১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • 23

সারাক্ষণ ডেস্ক

দেশের ১১৭ জন নাগরিক গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ আদিবাসী শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং কয়েকটি গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক গুরুতর অপরাধ বিশেষত কন্যা শিশুকে কাজে নিয়োগ করা এবং নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসাথে সরকারের কাছে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ, দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন  করার দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ ঢাকার মোহম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্যা ডেইলি স্টার’- এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ১৩ বছর বয়সী শিশু (সাত বছরে স্কুল ছাড়ার বিবেচনায়) প্রীতি উরাং কর্মরত ছিল। অভিযোগ রয়েছে আশফাকুল হকের স্ত্রী তানিয়া হক প্রায়ই তার বাসায় কর্মরত গৃহকর্মীদের মারধর করতেন। সর্বশেষ প্রীতিকে আট তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রীতির বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই গৃহে কাজ করার সময় সৈয়দ আশফাকুল হকের পরিবার প্রীতিকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। শিশুটি পড়ে যাবার আগে প্রাায় ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। আশ-পাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। শিশুটি পড়ে যাওয়ার পরে ওই বাড়ির কেয়ারকেটার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে আসে। পরে সে মারা যায়। লক্ষ্যণীয় হলো, প্রীতির প্রাক-স্কুলের নথি এবং ওই ফ্ল্যাটের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। এটাও লক্ষ্যণীয়, এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে একে অবহেলাজনিত মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৈয়দ আশফাকুল হকের ওই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ তারিখের ৬ আগস্ট ৭ বছরের আরো একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। তার মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার জননাঙ্গের গভীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে।  তার জননাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পড়ে যাবার আগেই সে দু’পায়ের মাঝে আঘাত পেয়েছিল। সেকারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে গেছে।

প্রীতির মৃত্যুর ১০ দিন পর ডেইলি স্টারের সম্পাদক এক বিবৃতি দিয়ে বলেন,“ প্রীতির ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করছে এবং ডেইলি স্টার সবসময় শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার নীতিতে অটল আছে।” তিনি আরো বলেন,  “এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।” তার এ বক্তব্য বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক। ডেইলি ষ্টার-এর উচিত ছিল ঘটনার পর পরই তাকে সুরক্ষা দেয়ার স্থলে অব্যাহতি দেয়া, তাহলে সম্পাদকের বক্তব্য কিছুটা হলেও অর্থবহ হতো।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের উদাসীনতা এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অবহেলায় আমরা তীব্র ক্ষোভ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।  প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি।

কোন প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না।  দেশের সকল সংবাদমাধ্যমের সম্মানিত সম্পাদকদের কাছে, এই মহান পেশার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবার ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখার আহবান জানাচ্ছি। আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ ঘটনার নিরপেক্ষ স্বাধীন ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। সেই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরছি-

ক) প্রীতি উরাংসহ পূর্বের সকল ঘটনার পুনঃতদন্ত করে

দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

খ) প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বিবেচনা না করে

এ মামলা অবিলম্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

গ) প্রীতির পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সেইসাথে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঘ) মৃতবৎ অবস্থায় যে শিশুটি বেঁচে আছে তার যথোপযুক্ত

চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ঙ) শিশুটির শরীরের বিশেষ ক্ষতটি পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে হবে।

চ) সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ৩ জন শিশু গৃহসহকারী ছিল।

তারা ৭, ৮ এবং ১১ বছর বয়সে কাজে যোগ দেয়। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ব্যক্তি শিশু।

শ্রম আইনের ৩৪ ধারা অনুয়ায়ী, কোন শিশুকে কোন

পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। সৈয়দ আশফাকুল হক কিংবা তার পরিবারের কোন সদস্য

শিশু যৌন নিপীড়ক কিনা সে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

ছ) যে দারোয়ানরা প্রীতিকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে দেয়নি,

তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জ) ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নির্বাহী সম্পাদক

সৈয়দ আশফাকুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অপরাধ বিশেষত কন্যা শিশুকে কাজে নিয়োগ করা এবং নির্যাতন করার অভিযোগে তাকে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-

১.            সুলতানা কামাল,

মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা

২.           খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি

৩.          ড. হামিদা হোসাইন, মানবাধিকার কর্মী

৪.           ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা,

নির্বাহী পরিচালক, রিব ও প্রাক্তন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৫.           আনু মুহাম্মদ, প্রাক্তন অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৬.          ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

৭.           রাণী য়েন্ য়েন, চাকমা রানী, রাঙামাটি

৮.          অ্যাড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

৯.           অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত,

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

১০.         ফারহা তানজীম তিতিল,

সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

১১.         প্রিসিলা রাজ, লেখক-গবেষক

১২.         সামিনা লুৎফা নিত্রা, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৩.        বীনা ডি’ কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

১৪.         অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস,

গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৫.      সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

১৬.        কাজল দেবনাথ, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ

১৭.         শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক,

এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)

১৮.        পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন

১৯.         পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২০.        গীতি আরা নাসরিন,

অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২১.         অ্যাড. তবারক হোসেইন,

সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২২.        অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২৩.       রেহনুমা আহমেদ, লেখক।

২৪.        শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী।

২৫.        মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

২৬.       ফিরোজ আহমেদ, রাজনীতিবিদ

২৭.        অমল আকাশ, শিল্পী ও সংগঠক

২৮.       মনিন্দ্র কুমার নাথ,

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

২৯.        সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩০.       মির্জা তাসলিমা সুলতানা,

অধ্যাপক, নৃৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৩১.        সাঈদ ফেরদৌস,

অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৩২.     সাঈদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক

৩৩.      ড. সীমা জামান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩৪.       জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ

৩৫.       জোবাইদা নাসরীন কণা,

অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩৬.       নুর খান, মানবাধিকারকর্মী

৩৭.        অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন

প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি

০৭:০০:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

সারাক্ষণ ডেস্ক

দেশের ১১৭ জন নাগরিক গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ আদিবাসী শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং কয়েকটি গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক গুরুতর অপরাধ বিশেষত কন্যা শিশুকে কাজে নিয়োগ করা এবং নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসাথে সরকারের কাছে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ, দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন  করার দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ ঢাকার মোহম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্যা ডেইলি স্টার’- এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ১৩ বছর বয়সী শিশু (সাত বছরে স্কুল ছাড়ার বিবেচনায়) প্রীতি উরাং কর্মরত ছিল। অভিযোগ রয়েছে আশফাকুল হকের স্ত্রী তানিয়া হক প্রায়ই তার বাসায় কর্মরত গৃহকর্মীদের মারধর করতেন। সর্বশেষ প্রীতিকে আট তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রীতির বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই গৃহে কাজ করার সময় সৈয়দ আশফাকুল হকের পরিবার প্রীতিকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। শিশুটি পড়ে যাবার আগে প্রাায় ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। আশ-পাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। শিশুটি পড়ে যাওয়ার পরে ওই বাড়ির কেয়ারকেটার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে আসে। পরে সে মারা যায়। লক্ষ্যণীয় হলো, প্রীতির প্রাক-স্কুলের নথি এবং ওই ফ্ল্যাটের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। এটাও লক্ষ্যণীয়, এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে একে অবহেলাজনিত মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৈয়দ আশফাকুল হকের ওই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ তারিখের ৬ আগস্ট ৭ বছরের আরো একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। তার মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার জননাঙ্গের গভীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে।  তার জননাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পড়ে যাবার আগেই সে দু’পায়ের মাঝে আঘাত পেয়েছিল। সেকারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে গেছে।

প্রীতির মৃত্যুর ১০ দিন পর ডেইলি স্টারের সম্পাদক এক বিবৃতি দিয়ে বলেন,“ প্রীতির ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করছে এবং ডেইলি স্টার সবসময় শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার নীতিতে অটল আছে।” তিনি আরো বলেন,  “এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।” তার এ বক্তব্য বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক। ডেইলি ষ্টার-এর উচিত ছিল ঘটনার পর পরই তাকে সুরক্ষা দেয়ার স্থলে অব্যাহতি দেয়া, তাহলে সম্পাদকের বক্তব্য কিছুটা হলেও অর্থবহ হতো।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের উদাসীনতা এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অবহেলায় আমরা তীব্র ক্ষোভ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।  প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি।

কোন প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না।  দেশের সকল সংবাদমাধ্যমের সম্মানিত সম্পাদকদের কাছে, এই মহান পেশার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবার ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখার আহবান জানাচ্ছি। আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ ঘটনার নিরপেক্ষ স্বাধীন ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। সেই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরছি-

ক) প্রীতি উরাংসহ পূর্বের সকল ঘটনার পুনঃতদন্ত করে

দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

খ) প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বিবেচনা না করে

এ মামলা অবিলম্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

গ) প্রীতির পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সেইসাথে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঘ) মৃতবৎ অবস্থায় যে শিশুটি বেঁচে আছে তার যথোপযুক্ত

চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ঙ) শিশুটির শরীরের বিশেষ ক্ষতটি পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে হবে।

চ) সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ৩ জন শিশু গৃহসহকারী ছিল।

তারা ৭, ৮ এবং ১১ বছর বয়সে কাজে যোগ দেয়। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ব্যক্তি শিশু।

শ্রম আইনের ৩৪ ধারা অনুয়ায়ী, কোন শিশুকে কোন

পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। সৈয়দ আশফাকুল হক কিংবা তার পরিবারের কোন সদস্য

শিশু যৌন নিপীড়ক কিনা সে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

ছ) যে দারোয়ানরা প্রীতিকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে দেয়নি,

তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জ) ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নির্বাহী সম্পাদক

সৈয়দ আশফাকুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অপরাধ বিশেষত কন্যা শিশুকে কাজে নিয়োগ করা এবং নির্যাতন করার অভিযোগে তাকে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-

১.            সুলতানা কামাল,

মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা

২.           খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি

৩.          ড. হামিদা হোসাইন, মানবাধিকার কর্মী

৪.           ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা,

নির্বাহী পরিচালক, রিব ও প্রাক্তন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৫.           আনু মুহাম্মদ, প্রাক্তন অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৬.          ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

৭.           রাণী য়েন্ য়েন, চাকমা রানী, রাঙামাটি

৮.          অ্যাড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

৯.           অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত,

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

১০.         ফারহা তানজীম তিতিল,

সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

১১.         প্রিসিলা রাজ, লেখক-গবেষক

১২.         সামিনা লুৎফা নিত্রা, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৩.        বীনা ডি’ কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

১৪.         অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস,

গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৫.      সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

১৬.        কাজল দেবনাথ, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ

১৭.         শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক,

এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)

১৮.        পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন

১৯.         পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২০.        গীতি আরা নাসরিন,

অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২১.         অ্যাড. তবারক হোসেইন,

সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২২.        অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

২৩.       রেহনুমা আহমেদ, লেখক।

২৪.        শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী।

২৫.        মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

২৬.       ফিরোজ আহমেদ, রাজনীতিবিদ

২৭.        অমল আকাশ, শিল্পী ও সংগঠক

২৮.       মনিন্দ্র কুমার নাথ,

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

২৯.        সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩০.       মির্জা তাসলিমা সুলতানা,

অধ্যাপক, নৃৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৩১.        সাঈদ ফেরদৌস,

অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৩২.     সাঈদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক

৩৩.      ড. সীমা জামান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩৪.       জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ

৩৫.       জোবাইদা নাসরীন কণা,

অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩৬.       নুর খান, মানবাধিকারকর্মী

৩৭.        অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন