০৭:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির ব্রিজার্টন সিজন ৪ ট্রেলার: ‘সিন্ডারেলা’ ধাঁচের রোম্যান্স, দুই ভাগে মুক্তি দিচ্ছে নেটফ্লিক্স কুমিল্লায় পথচারী নিহতের পর বাসে আগুন ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ও আরিচা–কাজীরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • 128

অন্যান্য সেবাকাজ

তখনকার দিনে আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল বড় হইয়া আমি সাধু-সন্ন্যাসী হইব। অবশিষ্ট জীবন পরের উপকার করিয়া কাটাইব। কবি বা সাহিত্যিক হইবার আকাঙ্ক্ষা তখনও মনে তেমন উচ্চ আশা বাঁধে নাই।

লোকের ভালো করিবার জন্য তখন মনে এমনি একটা জোর পাইতাম যে সেই কাজ করিতে যে টাকা-পয়সার প্রয়োজন তাহা চিন্তাও করিতাম না। কিন্তু টাকা-পয়সার দরকার হইলে তাহা আমি সহজেই পাইয়া যাইতাম। স্টেশন-মাস্টার উমাকান্তবাবু তো ছিলেনই, তাহা ছাড়া আর যাহার কাছে চাহিতাম সে-ই আমাকে টাকা-পয়সা দিত। এমনি একটি ঘটনার কথা আজ মনে পড়িতেছে।

খবর পাইলাম, শিবরামপুর রেলস্টেশন হইতে পাঁচ মাইল দূরে কোনো বিধবার একটিমাত্র পুত্র আমগাছ হইতে পড়িয়া হাত-পা ভাঙিয়া পড়িয়া আছে।

আমি তৎক্ষণাৎ সেই বিধবার একজন আত্মীয়কে বলিলাম, “কাল সকালের গাড়িতে ছেলেটিকে লইয়া আসিবেন। আমি তাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিব।”

পরদিন সকালের গাড়িতে ছেলেটিকে লইয়া তাহার বিধবা মা আসিলেন। স্টেশন হইতে গরুর গাড়িতে করিয়া তাহাকে হাসপাতালে লইয়া যাইতে হইবে। কিন্তু আমার কাছে একটি পয়সাও নাই। গরুর গাড়ির ভাড়া দিবে কে? দেখিলাম, আমাদের ফরিদপুরের জমিদারনন্দন লালমিয়া স্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতেছে। তখন তার বয়স বারো-তেরো বৎসরের বেশি হইবে না। মনটি তখন বড়ই কোমল ছিল।

এই বিধবার ছেলেটির কথা বলিতেই লালমিয়া তার পকেট ঝাড়িয়া তিন-চারটি টাকা আমাকে দিল। গাড়ি করিয়া ছেলেটিকে হাসপাতালে আনিয়া ভর্তি করিয়া দিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই ছেলেটি ভালো হইয়া দেশে চলিয়া গেল।

এইসব সেবাকার্য করিতে মাঝে মাঝে বালক-বয়সের দুষ্ট বুদ্ধিও আমাদিগকে পাইয়া বসিত। জমীন মেস্তরির দালানে আসিয়া আশ্রয় লইল একটি পরিবার। তাহাদের ছোট ছেলেটির কালাজ্বর। আমার ক্লাসের বন্ধু অতুল সেন খবর দিল, “ছেলেটিকে সেবা-শুশ্রূষা করার লোকের অভাব। বাপ-মা রাত জাগিয়া একেবারে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছে। আজ রাত্রে তুমি আসিও।

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৩)

১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

অন্যান্য সেবাকাজ

তখনকার দিনে আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল বড় হইয়া আমি সাধু-সন্ন্যাসী হইব। অবশিষ্ট জীবন পরের উপকার করিয়া কাটাইব। কবি বা সাহিত্যিক হইবার আকাঙ্ক্ষা তখনও মনে তেমন উচ্চ আশা বাঁধে নাই।

লোকের ভালো করিবার জন্য তখন মনে এমনি একটা জোর পাইতাম যে সেই কাজ করিতে যে টাকা-পয়সার প্রয়োজন তাহা চিন্তাও করিতাম না। কিন্তু টাকা-পয়সার দরকার হইলে তাহা আমি সহজেই পাইয়া যাইতাম। স্টেশন-মাস্টার উমাকান্তবাবু তো ছিলেনই, তাহা ছাড়া আর যাহার কাছে চাহিতাম সে-ই আমাকে টাকা-পয়সা দিত। এমনি একটি ঘটনার কথা আজ মনে পড়িতেছে।

খবর পাইলাম, শিবরামপুর রেলস্টেশন হইতে পাঁচ মাইল দূরে কোনো বিধবার একটিমাত্র পুত্র আমগাছ হইতে পড়িয়া হাত-পা ভাঙিয়া পড়িয়া আছে।

আমি তৎক্ষণাৎ সেই বিধবার একজন আত্মীয়কে বলিলাম, “কাল সকালের গাড়িতে ছেলেটিকে লইয়া আসিবেন। আমি তাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিব।”

পরদিন সকালের গাড়িতে ছেলেটিকে লইয়া তাহার বিধবা মা আসিলেন। স্টেশন হইতে গরুর গাড়িতে করিয়া তাহাকে হাসপাতালে লইয়া যাইতে হইবে। কিন্তু আমার কাছে একটি পয়সাও নাই। গরুর গাড়ির ভাড়া দিবে কে? দেখিলাম, আমাদের ফরিদপুরের জমিদারনন্দন লালমিয়া স্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতেছে। তখন তার বয়স বারো-তেরো বৎসরের বেশি হইবে না। মনটি তখন বড়ই কোমল ছিল।

এই বিধবার ছেলেটির কথা বলিতেই লালমিয়া তার পকেট ঝাড়িয়া তিন-চারটি টাকা আমাকে দিল। গাড়ি করিয়া ছেলেটিকে হাসপাতালে আনিয়া ভর্তি করিয়া দিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই ছেলেটি ভালো হইয়া দেশে চলিয়া গেল।

এইসব সেবাকার্য করিতে মাঝে মাঝে বালক-বয়সের দুষ্ট বুদ্ধিও আমাদিগকে পাইয়া বসিত। জমীন মেস্তরির দালানে আসিয়া আশ্রয় লইল একটি পরিবার। তাহাদের ছোট ছেলেটির কালাজ্বর। আমার ক্লাসের বন্ধু অতুল সেন খবর দিল, “ছেলেটিকে সেবা-শুশ্রূষা করার লোকের অভাব। বাপ-মা রাত জাগিয়া একেবারে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছে। আজ রাত্রে তুমি আসিও।

চলবে…..