন, “মিঞাসাহেব! আপনাকে গরুগুলি বেচিতে হইবে না। আপনার ছেলের অসুখের জন্য আমাকে কোনো পারিশ্রমিকই দিতে হইবে না।”

লোকটি বলিল, “কিন্তু ঔষধের দাম তো দিতে হইবে। ঘরে যে একটি পয়সাও নাই।”

ডাক্তার উত্তর করিলেন, “আপনার ছেলের জন্য যা কিছু ঔষধ লাগে আমি কিনিয়া দিব। সেজন্য কোনো চিন্তা করিবেন না।”

আমাদের গ্রামদেশে এই ডাক্তারবাবুর বিষয়ে এমনি শত শত গল্প প্রচলিত আছে। এক সময়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে তাঁহার খ্যাতি এতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হইয়াছিল, কেহ যদি তাঁহার মূর্তি গড়িয়া পূজা করিত তবে দেশের শত সহস্র হিন্দু-মুসলমান একত্র হইয়া সেই পূজায় মাঝে মাঝে ডাক্তারবাবু পাঁচ-ছয়দিনের জন্য কোথাও উধাও হইয়া যাইতেন। রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা, ডাক্তারবাবুর ছেলেরা এ-গাঁয়ে সে-গাঁয়ে তাঁহাকে খুঁজিয়া বেড়াইত। থানায় খবর পাঠাইত, ডাক্তারবাবুকে পাওয়া যাইতেছে না। চারিদিকে লোক ছুটিত তাঁহার সন্ধান করিতে।

 

চলবে…..