১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

বিমসটেক সম্মেলনের ছায়ায় মিয়ানমারের সংকট

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
  • 22

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গত শুক্রবার মিয়ানমারে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পরপ্রভাব এবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বে অব বেঙ্গল অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনেও প্রতিফলিত হতে চলেছে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য অঞ্চলজুড়ে আন্তঃদেশীয় সংযোগ বৃদ্ধি হলেওমিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে সেসব আলোচনা এখন জটিল হয়ে উঠেছে।

থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়ভূমিকম্পের প্রভাব ও সামরিক জান্তা সরকারের দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা সম্মেলনে বিশেষভাবে আলোচনায় আসবে। বিশেষতসাগাইং অঞ্চল নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছেকারণ এটি ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সংযোগ সড়ক প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাগাইং অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি সাগাইং অঞ্চল। এটি এমনিতেই মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এর ফলে ১,৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভারত এই প্রকল্পকে গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেযা বিমসটেক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও অঙ্গীকার

মার্চের ভূমিকম্পের আগেই ভারত সাগাইং অংশে সমস্যা দেখছিল। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত অগ্রগতিকে ব্যাহত করছেতবে এত বড় উদ্যোগ থেমে থাকতে পারে না।” তিনি প্রয়োজনীয় বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজার কথা জানানযদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি।

মিয়ানমারের নেতার উপস্থিতি ঘিরে কূটনৈতিক সমালোচনা

সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর সরাসরি উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। থাই কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিচ্ছেন। তবে এই আমন্ত্রণের ফলে কিছু পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক মিশন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, “থাইল্যান্ডের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বিত অবস্থানের বিপরীতে গেছে।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের পর ২০২১ সাল থেকে মিন অং হ্লাইং-কে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।

বিমসটেকের ভৌগলিক গুরুত্ব

বিমসটেক অঞ্চল প্রায় ১৭০ কোটি মানুষের আবাসস্থলযার সম্মিলিত জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই অঞ্চলের গুরুত্ব কেবল ভূরাজনৈতিক নয়অর্থনৈতিকও। থাই বিশ্লেষক কাভি চংকিট্টাভর্ণ বলেন, “প্রতি বছর বিশ্বের এক চতুর্থাংশ বাণিজ্যিক পণ্য বে অব বেঙ্গল দিয়ে যায়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিমসটেক বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি উত্থানশীল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

মোদির নেতৃত্বে ভারতের সক্রিয়তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং আন্তঃসংযোগ প্রকল্প নিয়ে জোরালো অবস্থান তুলে ধরবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) জয়দীপ মজুমদার বলেন, “বিমসটেক সংযোগ নকশা অনুমোদিত হয়েছে এবং এখন তার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্মেলনে আমরা একটি সমুদ্র পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর করবোযা অঞ্চলীয় বন্দরগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সহজ করবে।

সংযোগই মূল অগ্রাধিকার

ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের গবেষক প্রেরণা গান্ধী বলেনবিমসটেকের আঞ্চলিক সংহতির একটি বড় অংশ এই সংযোগ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। ত্রিপাক্ষিক সড়কপথটি লাওসকম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও জানান২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আটকে আছে মিয়ানমারের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কারণে। ২০০২ সালে ধারণা করা এই প্রকল্পে ভারতের অংশে কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে।

থাইল্যান্ডের সমর্থন ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত

থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসা মার্চের মাঝামাঝি দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেনযেখানে সড়ক প্রকল্পে বিলম্ব নিয়ে আলোচনা হয়। থাইল্যান্ডের লুক ওয়েস্ট’ নীতির সঙ্গে এই প্রকল্পের লক্ষ্য মিলে যায়যা বিমসটেকের সূচনাবর্ষেই ঘোষণা করা হয়েছিল।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির অপেক্ষা

সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচি প্রকাশ করা হয়নি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমসটেক সম্মেলনের ছায়ায় মিয়ানমারের সংকট

১২:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গত শুক্রবার মিয়ানমারে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পরপ্রভাব এবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বে অব বেঙ্গল অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনেও প্রতিফলিত হতে চলেছে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য অঞ্চলজুড়ে আন্তঃদেশীয় সংযোগ বৃদ্ধি হলেওমিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে সেসব আলোচনা এখন জটিল হয়ে উঠেছে।

থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়ভূমিকম্পের প্রভাব ও সামরিক জান্তা সরকারের দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা সম্মেলনে বিশেষভাবে আলোচনায় আসবে। বিশেষতসাগাইং অঞ্চল নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছেকারণ এটি ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সংযোগ সড়ক প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাগাইং অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি সাগাইং অঞ্চল। এটি এমনিতেই মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এর ফলে ১,৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভারত এই প্রকল্পকে গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেযা বিমসটেক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও অঙ্গীকার

মার্চের ভূমিকম্পের আগেই ভারত সাগাইং অংশে সমস্যা দেখছিল। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত অগ্রগতিকে ব্যাহত করছেতবে এত বড় উদ্যোগ থেমে থাকতে পারে না।” তিনি প্রয়োজনীয় বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজার কথা জানানযদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি।

মিয়ানমারের নেতার উপস্থিতি ঘিরে কূটনৈতিক সমালোচনা

সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর সরাসরি উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। থাই কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিচ্ছেন। তবে এই আমন্ত্রণের ফলে কিছু পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক মিশন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, “থাইল্যান্ডের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বিত অবস্থানের বিপরীতে গেছে।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের পর ২০২১ সাল থেকে মিন অং হ্লাইং-কে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।

বিমসটেকের ভৌগলিক গুরুত্ব

বিমসটেক অঞ্চল প্রায় ১৭০ কোটি মানুষের আবাসস্থলযার সম্মিলিত জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই অঞ্চলের গুরুত্ব কেবল ভূরাজনৈতিক নয়অর্থনৈতিকও। থাই বিশ্লেষক কাভি চংকিট্টাভর্ণ বলেন, “প্রতি বছর বিশ্বের এক চতুর্থাংশ বাণিজ্যিক পণ্য বে অব বেঙ্গল দিয়ে যায়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিমসটেক বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি উত্থানশীল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

মোদির নেতৃত্বে ভারতের সক্রিয়তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং আন্তঃসংযোগ প্রকল্প নিয়ে জোরালো অবস্থান তুলে ধরবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) জয়দীপ মজুমদার বলেন, “বিমসটেক সংযোগ নকশা অনুমোদিত হয়েছে এবং এখন তার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্মেলনে আমরা একটি সমুদ্র পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর করবোযা অঞ্চলীয় বন্দরগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সহজ করবে।

সংযোগই মূল অগ্রাধিকার

ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের গবেষক প্রেরণা গান্ধী বলেনবিমসটেকের আঞ্চলিক সংহতির একটি বড় অংশ এই সংযোগ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। ত্রিপাক্ষিক সড়কপথটি লাওসকম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও জানান২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আটকে আছে মিয়ানমারের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কারণে। ২০০২ সালে ধারণা করা এই প্রকল্পে ভারতের অংশে কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে।

থাইল্যান্ডের সমর্থন ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত

থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসা মার্চের মাঝামাঝি দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেনযেখানে সড়ক প্রকল্পে বিলম্ব নিয়ে আলোচনা হয়। থাইল্যান্ডের লুক ওয়েস্ট’ নীতির সঙ্গে এই প্রকল্পের লক্ষ্য মিলে যায়যা বিমসটেকের সূচনাবর্ষেই ঘোষণা করা হয়েছিল।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির অপেক্ষা

সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচি প্রকাশ করা হয়নি।