আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
অপর লোকটি রাগত গলায় জবাব দিল, ‘মিশ্কারে খুঁজচি। আমাদের দু-জনার মতো চিনি দিয়েচে ওর ঠোঁয়ে, তা সবাই কইচে ওরে নাকি প্যাট্রোল-দলের সঙ্গে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়েচে।’
‘তাতে হয়েচে কী? কাল ও তোমারে চিনি দেবে’খন।’
‘দিলিই হল? মরে যাই আর কী! ও যা মিষ্টিখোর, সকালে চায়ের সঙ্গে সবটুকু সাবাড় করি বসে থাকবে অখন!’
এই সময়ে আমার দিকে নজর পড়ে গেল লোকটির। সঙ্গে সঙ্গে কথার সূর বদলে কৌতূহলের সঙ্গে প্রশ্ন করলে:
‘ও কারে পাকড়াও করি আনলে, চুবুক? কী, সদর দপ্তরে লিয়ে যাচ্ছ? তা যাও। আচ্ছা করে ওরে শিক্ষে দিয়ে দেবে’খন ওখেনে। হাঃ, শোরের বাচ্চা কোথাকার,’ হঠাৎ আমায় গালাগাল দিয়ে উঠল লোকটা। তারপর এমন একটা ভঙ্গি করলে যেন ওর রাইফেলের বাঁট দিয়ে খোঁচা দেবে আমায়।
কিন্তু আমার সঙ্গীটি ওকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে চাপা গলায় গর্জন করে উঠল:
‘যাও, যাও, নিজের কাজে যাও দিকি। সব তাতে মাথা গলানো চাই। এ্যাঃ, দ্যাখো-না, যেন একটা খ্যাপা কুকুর, কে, কী বিত্তান্ত, জানা নেই শোনা নেই মানুষজন দেখলিই কামড়াতে আসে!’
‘ক্লিঙ্ক, ক্লিঙ্ক। ক্লিঙ্ক, ক্লিঙ্ক!’ এমন সময় পাশ থেকে ধাতুর তৈরি জিনিসের টুংটুং আওয়াজ কানে এল। চেয়ে দেখলুম একজন লোক। পায়ের গোড়ালিতে তাঁর ঘোড়সওয়ারের নাল লাগানো, মাথায় কালোরঙের পাপাখা, কোমরে মাটি পর্যন্ত লম্বা ঝকঝকে একটা তরোয়াল আর কাঠের খাপের মধ্যে একটা মাওজার আর হাতের ওপর আড়াআড়িভাবে ঝোলানো একটা চাবুক নিয়ে একটা ঘোড়াকে পাশের একটা গেট থেকে বের করে আনছেন লোকটি।
লোকটির পাশে-পাশে একজন বিউগুল-বাদকও হে’টে আসছিল।
ঘোড়ার জিন থেকে ঝোলানো রেকাবের ওপর এক-পা রেখে আগের লোকটি হাঁকলেন, ‘একজোট হও সব।’
সঙ্গে সঙ্গে আস্তে-আস্তে বিউগ্ল বেজে উঠল, ‘টা-টা-রা-টা… টাটা… টা-টা-টা-টা-আ-আ…’
‘শেবালভ,’ আমার সঙ্গী লোকটিকে ডাকল। ‘এক মিনিট দাঁড়াও দেখি। তোমার সঙ্গে দেখা করানোর জন্যি একজনরে এনেচি।’