আর্কাদি গাইদার
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
আমরা জামা বদলাবদলি করে নিলুম। দাঁও কষতে পেরে দু-জনেই খুব খুশি। তারপর এতদিনে লাল ফৌজের এক সত্যিকার সিপাইয়ের মতো পোশাক পরে কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে আমি যখন চলে আসছি, তখন শুনলুম উনি ভাস্কাকে বলছেন:
‘সুবিধে পেলেই এটারে দেশে গিন্নির কাচে পাঠিয়ে দেব। আচ্ছা, ছোঁড়া ওভারকোটটা লিয়ে করবে কী? গুলিগোলা নাগলে তো পুরো কোটটাই বরবাদ হয়ে যাবে। আচ্ছা, কোটটা পেয়ে গিন্নি ভারি খুশি হবে, তাই না?’
রাত্রে যেতে-যেতে প্রথম যে-খামারবাড়ি আমাদের পথে পড়ল সেখান থেকে ফেদিয়া পথ দেখানোর জন্যে জনাদুই গাইড সংগ্রহ করে ফেলল। পাছে আমাদের বাহিনীকে ভুল রাস্তায় চালান করে শত্রুর মুখোমুখি ফেলে দেয় এই ভয়ে একজনের জায়গায় দু-জনকে ঠিক করা হল।
গাইড দু-জন আলাদা আলাদা ভাবে চলল, আর যখন কোনো একটা চৌমাথায় এসে একজন বলল বাঁদিকে যেতে হবে আমরা তখন আলাদাভাবে আরেক জনের মত নিতে লাগলুম। যেক্ষেত্রে দু-জনে একই দিক দেখাতে লাগল একমাত্র সেখানেই আমরা দু-জনের দেখানো পথে যেতে লাগলুম।
প্রথম দিকে আমরা দু-জন দু-জন করে সারি বেঁধে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে লাগলুম আর পদে-পদে ধাক্কা খেতে লাগলুম সামনের লোকের সঙ্গে। ফেদিয়া সিভ আগেই হুকুম দিয়েছিল ঘোড়াদের খুরগুলো কাপড়ে মুড়ে নিতে।
সকাল হতে আমরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গায় চলে এলুম। ঠিক করলুম, ওইখানেই সারাদিন বিশ্রাম নেব, কারণ দিনের বেলায় ওভাবে এগোনো নিরাপদ ছিল না। রাস্তার পাশে রাসপবেরি-ঝোপের মধ্যে খবরাখবর শোনার জন্যে লোক মোতায়েন করে এলুম আমরা। দুপুরের দিকে পশ্চিমা বাতাস বইতে আরম্ভ করায় কাছাকাছি কোথা থেকে কামানের লড়াইয়ের ভারি গুমগুম শব্দ কানে এল। আমাদের পাশ দিয়ে শেবালভকে চিন্তিতভাবে যেতে দেখলুম। ও’র পাশে-পাশে হাঁটছিল ফেদিয়া, শক্ত পায়ে একটু লাফিয়ে লাফিয়ে আর কথা বলে যাচ্ছিল দ্রুতলয়ে। ও’রা দু-জন গিয়ে সুখারেভের কাছে দাঁড়ালেন।