০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে

মোনায়েম সরকার : নিবেদিতপ্রাণ এক সংগ্রামী

  • Sarakhon Report
  • ১১:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫
  • 96

লায়লা খানম শিল্পী

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য নাম মোনায়েম সরকার। তিনি শুধু রাজনীতিবিদ নন, একজন নিবেদিতপ্রাণ লেখক, গবেষক ও সংগঠক। তাঁকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। আমি তাঁর অনেক গুণমুগ্ধের মধ্যে নগন্য একজন। তিনি আমার দাদু। আমি তাঁর নাতনি। না, আমাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরিচয়ের পর থেকে গত ৩০ বছরের মতো সময় ধরে তিনি আমার আত্মার আত্মীয়তে পরিণত হয়েছেন, মহীরুহের মতো ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে আগলে রেখেছেন।
১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই সংগ্রামী মানুষটি আজীবন দেশের মৌলিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের লাভ-লোভের উর্দ্ধে থেকে, সংসারবিরাগী হয়ে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। তাঁর কর্মযজ্ঞ যতটা বিস্তৃত, ততটাই তিনি নেপথ্যচারী। কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন না, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর নীতি। বাংলাদেশে খ্যাতিমান মানুষ হিসেবে যাঁরা পরিচিত, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যাঁরা এক নামে পরিচিত, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই ছিল বা আছে তাঁর পরিচয় ও সখ্য।


মূলত রাজনীতির মানুষ হলেও মোনায়েম সরকার লেখালেখিতেও অনেক সিদ্ধহস্ত। নিজে লেখেন, অন্যদেরও লিখতে অনুপ্রাণিত করেন। অনেক কিছুই করেছেন তিনি। ২৩ চামেলীবাগে তাঁর আবাসস্থলে কত মানুষের যে উপস্থিতি ছিল এক সময়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার তিনি সাক্ষী এবং অনুঘটক। বরাবরই তিনি প্রগতিশীল ধারার সমর্থক। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তারপর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। সত্তর দশকের শেষ দিকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েও একপর্যায়ে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রায় দুই দশকের মতো সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে লেখালেখিতে আছেন। দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে সংগঠিত করতে সব সময় তিনি আপসহীন। রাজনীতির ময়দানে থেকে কিংবা কলমের মাধ্যমে, সর্বদাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন, ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে ফেলোশিপ দিয়ে সম্মানিত করে।
লেখালেখিটাকেও তিনি রাজনৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই দেখেছেন সব সময়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে দলিলবদ্ধ করার দায়িত্বও পালন করেছেন। শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা ও সম্পাদক তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, থিমেটিক ম্যাপ প্রণয়ন, বাইশ পর্বের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ—এসবের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের (বিএফডিআর) গড়ে তোলায় তাঁর ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীগ্রন্থ সম্পাদনা করে তিনি ইতিহাস চর্চার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মোনায়েম সরকারের জীবনে বয়স শুধু একটি সংখ্যা। ৮০ বছরে পা রেখেও তাঁর চিন্তা, কর্মশক্তি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। তিনি চিরতরুণ, চিরসংগ্রামী। তাঁর প্রতিদিনের সূর্যোদয় হয় বাংলাদেশের কল্যাণে ভাবতে ভাবতে, দিনের শেষে তিনি ক্লান্ত হন না; বরং ভবিষ্যতের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তিনি জীবনে কখনো আলস্যকে প্রশ্রয় দেননি, বরং পরিবার বলতে সংগঠনকেই সবচেয়ে বড় পরিবার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশে যখন মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হামলা হয়েছে, তখন তিনি চুপ করে থাকেননি। কবি শামসুর রাহমানের ওপর মৌলবাদীদের আক্রমণের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে, রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লার ঘটনা কিংবা পাবনা, রংপুর, যশোরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি তার বলিষ্ঠ অবস্থান রেখেছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে তিনি সমমনা মানুষদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন, লেখা ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন।


তিনি শুধু প্রতিবাদ করেননি, সমাধানও খুঁজেছেন। মোনায়েম সরকার রাজনৈতিক বিশ্লেষণে যে গভীরতা দেখিয়েছেন, তা বিরল। তিনি বিদ্যমান সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন, বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালান। তার লেখায় ধনী-গরিব বৈষম্য, রাষ্ট্রের অন্যায় নীতির নির্মমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই যথেষ্ট নয়, কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়—এই সত্য তিনি আমাদের শিখিয়েছেন।
মোনায়েম সরকার ইচ্ছা করলে অনেক কিছু হতে পারতেন—মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা ক্ষমতার উচ্চস্থানে আসীন কোনো ব্যক্তি। কিন্তু রাজনীতিকে ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখেননি। তাঁর রাজনীতি ছিল নিখাদ দেশপ্রেম থেকে উৎসারিত। তিনি সারাজীবন কর্মী হিসেবেই থেকে গেছেন। তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণে। তাঁর কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু একটা স্বপ্ন আছে—ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এক সোনার বাংলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।


মোনায়েম সরকার নিঃস্বার্থ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি। তিনি কখনো অহংকার করেননি, বরং বন্ধুদের প্রতি নির্ভরযোগ্য, অতিথিপরায়ণ ও হৃদয়বান একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। সমাজে তাঁর মতো মানুষের বড় প্রয়োজন, কারণ তবেই বাংলাদেশ আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।
জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শতায়ু কামনা করি।

চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক

মোনায়েম সরকার : নিবেদিতপ্রাণ এক সংগ্রামী

১১:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

লায়লা খানম শিল্পী

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য নাম মোনায়েম সরকার। তিনি শুধু রাজনীতিবিদ নন, একজন নিবেদিতপ্রাণ লেখক, গবেষক ও সংগঠক। তাঁকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। আমি তাঁর অনেক গুণমুগ্ধের মধ্যে নগন্য একজন। তিনি আমার দাদু। আমি তাঁর নাতনি। না, আমাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরিচয়ের পর থেকে গত ৩০ বছরের মতো সময় ধরে তিনি আমার আত্মার আত্মীয়তে পরিণত হয়েছেন, মহীরুহের মতো ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে আগলে রেখেছেন।
১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই সংগ্রামী মানুষটি আজীবন দেশের মৌলিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের লাভ-লোভের উর্দ্ধে থেকে, সংসারবিরাগী হয়ে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। তাঁর কর্মযজ্ঞ যতটা বিস্তৃত, ততটাই তিনি নেপথ্যচারী। কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন না, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর নীতি। বাংলাদেশে খ্যাতিমান মানুষ হিসেবে যাঁরা পরিচিত, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যাঁরা এক নামে পরিচিত, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই ছিল বা আছে তাঁর পরিচয় ও সখ্য।


মূলত রাজনীতির মানুষ হলেও মোনায়েম সরকার লেখালেখিতেও অনেক সিদ্ধহস্ত। নিজে লেখেন, অন্যদেরও লিখতে অনুপ্রাণিত করেন। অনেক কিছুই করেছেন তিনি। ২৩ চামেলীবাগে তাঁর আবাসস্থলে কত মানুষের যে উপস্থিতি ছিল এক সময়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার তিনি সাক্ষী এবং অনুঘটক। বরাবরই তিনি প্রগতিশীল ধারার সমর্থক। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তারপর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। সত্তর দশকের শেষ দিকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েও একপর্যায়ে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রায় দুই দশকের মতো সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে লেখালেখিতে আছেন। দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে সংগঠিত করতে সব সময় তিনি আপসহীন। রাজনীতির ময়দানে থেকে কিংবা কলমের মাধ্যমে, সর্বদাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন, ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে ফেলোশিপ দিয়ে সম্মানিত করে।
লেখালেখিটাকেও তিনি রাজনৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই দেখেছেন সব সময়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে দলিলবদ্ধ করার দায়িত্বও পালন করেছেন। শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা ও সম্পাদক তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, থিমেটিক ম্যাপ প্রণয়ন, বাইশ পর্বের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ—এসবের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের (বিএফডিআর) গড়ে তোলায় তাঁর ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীগ্রন্থ সম্পাদনা করে তিনি ইতিহাস চর্চার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মোনায়েম সরকারের জীবনে বয়স শুধু একটি সংখ্যা। ৮০ বছরে পা রেখেও তাঁর চিন্তা, কর্মশক্তি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। তিনি চিরতরুণ, চিরসংগ্রামী। তাঁর প্রতিদিনের সূর্যোদয় হয় বাংলাদেশের কল্যাণে ভাবতে ভাবতে, দিনের শেষে তিনি ক্লান্ত হন না; বরং ভবিষ্যতের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তিনি জীবনে কখনো আলস্যকে প্রশ্রয় দেননি, বরং পরিবার বলতে সংগঠনকেই সবচেয়ে বড় পরিবার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশে যখন মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হামলা হয়েছে, তখন তিনি চুপ করে থাকেননি। কবি শামসুর রাহমানের ওপর মৌলবাদীদের আক্রমণের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে, রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লার ঘটনা কিংবা পাবনা, রংপুর, যশোরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি তার বলিষ্ঠ অবস্থান রেখেছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে তিনি সমমনা মানুষদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন, লেখা ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন।


তিনি শুধু প্রতিবাদ করেননি, সমাধানও খুঁজেছেন। মোনায়েম সরকার রাজনৈতিক বিশ্লেষণে যে গভীরতা দেখিয়েছেন, তা বিরল। তিনি বিদ্যমান সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন, বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালান। তার লেখায় ধনী-গরিব বৈষম্য, রাষ্ট্রের অন্যায় নীতির নির্মমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই যথেষ্ট নয়, কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়—এই সত্য তিনি আমাদের শিখিয়েছেন।
মোনায়েম সরকার ইচ্ছা করলে অনেক কিছু হতে পারতেন—মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা ক্ষমতার উচ্চস্থানে আসীন কোনো ব্যক্তি। কিন্তু রাজনীতিকে ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখেননি। তাঁর রাজনীতি ছিল নিখাদ দেশপ্রেম থেকে উৎসারিত। তিনি সারাজীবন কর্মী হিসেবেই থেকে গেছেন। তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণে। তাঁর কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু একটা স্বপ্ন আছে—ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এক সোনার বাংলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।


মোনায়েম সরকার নিঃস্বার্থ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি। তিনি কখনো অহংকার করেননি, বরং বন্ধুদের প্রতি নির্ভরযোগ্য, অতিথিপরায়ণ ও হৃদয়বান একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। সমাজে তাঁর মতো মানুষের বড় প্রয়োজন, কারণ তবেই বাংলাদেশ আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।
জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শতায়ু কামনা করি।