০৭:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-২৪)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
  • 146

আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

কাঁড়েঘরটায় না-ঢোকা পর্যন্ত লোকটিকে ভালো করে দেখতে পাই নি। এবার লক্ষর বাতির আবছা আলোয় ঠাহর করে দেখলুম। লোকটির দাড়িগোঁফ পরিষ্কার কামানো। লম্বা সরু মুখটা এবড়োখেবড়ো। মোটা-মোটা শণের রঙের একজোড়া ভুরু নাকের ওপর এসে মিশে গেছে। আর জোড়া-ভুরুর তলা থেকে তাকিয়ে আছে একজোড়া দয়ালু চোখ। তবে দেখলুম লোকটি মুখখানাকে কঠোর করে তোলার জন্যে ইচ্ছে করে চোখ দুটো কাঁচকে রয়েছেন।

আমার কাগজপত্র পড়ে উঠতে তিনি এত বেশি সময় নিতে লাগলেন আর পড়ার সময় কথাগুলো মনে-মনে উচ্চারণ করার ভঙ্গিতে ওঁর ঠোঁট দুটো এমনভাবে অল্প-অল্প নড়তে লাগল যে বুঝলুম লোকটি তেমন লেখাপড়া-জানা নন। পরিচয়-পত্র পড়া শেষ হলে চুবুককে ওটা ফেরত দিয়ে সন্দেহভরা গলায় বললেন:

‘এটা যদি জাল কাগজ না হয় তো বুঝতি হবে খাঁটি দলিল। তা, তুমি কী কও, চুবুক?’

বাঁকা পাইপে মাখোর্কা তামাক ভরতে-ভরতে নির্বিকারভাবে সায় দিলেন অন্যজন, ‘হাহা!’

‘তা, তুমি এখেনে কী করছিলে?’ কম্যান্ডার এবার আমায় জিজ্ঞেস করলেন। উত্তেজিতভাবে আমার কাহিনী বলে গেলুম। প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল ওঁরা হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হল, ওঁরা বিশ্বাস করেছেন। কারণ, আমার গল্প বলা শেষ হলে দেখলুম কম্যান্ডারের চোখ আর কাঁচকে নেই, বরং চুবুকের দিকে ফিরে তিনি এবার সদয়ভাবেই বললেন:

‘মনে লিচ্ছে কী, আমাদের এই ছেলেটা যদি মিথ্যে কথা না-কয়ে থাকে তো বুঝতি হবে সত্যি কথাই কইচে! তা তুমি কী কও, চুবুক?’

বুটের তলায় ঠুকে-ঠুকে পাইপের ছাইটা ঝাড়তে-ঝাড়তে চুবুক আবার নির্বিকারভাবে সায় দিলেন, ‘হাহা!’

‘তাইলে, ওরে লিয়ে কী কাম আমাদের?’

‘ওরে এক লম্বর কোম্পানিতে ভরতি করে লিই, নাকি বল? পাক্কা মারা পড়ার পরে যে রাইফেলটা রয়ে গ্যাচে সুখারেভ সেটা ওরে দিক?’ চুবুক বুদ্ধি যোগালেন।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

রণক্ষেত্রে (পর্ব-২৪)

০৮:০০:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

কাঁড়েঘরটায় না-ঢোকা পর্যন্ত লোকটিকে ভালো করে দেখতে পাই নি। এবার লক্ষর বাতির আবছা আলোয় ঠাহর করে দেখলুম। লোকটির দাড়িগোঁফ পরিষ্কার কামানো। লম্বা সরু মুখটা এবড়োখেবড়ো। মোটা-মোটা শণের রঙের একজোড়া ভুরু নাকের ওপর এসে মিশে গেছে। আর জোড়া-ভুরুর তলা থেকে তাকিয়ে আছে একজোড়া দয়ালু চোখ। তবে দেখলুম লোকটি মুখখানাকে কঠোর করে তোলার জন্যে ইচ্ছে করে চোখ দুটো কাঁচকে রয়েছেন।

আমার কাগজপত্র পড়ে উঠতে তিনি এত বেশি সময় নিতে লাগলেন আর পড়ার সময় কথাগুলো মনে-মনে উচ্চারণ করার ভঙ্গিতে ওঁর ঠোঁট দুটো এমনভাবে অল্প-অল্প নড়তে লাগল যে বুঝলুম লোকটি তেমন লেখাপড়া-জানা নন। পরিচয়-পত্র পড়া শেষ হলে চুবুককে ওটা ফেরত দিয়ে সন্দেহভরা গলায় বললেন:

‘এটা যদি জাল কাগজ না হয় তো বুঝতি হবে খাঁটি দলিল। তা, তুমি কী কও, চুবুক?’

বাঁকা পাইপে মাখোর্কা তামাক ভরতে-ভরতে নির্বিকারভাবে সায় দিলেন অন্যজন, ‘হাহা!’

‘তা, তুমি এখেনে কী করছিলে?’ কম্যান্ডার এবার আমায় জিজ্ঞেস করলেন। উত্তেজিতভাবে আমার কাহিনী বলে গেলুম। প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল ওঁরা হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হল, ওঁরা বিশ্বাস করেছেন। কারণ, আমার গল্প বলা শেষ হলে দেখলুম কম্যান্ডারের চোখ আর কাঁচকে নেই, বরং চুবুকের দিকে ফিরে তিনি এবার সদয়ভাবেই বললেন:

‘মনে লিচ্ছে কী, আমাদের এই ছেলেটা যদি মিথ্যে কথা না-কয়ে থাকে তো বুঝতি হবে সত্যি কথাই কইচে! তা তুমি কী কও, চুবুক?’

বুটের তলায় ঠুকে-ঠুকে পাইপের ছাইটা ঝাড়তে-ঝাড়তে চুবুক আবার নির্বিকারভাবে সায় দিলেন, ‘হাহা!’

‘তাইলে, ওরে লিয়ে কী কাম আমাদের?’

‘ওরে এক লম্বর কোম্পানিতে ভরতি করে লিই, নাকি বল? পাক্কা মারা পড়ার পরে যে রাইফেলটা রয়ে গ্যাচে সুখারেভ সেটা ওরে দিক?’ চুবুক বুদ্ধি যোগালেন।